ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এবার দুদকের মামলা- তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
ডেস্ক রিপোর্টঃ গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক। দুদকের আইনজীবি খুরশীদ আলম খান বিবিসি বাংলাকে এখবর নিশ্চিত করেছেন।
মি. খান জানান, দুদক যে মামলা করেছে সেখানে মি. ইউনূসসহ আসামী মোট ১৩ জন। দুদক আসামীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং এর অভিযোগের সত্যতা’ পাওয়ায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
আসামীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি ‘আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং’ এর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে।
এর আগে মানিলন্ডারিং-এর বিষয়ে দুদকের কাছে অভিযোগ করা হলে দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করে।
মামলাটিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরনের জন্য শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাথে একটি সেটেলমেন্ট চুক্তি হয় ২০২২ সালের ২৭শে এপ্রিল। এরপর ৯ই মে গ্রামীন টেলিকমের বোর্ড সভায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক হিসাব খোলার আগেই সেটেলমেন্ট চুক্তিতে সেটিকে দেখানো হয়েছে।
এজন্য সেটেলমেন্ট চুক্তিটিকে ‘ভূয়া’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে মামলার নথিতে। এই মামলায় আরো অভিযোগ তোলা হয়, শ্রমিকদের লভ্যাংশ বিতরণের আগে তাদের না জানিয়ে তাদের পাওনা টাকা বেশ কয়েকজন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এমন কাজ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
শ্রম আদালতের মামলা
গত ৮ই মে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। ওই মামলাটি অভিযোগ গঠন পর্যায়ে থাকার কারণে সেটি বাতিল করা যাবে না বলে আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছিলেন। ফলে এই মামলাটি চলছে এবং এর পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৫-৬ জুন।
২০২১ সালের ০৯ই সেপ্টেম্বরে শ্রম আইন লংঘনের অভিযোগ তুলে ঢাকার শ্রম আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের একজন শ্রম পরিদর্শক বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এই মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া, বেশ কয়েক জন শ্রমিকের চাকুরী স্থায়ী না করা এবং গণছুটি না দেয়া। তবে কতজন শ্রমিক এর সাথে জড়িত তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়েরের পর গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর একটি অভিযোগ দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশনে।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করতে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করেছিল দুদক।
সেসময় দুদক জানিয়েছিল যে, গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা হলো, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ লোপাট করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের সময় অবৈধভাবে আইনজীবীর ফিসহ অন্যান্য ফিয়ের নামে ছয় শতাংশ অর্থ কেটে নেয়া, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা।
এর আগে ২০১৭ সালে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ জন কর্মচারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ১১০টি মামলা দায়ের করেছিল। এরমধ্যে শ্রম আদালতে ১০৪টি এবং হাইকোর্টে ০৬টি।
সব মিলিয়ে মোট ৪৩৭ কোটি টাকা দাবি করে মামলা করেছিলেন ওই শ্রমিকরা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে মামলা চলার পর ২০২২ সালের মে মাসে আদালতের বাইরে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে ১১০টি মামলার সবকটি প্রত্যাহার করা হয়।