টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা আট দল কারা?
আরও একটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালো। রোববার বাংলাদেশ সময় ভোরে উত্তর আমেরিকার দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে হয়ে গেল ‘রেকর্ড ভাঙা-গড়ার’ এক ম্যাচ। শেষ দিকের দাপুটে ব্যাটিংয়ে কানাডার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিলো স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি নানা কারণেই বিশেষ, একে তো আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে হচ্ছে টুর্নামেন্ট। তারওপর ১৬টি দল মুখোমুখি হবে প্রায় ১ মাস ব্যাপী এই আসরে।
দলগুলোর মধ্যে মহাদেশীয় বৈচিত্র্যও স্পষ্ট। ক্রিকেট খেলাটির আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা একটা প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়, বিশ্বকাপ বলা হলেও খেলাটা ঠিক বৈশ্বিক হতে পেরেছে কি?
এবারের আসরটিতে যেন সেই চেষ্টাই স্পষ্ট, পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডা থেকে ওশেনিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউ গিনি খেলছে এবারের আসর।
এর মাঝেই চারটি গ্রুপ থেকে সেরা ২টি করে দল মোট আটটি দল পরের রাউন্ডে যাবে।
এই সেরা আট দল কারা হতে পারে?
গ্রুপ এ: ভারত পাকিস্তানের গ্রুপ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের একদম প্রথম বিশ্বকাপেই বাজিমাত করেছিল ভারত ও পাকিস্তান। সেবারের দুবার মুখোমুখি দেখাই দুটো ম্যাচই দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে বললে ‘ব্লকবাস্টার’।
প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, দ্বিতীয়বারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান।
পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা বাড়তি প্রণোদনা দেয়, ৮ বার বিশ্বকাপ খেলে ৩ বার ফাইনালে উঠেছে দলটি।
অন্যদিকে ভারত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত লিগের আয়োজক। তাই এই ফরম্যাট নিয়ে বাড়তি উন্মাদনা থাকে গোটা ভারতজুড়ে।
এবার ভারত ও পাকিস্তান তাদের গ্রুপে পেয়েছে ইউএসএ, কানাডা, আয়ারল্যান্ডকে।
খুব আহামরি অঘটন না ঘটলে এই গ্রুপ থেকে ভারত ও পাকিস্তানের পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে দুই দলই আসলে একটা সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে, আইপিএলের নানা বিতর্ক ভারত বয়ে এনেছে জাতীয় দলে, এর মাঝে হার্দিক পান্ডিয়ার ফর্ম হারানো, আইপিএলে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা এবং নতুন কোচ নিয়োগের গুঞ্জন, সব মিলিয়েই ভারতের পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয় আপাতত।
তার ওপর গত দুই আসরেই ভারতের বিদায় হয়েছে বেশ শোচনীয়ভাবে।
তবুও দলটির নাম ভারত এবং এই দল শক্তিমত্তা বিচারে সবসময়ই ফেভারিটের কাতারেই থাকবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলে অধিনায়কত্ব নিয়ে নানা নাটকীয়তার পরে বাবর আজমের কাঁধেই ফিরেছে নেতৃত্বের দায়িত্ব।
পাকিস্তান মাত্রই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজে বেশ বাজেভাবে হেরে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে।
ব্যাটিং লাইনআপ এখনও গুছিয়ে নিতে পারেনি দলটি, বোলারদের মনে হচ্ছে ছন্নছাড়া।
মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমকে অবসর থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে জাতীয় দলে।
তবে দলটা যেহেতু পাকিস্তান তাই ফর্ম বা অফ-ফর্ম এখানে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না, বেশ শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভালো করার অতীত ইতিহাস আছে দলটির।
ভারত-পাকিস্তানের জন্য এটাই স্বস্তির ব্যাপার যে গ্রুপের বাকি তিন দল শক্তিমত্তার দিক থেকে বেশ পিছিয়ে আছে।
আবার আয়ারল্যান্ড বাদ দিলে আমেরিকা ও কানাডার জাতীয় দলে সাবেক ভারতীয় ও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের দেখাও মিলবে।
গ্রুপ বি: অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের গ্রুপ
গ্রুপ এ’ এর মতো গ্রুপ-বিতেও সমীকরণ খুবই সহজ মনে হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে। গ্রুপের দুই দল শেষ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড, বাকি ৩ দল ওমান, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ড।
এই গ্রুপেও আইপিএলের আমেজ থাকবে, এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সফলতম দুই ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবেন- ট্রাভিস হেড ও মিচেল স্টার্ক।
হেড আছেন দুর্দান্ত ফর্মে, ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পারফর্মার এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাও রাঙাতে চাইবেন।
ব্যাটিং বোলিং মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের সমন্বয় বেশ ভালো, স্পিনার হিসেবে আছেন অ্যাস্টন অ্যাগার ও অ্যাডাম জ্যাম্পা।
