জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার নাজিরঃ দুজন উপদেষ্টা সহ দেশ পরিচালনায় প্রবাসীদের সুযোগ সম্বলিত ৬ দফা দাবি

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫। দেশ পরিচালনায় অন্তত ১০ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিকে যুক্ত করাসহ ছয়টি দাবি জানিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘প্রবাসীদের ভোটের অধিকার ও দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে এই দাবি জানান বৃটেন প্রবাসী বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ এবং প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান।

লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন দিনের পর দিন। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ থেকে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বাংলাদেশি, যারা প্রবাসে থাকেন, তাদের বঞ্চিত করলে বরং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, যে কোনভাবে এই সরকারকে সফল হতেই হবে। সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। সফল গণ-অভূত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ থেকে মোট জনসংখ্যার ১০% বাংলাদেশী যারা প্রবাসে থাকেন তাদের বঞ্চিত করলে বরং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পৃথিবীর প্রায় ১৫টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আছে যাদের একেকটির মোট জনসংখ্যা দেড় কোটি হবে না। সুতরাং এত বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের অবহেলা করে রাষ্ট্রের টেকসই সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব নয়। দেড় কোটি প্রবাসীদের সন্তুষ্ট করুন ও তাদের ন্যায্য এবং যৌক্তিক দাবীসমূহ মানুন, তার বিনিময়ে দেখবেন প্রবাসীরা কোটি কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, পতিত সরকার ও প্রতিবেশী বড় একটি দেশ বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একার পক্ষে এগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের একটি পজিটিভ দিক হচ্ছে তার দেড় কোটি নাগরিক প্রবাসী। তাদের সঠিকভাবে যুক্ত করলে তারা বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে একেকজন আনঅফিশিয়াল এম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করতে পারেন।

প্রবাসীদের ছয় দফা দাবি:

১. দেড় কোটির ওপরে প্রবাসী অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন। চাকমাদের জন্য প্রতিটি সরকারে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে দেড় কোটি প্রবাসীর জন্য কোনো সরকারেই প্রবাসী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেড় কোটি প্রবাসীদের মধ্য থেকে অন্তত: দুইজন উপদেষ্টা রাখার পাশাপাশি দেশ গঠনে ও সরকার পরিচালনায় প্রবাসীদের আনুপাতিক হারে (অন্ততঃ ১০%) সুযোগ দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।

২. ব্রিটেনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে শত শত দক্ষ প্রফেশনাল আছেন, যারা নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। হাজার হাজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও লন্ডন ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট আছেন, যারা বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মুহাম্মদ ব্রিটেনে গিয়ে ব্রিটিশ-মালয়েশিয়ানদের মধ্যে টেলেন্ট হান্ট করতেন। এটি করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সুপ্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের নিজ দেশকে দেওয়ার মতো অনেক প্রতিভা আছে। বিগত ৫৩ বছর ধরে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন বলা যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে অর্থনৈতিক রেমিট‍্যান্সের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের টেলেন্টকে (মেধাকে) রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠাবার। এটিকে ফেসিলিটেট করার জন‍্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।

৩. বৃটেন, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন অনেক বাংলাদেশী দ্বৈত-নাগরিক। অনেকে বাস্তব ও প্রায়োগিক সুবিধার্থে দ্বৈত-নাগরিকত্ব নিলেও তারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এমনকি প্রধান বিচারপতি হতে পারলেও এমপি হওয়ার পথে সাংবিধানিক বাঁধা ও বৈষম্য রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের সুতিকাগার বৃটেনে দ্বৈত নাগরিকরা বৃটিশ পার্লামেন্টের মেম্বার হতে পারেন। শুধু তাই নয় বৃটেনে এমপি হবার জন্য বৃটিশ নাগরিক হওয়ারও বাধ্যবাদকতা নেই। বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েও বৃটেনে সেটেল্ড যে কেউ বৃটিশ এমপি হতে পারবেন। সুতরাং জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক যারা দ্বৈত-নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাদের জন্য সংবিধানের বৈষম্যমূলক ৬৬(২)(গ) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার দাবী জানাচ্ছি।

৪. ব্রিটেন থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে ভেলিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে দুই থেকে তিন বছর আগে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সঙ্গে ভেলিড বাংলাদেশি পাসপোর্টের সম্পর্ক কী, তা বোধগম্য নয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমন আজগুবি নিয়ম নেই। এই নিয়ম চালু করার কারণে ব্রিটেনে বসবাসরত লাখ লাখ প্রবাসী মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। অন্য দেশের প্রবাসীরাও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ অবস্থায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে আইডি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট অথবা ব্রিটিশ পাসপোর্ট অথবা এনআইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য বলে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাচ্ছি।

৫. প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রবাস থেকে যেন ভোট দিতে পারেন, এটা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে অতীতের কোনো সরকারই এই দাবি পূরণে আন্তরিকতা দেখায়নি। অথচ এই দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক। তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। ভোটের অধিকার তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

৬. প্রবাসীদের ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া ও অভিযোগ আছে। এসব দাবি ও অভিযোগ অতীতে সরকারের কাছে পাঠালেও যথাযথ জবাব পাওয়া যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। অনুরূপভাবে প্রবাসীদের ন্যায়সংগত অধিকার, দাবি-দাওয়া, সেবার মান ও অভিযোগ বিষয়ে সংস্কারের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যের পর ব্যারিস্টার নাজির আহমদ ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান সাংবাদিকদের বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেন

 


Spread the love

Leave a Reply