ঢাকায় সংঘর্ষ ও মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার নিয়ে বিদেশি সংবাদ মাধ্যম যা বলেছে
ডেস্ক রিপোর্টঃআগামী বছর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে মহাসমাবেশ চলাকালে শনিবার প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এদিন সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন যুবদল নেতা নিহত হন। এর একদিন পরই রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়েছে। এসব নিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। অনলাইন নিউজ ১৮ লিখেছে, রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজের বাসভবন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, শনিবার সংঘর্ষে বিরোধী দলীয় সমর্থকসহ বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বিএনপির মুখপাত্র জহিরুদ্দিন স্বপন বলেছেন, শনিবার মহাসমাবেশে সমবেত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১০ লাখ নেতাকর্মী। ওদিকে সংঘর্ষের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ রোববার দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করেছেন। তার অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ভণ্ডুল করে দিয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এর আগে ক্ষমতাসীন দল সতর্ক করেছে এই বলে যে, যেকোনো রকম সহিংসতার চেষ্টা করা হলে তা শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে। বিরোধীরা বলছে, নির্বাচন কমিশন যখন দেশের ১২তম জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়েছে তারা।এতে আরও বলা হয়, কয়েক দশক ধরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব। কয়েক মাস ধরে বিরোধীরা যখন সরকার বিরোধী বিশাল বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রয়েছে চাপে। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার দল চাপ সৃষ্টি করে যাবে। সম্প্রতি তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, এই সরকারকে আমরা বিশ্বাস করি না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদেরকে প্রথমে বিদায় নিতেই হবে। অন্যথায় তারা নির্বাচনে কারচুপি করবে।
অনলাইন ফ্রান্স ২৪ লিখেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশের বিরোধীদের মহাসমাবেশ সহিংস হয়ে উঠেছে। শনিবার এই সহিংসতায় একজন পুলিশের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বানে মহাসমাবেশ আয়োজন করে। এতে কয়েক লাখ নেতাকর্মী রাজধানী ঢাকায় সমবেত হয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তাতে সংঘর্ষ সৃষ্টি হলে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এদিন কয়েক ডজন গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। সরকারি ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলেছেন, এতে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। পুলিশের সূত্র বলেছে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪১ পুলিশ সদস্য। মহাসমাবেশে যোগ দিতে কয়েকদিনে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজধানী ঢাকায় আসেন। এ কারণে শহরে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিরোধী দলীয় শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই দলটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পদত্যাগ দাবি করছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এ পর্যন্ত সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্বপরায়ণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মুক্ত মত প্রকাশের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমিয়ে রাখার অভিযোগ আছে। সমালোচকদের জেলে ঢুকানোর অভিযোগ আছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বর্তমান সরকার বেশ চাপে আছে। মে মাসে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানিয়ে দেয়, যারাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধেই এই নীতি প্রয়োগ করা হবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সরকারের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ চালানোর অভিযোগ আছে। তবে শেখ হাসিনার সরকার এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শনিবার ঢাকায় পুলিশের সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। ওই একই দিন পাশাপাশি শান্তি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ আহ্বান করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মতে, কাকরাইলে একটি পুলিশ বুথে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ক্ষতি করা হয় বেশ কিছু যানবাহনের। এ সময় কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুনর রশীদ বলেছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের ওপর হামলা করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন হামলায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে আজ রোববার দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করেছে প্রধান বিরোধী দল। তাদের পরিকল্পিত র্যালি ভণ্ডুল ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অ্যাকশনের প্রতিবাদে বেশ কয়েক বছর পর প্রথম এই হরতাল।