অধিনায়ক মিচেল মার্শ, ক্যামেরন গ্রিন আছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে, আর পেস অ্যাটাক সামলাবেন প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড।
অস্ট্রেলিয়ার এই দলটি ক্রিকেটের ট্রেবল পূর্ণ করেছে গত বছর- টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র দল অস্ট্রেলিয়া।
একই গ্রুপে আছে বর্তমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিচারে পরিপূর্ণ একটা দল ইংল্যান্ড।
বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপ, যথাযথ অলরাউন্ডার এবং গতিময় ফাস্ট বোলিং লাইনআপ দলটির।
ইংল্যান্ডের অন্যতম শক্তির জায়গা তাদের অধিনায়ক জশ বাটলার। বাটলার সময়ের সেরা টি২০ ব্যাটারদের একজন, সব ধরনের বোলারের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩০ এর বেশি গড় এবং ১৩০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেন তিনি।
বাটলারের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৪৫।
অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন মইন আলী, স্যাম কুরান। উইল জ্যাক্স ও লিয়াম লিভিংস্টোনও ব্যাটিং এর পাশাপাশি বোলিংয়ে অবদান রাখতে পারেন।
গ্রুপ সি: সেরা দুই দল নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার নিউজিল্যান্ড এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপারপাওয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেই গ্রুপে আছে সেই গ্রুপের সেরা দুই দল নিয়ে খুব বেশি সন্দেহ থাকার কথা না কিন্তু এই গ্রুপে আফগানিস্তানও আছে, যারা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দক্ষ এমন বেশ কজন ক্রিকেটার নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে যাচ্ছে।
বছরজুড়েই বিশ্বের নানা দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের চাহিদা থাকে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে থাকবে অভিজ্ঞতার কারণে।
আফগানিস্তান যে সম্ভাবনাময় ক্রিকেট খেলে সেটার প্রতিফলন বিশ্বকাপে খুব কমই দেখাতে পেরেছে দলটি।
তবে গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন রশিদ খানরা।
আফগানিস্তান যদি খুব চমকপ্রদ কিছু না করে এই গ্রুপে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেরা আটে জায়গা করে নেবে।
নিউজিল্যান্ড কেইন উইলিয়ামসনের অধীনে এবারের বিশ্বকাপে মাঠে নামবে।
ব্যাটিং ও বোলিং মিলিয়ে মোট ৭ জন অলরাউন্ডার নিয়ে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড।
২০২১ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা এই দলটির বড় শক্তির জায়গা হতে যাচ্ছেন মিচেল স্যান্টনার। আমেরিকার এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেতে যাচ্ছেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
স্যান্টনার ক্যারিবিয়ান কন্ডিশনে ১৭ গড় এবং ৫.৫ ইকোনমি রেটে বল করেছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দুই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি আছেন এই দলে।
এদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু।
রভমান পাওয়েলের নেতৃত্বে এই দলটি তৃতীবারের মতো শিরোপা হাতে নেয়ার মিশনে মাঠে নামবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলে বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে নিকোলাস পুরানের ব্যাটে ও আকিল হোসেনের বোলিংয়ের দিকে।
২০১২ ও ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
গ্রুপ ডি: দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা ফেভারিট
গ্রুপ ডি- এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে মজার গ্রুপ, অনেকে একে গ্রুপ অফ ডেথও বলছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের যে সাম্প্রতিক ফর্ম তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকা শ্রীলঙ্কার মতো দলকে বাংলাদেশ কতটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে সেটি নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবারের টুর্নামেন্ট ফেভারিট দলগুলোর একটি, অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম এই বিশ্বকাপের অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে ধাঁচ সেখানে সবচেয়ে ভয়ানক মনে করা হচ্ছে হেইনরিখ ক্লাসেনকে।
ডেভিড মিলার, ট্রিস্টান স্টাবসরাও আছেন লাইনআপে।
দলটির দুর্বলতার জায়গাও আছে, অলরাউন্ডার মাত্র একজন, মার্কো ইয়ানসেন। ফাস্ট বোলার আনরিখ নরকিয়া অনেক খরুচে হয়ে যাচ্ছেন সম্প্রতি।
এছাড়া প্রভাব ফেলতে পারেন স্পিনার কেশাভ মহারাজ।
শ্রীলঙ্কার দলের বড় শক্তি হতে পারে তাদের বোলিং বৈচিত্র্য, মাথিসা পাথিরানার মতো ভিন্ন আঙ্গিকে বল করা পেসার, হাসারাঙ্গার মতো লেগস্পিনার আছেন দলে, আরও আছেন মাহেশ থিকসানা। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং শক্তিতে খানিকটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে তবে বোলিং বিভাগ সেটি পুষিয়ে দিতে সক্ষম।
এই গ্রুপে আছে নেদারল্যান্ডস যারা পর পর দুই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে, এছাড়া আছে নেপাল।