জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকারের উচিত ক্ষমা চাওয়া: লন্ডন মেয়র
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ১৯১৯ সালে পাজাবে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের কাছে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডনের পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মেয়র সাদিক খান।
বর্তমানে ভারত সফররত লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বুধবার সকালে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে জালিয়ানওয়ালাবাগ স্মৃতিসৌধ দর্শনে গিয়েছিলেন।
সেখানকার ভিজিটার্স বুকে মি. খান লিখেছেন, “জালিয়ানওয়ালাবাগ দেখে মন বিষণ্ণ হয়ে গেল। ১৯১৯ সালের বৈশাখী উৎসবের ঠিক আগে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা যেন আমরা কখনও ভুলে না যাই। ব্রিটিশ সরকারের উচিত ওই ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা।”
সাদিক খান ব্রিটেনে যে দলের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা, সেই লেবার পার্টি বহুবার ক্ষমতায় এলেও, কোনো লেবার সরকারই ঐ হত্যাকান্ডের জন্য ক্ষমা চায়নি।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সবথেকে নৃশংস ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম।
চারদিকে উঁচু বাড়ি দিয়ে ঘেরা একটি চত্বরে একটি সভার জন্য জড়ো হওয়া প্রায় হাজার বিশেক নারী-পুরুষ ও শিশুর ওপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী।
সরকারী হিসাবেই নিহত হয়েছিলেন ৩৭৯ জন, আহতের সংখ্যা ১৫০০-রও বেশী। ভারতীয় অনেক ঐতিহাসিকদের মতে মৃতের সংখ্যা হাজারেরও বেশী।
ওই চত্বরটি থেকে বেরনোর মাত্র দুটি সরু রাস্তা ছিল। একটি আটকিয়ে রেখেছিল ব্রিটিশ বাহিনী, অন্য গলির মুখে ছিল তালাবন্ধ লোহার দরজা। বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পাশের একটি কুয়োতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
সেনাবাহিনী বলেছিল ওই জমায়েত বেআইনি, তাই গুলি চালিয়ে অন্যায় কিছু করেননি সে সময়কার ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ডায়ার।
ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরেই ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইটহুড উপাধি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এখনও ক্ষমা চায়নি ব্রিটেন
এর আগেও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গটি উঠেছে।
১৯৯৭ সালে ভারত সফরের সময়ে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথও জালিয়ানওয়ালাবাগে গিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চান নি।
স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের ঠিক আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “আমাদের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি দুরূহ সময়ে পেরতে হয়েছে, জালিয়ানওয়ালাবাগ তার মধ্যে একটি। কিন্তু আমরা যতই চাই না কেন, ইতিহাস বদলে ফেলা যায় না। বিষণ্ণতায় ভরা ঘটনাগুলি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।”
তবে ওই একই সফরে প্রিন্স ফিলিপের একটি বিরূপ মন্তব্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। স্মৃতিসৌধতে উল্লেখিত নিহতের সংখ্যা দেখে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে সংখ্যাটি অত্যধিক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
বছর চারেক আগে ভারত সফরে এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন নি।
তবে মন্তব্য করেছিলেন – ওই ঘটনা ছিল ব্রিটিশ ইতিহাসের একটি অত্যন্ত কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়। জালিয়ানওয়ালাবাগে কী হয়েছিল, সেটা যেমন কারও ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তেমনই ব্রিটেন যেন সবসময়ে শান্তিপূর্ণ পথে প্রতিবাদের স্বপক্ষেই দাঁড়ায়।
ঐ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ একটি তদন্ত কমিশন অবশ্য জেনারেল ডায়ার, যিনি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন- তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বাহিনী থেকে সরিয়ে দেয়।