দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে ডুবোজাহাজ টাইটানের অক্সিজেন, সময় বাকি কয়েক ঘণ্টা

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ  আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ সাবমার্সিবল বা ডুবোজাহাজ টাইটানের কোন সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার কিছু পরেই ফুরিয়ে যাবে ওই সাবমার্সিবলের অক্সিজেন, সেইসাথে ফিকে হয়ে আসবে সেখানকার পাঁচ আরোহীর জীবিত উদ্ধারের আশা।

মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী তাদের অনুসন্ধান এলাকার পরিধি এরিমধ্যে দ্বিগুণ করেছে। উদ্ধারকারীরা রীতিমতো সময়ের সাথে যুদ্ধ করছেন।

সমুদ্রের নীচে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এলাকা ঘুরিয়ে আনতে ভ্রমণ পরিকল্পনা করে থাকে ওশানগেট নামের কোম্পানি। আরোহীদের পোলার প্রিন্স নামে জাহাজে করে প্রথমে আটলান্টিকের উপর টাইটানিক ডুবে যাওয়ার জায়গাটায় নিয়ে যাওয়া হয়।

তারপর সেখান থেকে টাইটান নামের ওই সাবমার্সিবল বা ছোট আকারের সাবমেরিনে করে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার গভীরে, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের মুখোমুখি করা হয়।

এই পুরো সময় সাবটি পোলার প্রিন্স জাহাজের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে। কিন্তু রবিবার, সাবটি ডুব দেয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে জাহাজের সাথে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সবশেষ ডেটা অনুযায়ী সাবটি তিন হাজার আটশ মিটার গভীরে ছিল।

টাইটান যে অঞ্চলটি নীচে নেমেছিল সমুদ্রের স্রোত সেখান থেকে সাবটিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এই ধারণা থেকে ফ্রান্সের রোবটিক্যালি অপারেটেড ভেহিকল-আরওভি পানির প্রায় চার কিলোমিটার গভীরে পাঠানো হয়েছে।

যানটির সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছানোর সক্ষমতা রয়েছে বলে জানা যায়।

উদ্ধার অভিযানে কানাডার নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, উপকূলরক্ষী, নিউ ইয়র্কের বিমান বাহিনী কাজ করছে।

ইতোমধ্যে ১০টি অতিরিক্ত জাহাজ এবং বেশ কয়েকটি সাবমেরিন আজ উদ্ধার কাজে যোগ দেবে বলে জানা গিয়েছে। সবমিলিয়ে উদ্ধারকারীরা বলছেন যে তারা “আশাবাদী”। কারণ নিখোঁজ সাবমার্সিবলের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

তবে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ক্যাপ্টেন বলেছেন: “সত্যি বলতে, আমরা এখনও জানি না তারা কোথায় আছেন।”

মঙ্গলবার এবং বুধবার সমুদ্রের নীচের ধাক্কা দেয়ার শব্দ পাওয়ার পরই এই তল্লাশি এলাকা আরও বিস্তৃত করা হয়।

এখন ১৪ হাজার বর্গ মাইল বা ২২ হাজার ৫৩০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। যার পরিধি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যের আকারের দ্বিগুণ।

টাইটান যে গবেষণা জাহাজ থেকে ছেড়ে গিয়েছিল সেই পোলার প্রিন্সে অনুসন্ধানের জন্য কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এটি টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি বসে উদ্ধার তৎপরতা তদারকি করছে।

ক্যামেরা-সজ্জিত রিমোট-নিয়ন্ত্রিত বাহন আরওভি সারা দিন সমুদ্রতলের গভীরে স্ক্যান করছে।

জাহাজে থাকা পাঁচ যাত্রীর মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছর বয়সী হামিশ হার্ডিং, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ, তার ছেলে ১৯ বছর বয়সী ছাত্র সুলেমান দাউদ, ৭৭ বছর বয়সী ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নারজিওলেট এবং ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ।

আরোহীদের মধ্যে মি. নারজিওলেট, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার অভিযানে আগেও অংশ নিয়েছেন।

নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস-এর মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির হাইপারবারিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কেন লেডেজ
ছবির ক্যাপশান,
নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস-এর মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির হাইপারবারিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কেন লেডেজ

