‘দুঃখ দুর্দশায় মুমিনের যা করা উচিত’
আব্দুল কাদির আল মাহদি:
বার্সেলোনা, স্পেন থেকে>
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সময় বিশেষ দুঃখ দুর্দশা ও সংকট দিয়ে থাকেন। প্রত্যেক মানুষের মনে রাখা দরকার, দুঃখ দুর্দশা স্থায়ী থাকে না। প্রত্যেক দুঃখের পর সুখ ও খারাপ অবস্থার পর ভালো অবস্থা আছে, এমনকি নবী রাসুলগণও মানুষকে শান্তির বাণী শুনাতে শুনাতে নিরাশ হয়ে যেতেন। দুঃখ দুর্দশায় নিপতিত হতেন। হতাশ হয়ে পড়তেন, হতাশায় অন্ধকার হয়ে যেত চার পাশ। কিন্তু এমন নিরাশ অবস্থা থেকে আল্লাহ তা’আলা পরিত্রান করতেন।
আল্লাহ তা’আলা তাদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন
حَتَّىٰ إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَنْ نَشَاءُ ۖ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ
যখন পয়গম্বরগণ নৈরাশ্যে পতিত হয়ে যেতেন, এমনকি এরূপ ধারণা করতে শুরু করতেন যে, তাদের অনুমান বুঝি মিথ্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌছে। অতঃপর আমি যাদের চেয়েছি তারা উদ্ধার পেয়েছে। আমার শাস্তি অপরাধী সম্প্রদায় থেকে প্রতিহত হয় না। (আল কোরআন ১২/১১০)
আল্লাহ তা’আলা কি কোরআনে পাকে অনেক ঘটনা বর্ণনা করেন নি? যেসব ঘটনায় আল্লাহ তা’আলা কঠিন অবস্থার পর সহজ অবস্থার বর্ণনা তুলে ধরছেন। তিনি আল কোরআনে নূহ (আ) এর ঘটনা বর্ণনা করছেন। তাদের কথা এভাবে তুলে ধরছেন।
وَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ
আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গকে এক মহাসংকট থেকে রক্ষা করছিলাম। তিনি তার কাওমকে মাহাপ্লাবন থেকে উদ্ধার করছিলেন।
আল্লাহ তা’আলা কি ইব্রাহীম (আ) কে আগুন থেকে রক্ষা করার ঘটনা বর্ণনা করেন নি? তিনি তাঁর জন্য আগুনকে শান্তিদায়ক ও শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত করছিলেন।
তিনি তো আল কোরআনে মুসা (আ) কে শৈশবে হেফাজতের ঘটনা বর্ণনা করছেন যখন তাঁর মাতা সমুদ্রে ফেলে আসছিলেন। অত:পর ফেরাউনের স্ত্রী মুসা (আ) কে লালন পালনের জন্য কুড়িয়ে নিলেন। এভাবে দাওয়াতের অবস্থায় আল্লাহ তা’আলা মুসা (আ) কে শত্রু ফেরাউন থেকে উদ্ধার করলেন। এবং তাঁর ও তাঁর কাওমের শত্রুদের পানিতে ডুবিয়ে দিলেন।
আল্লাহ তা’আলা এভাবে অাইয়ূব, ইয়াকুব, ইউনুস নবী সহ আরও অনেক নবী রাসুলদের ঘটনা কোরআনে বর্ণনা করেন। যেসব ঘটনায় দুঃখ দুর্দশার পর সুখের কথা নিহিত আছে। অন্ধকারের পর আলোর কথা আছে।
কাজেই দুঃখ দুর্দশা ও অন্ধকারের ভেতরেও আমাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। অন্য সাইড থেকে আশাবাঞ্জক ও ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।
যদি আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধির দিকে থাকাই। যখন সাহাবায় কেরামগন নিরাশ হয়ে গিয়েছিলেন। এমন সন্ধিকে প্রকাশ্য পরাজয় মনে করছিলেন। তাদের নিকট জীবনের সব চেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছিল, এমনকি রাসুল (সা) নির্দেশ হলক্ব ও পশু জবাই করতে মন চাচ্ছিল না।
অত:পর মদিনাতে ফেরার পথে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাজিল করে, এটাকে মহাবিজয়ের ঘোষনা দিলেন। উমর (রা) রাসুল (সা) কে জিজ্ঞাসা করেন, এখানে বিজয় বলতে কি হুদাইবিয়ার কথা বলা হয়েছে? রাসুল (সা) বললেন হ্যাঁ!
সুতরাং মুমিনদের উপর যখন কোন খারাপ অবস্থা আসবে। একথা মন থেকে দৃঢ় বিশ্বাস করা যে এটা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। এটাও বিশ্বাস করা, এই খারাপের ভিতর অনেক ভালো নিহিত রয়েছে। যদিও বাহ্যিক দিক দিয়ে খারাপ দেখা যাচ্ছে।
খারাপ অবস্থা আসলে অবশ্যই আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে। কারন ইস্তেগফার আল্লাহ তা’আলার আযাব আর গজব রদ করতে পারে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি (রাসুল সা.) তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। (আল কোরআন ৮/৩৩)
কাজেই আমাদের সর্বদা আল্লাহ তা’আলার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সময় করে কিছু সময় আল্লাহ তা’আলার ধ্যানে মগ্ন থাকতে হবে। তাঁরই নিকট দু’আ ও ইস্তেগফার করতে হবে। এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হুকুম মানাকে নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ বানিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া সময় সময় দান সদকা করতে হবে। এতেকরে আমারা দুঃখ দুর্দশা থেকে পরিত্রান পাবো।
মনে রাখতে হবে, দুঃখ দুর্দশা ও সংকট কেটে যাবে; সংকটাপন্ন মুহূর্তে আল্লাহর উপর আস্থা, বিশ্বাস ও নিজেদের আমল রয়ে যাবে।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সবরকমের বলা মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। আমিন
দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার বার্সেলোনা থেকে আব্দুল কাদির আল মাহদি প্রদত্ত খুতবা।