টোয়েক কেলেঙ্কারিঃ শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল ঘটনায় তদন্তের ঘোষণা
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ তুলে হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ২০১৪ সালে নেওয়া সরকারের ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ভোগান্তি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী বিদেশিরা। ঢালাও ওই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে এবার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির আর্থিক খাত নজরদারিতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অডিট অফিস (এনএও)।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এনএও বলেছে, উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ফলে অভিবাসন বিভাগের সিদ্ধান্তগুলো সংসদ ও জনমনে নতুন করে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্যে বসতি গড়া লোকদের অন্যায়ভাবে অবৈধ হিসেবে গণ্য করে বিতাড়ন করাকে বলা হচ্ছে উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি।
যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে বা ভিসা পরিবর্তন করতে ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। ২০১৪ সালে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে ‘টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন’ (টোয়েক) পরীক্ষার কয়েকটি কেন্দ্রে জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিয়ে দিচ্ছে। এমন জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর সরকার ওই পরীক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস’কে (ইটিএস) বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানায়। সংস্থাটি ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার পরীক্ষার্থীর তথ্য যাচাই করে। অন্তত ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানায়। এরপর থেকে ভিসা বাড়াতে টোয়েক সনদ ব্যবহার করেছেন, এমন সবার ভিসা বাতিল করতে শুরু করে ব্রিটিশ অভিবাসন বিভাগ।
সেই সময়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন থেরেসা মে, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে অভিবান নিয়ন্ত্রণে থেরেসা মের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণেই উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির মতো বড় ধরনের অন্যায় ঘটে যায়।
অভিবাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। বিতাড়ন করা হয়েছে ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে। আর পরীক্ষায় জালিয়াতির সুযোগ করে দেওয়ার কারণে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
কিন্তু শত শত বিদেশি শিক্ষার্থী সরকারের ওই ঢালাও সিদ্ধান্তের বলি হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফাতেমা চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, ২০১০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে আসেন। ২০১৪ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তাঁর ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দেশ ছেড়ে যেতে বলা হয়নি। কিন্তু তাঁর চাকরি করার অনুমতি নেই। সর্বজনীন বিনা মূল্যের চিকিৎসা সুবিধা থেকেও তিনি বঞ্চিত। যে কারণে গত বছর কেবল সন্তান জন্মদানের জন্য তাঁকে ১৪ হাজার পাউন্ড (প্রায় ১৫ লাখ টাকা) হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশি আরেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদ রহমান বিবিসিকে বলেন, তিনি ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের আরেকটি পরীক্ষায় পাস করে সেই সনদ জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও অভিবাসন বিভাগ সন্তুষ্ট নয়। ২৯ বছর বয়সী ওয়াহিদ ২০১৪ সালে অ্যঙ্গলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘মার্কেটিং অ্যান্ড ইনোভেশন’ বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়। ওয়াহিদ রহমান বলেন, তাঁর সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, কাজ করতে পারছেন না, চিকিৎসা নিতে পারছেন না, এ যেন এক মুক্ত কারাগার।
এসব শিক্ষার্থী জালিয়াতির অভিযোগ কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। এ অভিযোগ থেকে নিজেদের নাম মুক্ত করতে চান। দেশটির লেবার দলীয় রাজনীতিক স্টিফেন টিমস বলেন, ঢালাও ভিসা বাতিলের কারণে অনেক শিক্ষার্থী অন্যায়ের শিকার হয়েছেন।
ন্যাশনাল অডিট অফিস জানিয়েছে, কতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এবং অভিবাসন বিভাগ কতজনের ভিসা বাতিল করেছে, এসব বিষয় তদন্ত করে দেখবে তারা।