ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে শনিবার অবস্থান নেবে বিএনপি, মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচী

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ বিরোধী দল বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামীকাল শনিবার ঢাকার সব প্রবেশপথে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

নয়াপল্টনে দলটির মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ঘোষণা অনুযায়ী বেলা এগারটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

“ঢাকা মহানগরের সব প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি পালিত হবে। আমরা আশা করি প্রশাসন এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দিয়ে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন,” সমাবেশে দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মূহুর্মূহু শ্লোগানের মধ্যেই বলছিলেন মি. আলমগীর।

এর আগে তিনি অভিযোগ করেন যে প্রশাসন সহ সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সরকার আসন্ন নির্বাচনে ‘হেনতেন প্রকারে প্রতারণা করে’ আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু জনগণ সেটা মেনে নিবে না।

“আমরাও আজ আর একা নই। আন্তর্জাতিক বিশ্বও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। ভালো চাইলে পদত্যাগ করুন,” সরকারের উদ্দেশ্যে বলছিলেন তিনি।

নয়াপল্টনের এ সমাবেশে মি. আলমগীরের বক্তব্যের মাঝেই দলটির লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি অডিও ভাষণ প্রচার করা হয়।

বিএনপির কোনো সমাবেশে মি. রহমানের এ ধরনের বক্তব্য প্রচার এই প্রথম।

বিএনপির সমাবেশ
সারাদেশ থেকে অনেক কর্মী সমর্থক এসেছে বিএনপির সমাবেশে।

বিএনপির সমাবেশে যখন মি. রহমানের অডিও ভাষণ প্রচার করা হচ্ছিলো তখন অনতিদূরে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের ডাকা সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সমাবেশেও আওয়ামী লীগের বিপুল পরিমাণ নেতা, কর্মী ও সমর্থক অংশ নিয়েছে।

বিএনপি ও তাদের সমমনা দল ও জোটগুলো শুক্রবার তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে যুগপৎভাবে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির সমাবেশের ভেন্যু হিসেবে শুক্রবার পুলিশের অনুমতির পর মূলত গতকাল সন্ধ্যার থেকে দলটির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন ও আশে পাশের এলাকায় সমবেত হতে থাকে।

আজ শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে মিছিল আসতে থাকে এবং দুপুরের আগেই নয়াপল্টন এলাকায় পূর্ণ হয়ে যায় দলটির কর্মী ও সমর্থকে।

মিছিলকারীদের অনেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে শ্লোগান দেন এবং তাদের প্রতিকৃতি বহন করেন। অনেকের হাতে দেখা গেছে রং বেরংয়ের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ নিয়েও সমাবেশে যোগ দিয়েছেন কেউ কেউ।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দিতে গিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তাদের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

তিনি বলেন সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে এবং বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনকে দলীয় করণ করেছে। এর ফলে

মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এবং দ্রব্যমূল্য এমন পর্যায়ে গেছে যে মানুষ জীবন চালাতে পারছে না।

“দেশে বিদ্যুৎ নেই। অথচ হাজার কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠিয়েছে। দুর্নীতি করে আমেরিকায় পাঠানো টাকা আবার দেশে আনছে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ নেয়ার জন্য। সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে অথচ চিকিৎসা নেই”।

তার অভিযোগ যে সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তিনি দাবি করেন যে দেশের জনগণের এই নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা নেই।

“সেজন্য সব দলের সঙ্গে কথা বলে আমরা একমত হয়েছি যে এই অবৈধ সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ মানুষ ভোট দিতে পারবে না। ৩৪টি দল একসাথে বলেছি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশন করে। আর এক দফার মূল হলো এই সরকারের পদত্যাগ,” সমাবেশে বলছিলেন তিনি।

বিএনপির সমাবেশ
বিএনপির সমাবেশের একটি অংশর দৃশ্য।

পুলিশ প্রশাসনকে আবারো আহবান

পুলিশ ও প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব আবারো ‘সরকারের বেআইনি আদেশ পালন না করার’ আহবান জানিয়েছেন তার বক্তৃতায়।

“পুলিশ ও প্রশাসনকে বলতে চাই—আপনারা ভয়াবহ এই দলীয় সরকারের বেআইনি আদেশ নির্দেশে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থা নিবেন না। আমরা জানি আপনার দেশের কল্যাণ চান। আইনের শাসন মেনে চলুন। নিয়মমতো কাজ করুন। অযথা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গ্রেফতার করবে না,” বলছিলেন তিনি।

ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ ছয়শ নেতাকর্মীকে গুম করা এবং দলটির প্রায় ৪০ লাখ কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ করে তিনি অবিলম্বে গ্রেফতার হয়রানি বন্ধ করে খালেদা জিয়াসহ আটক থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।

ওদিকে বিএনপি সমমনা দলগুলোর মধ্যে মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি নয়াপল্টন সংলগ্ন এলাকাতেই সমাবেশ করেছে।

অন্যদিকে সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে ও পুরানা পল্টনে সমাবেশ করেছে জাতীয়তা সমমনা পেশাজীবী জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

আর বিকেলে প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া অংশ, বিজয় নগরে লেবার পার্টি ও কারওয়ান বাজার এফডিসির কাছে সমাবেশ করেছে এলডিপি।

এসব দলগুলো বিএনপির সাথে মিলে গত কিছুদিন যাবত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে একযোগে আন্দোলন করে আসছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপির এই সমাবেশটি বৃহস্পতিবার করার ঘোষণা দিয়েছিলো কিন্তু জনদুর্ভোগ এড়াতে পুলিশের দিক থেকে অনুমতি না দেয়া হলে পরে তারা শুক্রবার ছুটির দিনে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।

এর আগে গত ডিসেম্বরে ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে দশ দফার ঘোষণা দিয়েছিলো বিএনপি। এসব দাবির মধ্যে ছিলো বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, ১৯৯৬ সালের সংবিধান সংশোধনের আলোকে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সাজা বাতিল।

পরে গত ১২ই জুলাই নয়াপল্টনেই এক সমাবেশ থেকে ‘সরকারের পদত্যাগের এক দফা’ দাবি ঘোষণা করে সমমনা দল ও জোটকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলো বিএনপি।

এরপর এ দাবিতে তারা গত ১৮ ও ১৯শে জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা পালন করেছে।

দলটির নেতারা বলেছেন সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে তারা ধারাবাহিকভাবে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।


Spread the love

Leave a Reply