ঢাকার গোলাপবাগে জড়ো হচ্ছে বিএনপি সমর্থকরা, মির্জা আলমগীর ও আব্বাস কারাগারে
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে অনেক নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত পুরনো ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকার গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর বিকেল থেকেই দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন।
গতরাতে আটক হওয়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকার সমাবেশের দায়িত্বে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসসহ আটক নেতাকর্মীদের আদালতে জামিন না হওয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মিস্টার আলমগীরের শনিবারের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার কথা ছিলো।
তবে আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করে বিএনপির নেতারা বলেছেন গোলাপবাগের মাঠ থেকেই তারা ১০ দফার ‘চার্টার্ড অফ ডিমান্ড’ ঘোষণা করবেন, যার লক্ষ্য হবে বর্তমান সরকারের ‘পতন ঘটানো’।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশজুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিলো বিএনপি।
কিন্তু সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে দলটির সাথে পুলিশ কর্তৃপক্ষের সমঝোতা আগে হয়নি।
এর মধ্যে দলটি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে-এমন ঘোষণা দিলে কয়েকদিন ধরে সেখানে দলীয় কার্যালয়ে নেতা কর্মীদের ভিড় বাড়ছিলো।
এ অবস্থায় বুধবার নয়াপল্টন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ বিএনপি সমর্থকদের সরাতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং প্রায় দুঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে এক জন মারা যায়, আর আহত হয় অনেকে।
এরপরই বিএনপি কার্যালয় ও সংলগ্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশ করা যাবে না বলে বিএনপিকে জানিয়ে দেয় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিনভর বিএনপির কাউকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশে দাঁড়াতেও দেয়নি পুলিশ। সন্ধ্যার পর বিএনপির সঙ্গে ভেন্যু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনায় বিএনপির দিক থেকে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও পুলিশের দিক থেকে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠের কথা বলা হয়।
রাতেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলেও মধ্যরাতে পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসকে আটক করে এবং পরে সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার দেখায়।
শুক্রবার বিকেলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন ও গোলাপবাগ মাঠ
দুপুরে গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কার্যালয়ে যায়।
এর আগে সকালে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন যে বিএনপিকে বাংলা কলেজ মাঠেই সভা করতে হবে।
কিন্তু পরে বিএনপির ওই প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনার পর মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় পুলিশ।
পুলিশের দিক থেকে গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার পর বেলা তিনটার দিকে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র নেতা খন্দকার
মোশাররফ হোসেন বলেন যে ওই মাঠেই তারা কাল সকাল এগারটা থেকে সমাবেশ শুরু করবেন।
“আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ আমরা সকাল এগারটা থেকে শুরু করবো। আমরা নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং ভবিষ্যতে অন্য যেসব দল আমাদের সাথে থাকবে তাদের শান্তিপূর্ণ ভাবে উপস্থিত হবার আহবান জানাই,” বলছিলেন মিস্টার হোসেন।
বিএনপির এ মূহুর্তের শীর্ষ এই নেতা বলেন ‘সরকারের পতন ঘটাতে’ সমাবেশ থেকে কাল তারা তাদের চার্টার অফ ডিমান্ড ঘোষণা করবেন।
“এই সমাবেশ থেকে এই সরকারের বিদায়ের জন্য আমরা চার্টার্ড অব ডিমান্ড ঘোষণা করবো। আশা করি দশ দফার এই চার্টার অফ ডিমান্ড যুগপৎভাবে অন্যরাও ঘোষণা করবেন।”
তবে ওই দাবিনামায় কী থাকবে সে সম্পর্কে তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মীর্জা আব্বাসসহ আটক সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
তারা বলেছেন পরিস্থিতি যাই হোক না কেন শনিবারের সমাবেশ থেকে তারা কোনোভাবেই পিছিয়ে যাবেন না।
ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন শনিবার তার দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবে যদিও তিনি মনে করেন তার আগেই নয়াপল্টন থেকে সরে আসার মধ্য দিয়ে বিএনপির পরাজয় হয়েছে।
“পল্টন ময়দানে সমাবেশ আমরা করবো- একথা যারা বলেছেন তারা এখন গোলাপবাগে। তাদের পরাজয় হয়ে গেছে। পল্টনে সমাবেশ তারা করতে পারেনি।”
মিস্টার কাদের তার ভাষণে রাজনৈতিক ইস্যুতে বিদেশী কূটনীতিকদের কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
এর আগে বুধবারের সংঘর্ষের পর বিবৃতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এছাড়াও সম্প্রতি আরও কিছু বিদেশী কূটনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন যার সমালোচনাও এসেছিলো আওয়ামী লীগ থেকে।