অক্সিজেন একমাত্র সমস্যা নয়
একটি ২২ ফুট সাবে সাবমার্সিবলে এতো সময় ধরে পাঁচ জন মানুষ আটকে পড়ায় তাদের ক্লাস্ট্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস-এর মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির হাইপারবারিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কেন লেডেজ বিবিসি নিউজকে বলেছেন বাতাস ফুরিয়ে যাওয়াই এখন একমাত্র বিপদ নয়।

ডুবোজাহাজটি বৈদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এই বিদ্যুৎ অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভিতরের সবার প্রশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা কার্বন ডাই অক্সাইডের হার বেড়ে যাবে, যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আসবে।

“কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এটি চেতনানাশক গ্যাসের মতো কাজ করে। যার প্রভাবে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে।” বলেন ডা. লেডেজ।

একজন ব্যক্তির রক্তপ্রবাহে হাইপারক্যাপনিয়া নামে গ্যাস অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করালে মানুষ মারা যেতে পারেন।

সাবেক রয়্যাল নেভি সাবমেরিন ক্যাপ্টেন রায়ান রামসে বলেছেন যে তিনি টাইটানের ভিতরের ভিডিওগুলি অনলাইনে দেখেছেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ ব্যবস্থা দেখতে পাননি, যা স্ক্রাবার নামে পরিচিত।

তার মতে, সাবটি সমুদ্রতটে থাকলে পানির তাপমাত্রা প্রায় শূন্যে নেমে আসবে। যদি এর বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে এটি ভেতরের পরিবেশ উষ্ণ রাখতে পারবে না।

ফলে হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ শরীর খুব ঠান্ডা হয়ে যাবে।

সাব-এর মধ্যে অক্সিজেনের অভাব এবং কার্বন ডাই অক্সাইড জমা হওয়া মানে ভেতরের আরোহীদের উদ্ধারকারীদের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা, যেমন নিয়মিত বিরতিতে হুলের উপর আঘাত করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

“যদি তারা অচেতন হয়, তাহলে তারা নিজেদের সাহায্য করার মতো কিছু করতে পারবে না,” ডাঃ লেডেজ বলেছেন।

যদিও কোস্ট গার্ড সতর্ক করেছে যে সম্ভবত সামান্য অক্সিজেন অবশিষ্ট আছে, ক্রুরা তাদের সরবরাহ সংরক্ষণ করতে সক্ষম হতে পারে – অন্তত কিছু সময়ের জন্য।

মি. রামসে বলেছেন যে আরোহীরা ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেও কিছুটা বেশি সময় টিকে থাকতে পারবেন।

তবে তারা যে চাপের মধ্যে থাকবেন সেখানে ধীরস্থির থাকা বেশ কঠিন হতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

ডা. লেডেজ বলেছেন যে তারা কার্বন ডাই অক্সাইড-শোষণকারী দানাগুলো ছড়িয়ে দিতে পারে বা তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে পারে যদি তাদের এখনও বিদ্যুৎ থাকে।

এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, তিনি খুব শীঘ্রই অনুসন্ধান বা উদ্ধার অভিযান বাতিল না করার তাগিদ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন যে তারা অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম থাকা সত্ত্বেও বেঁচে থাকতে পারেন।

“যদি তাদের মধ্যে কেউ বেঁচে থাকতে পারে, সেটি কেবল তাদের শক্তির উপর নির্ভর করবে এবং যদি আলোর সাহায্যে তারা প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো খুঁজে পায়। তবে অবশ্যই, তারা এখনও বেঁচে থাকতে পারে।”

 

বুধবার পর্যন্ত কী হয়েছে?
মার্কিন উপকূলরক্ষীরা বলেছেন, নিখোঁজ টাইটানিক সাবমার্সিবল খুঁজতে গিয়ে তারা কিছু শব্দ পেয়েছেন। তারা জানেন না এই শব্দের উৎস কী। এই শব্দ টাইটান থেকে নাও আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর পারমাণবিক সাবমেরিন কমান্ডার ডেভিড মার্কুয়েট।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমি মনে করি না এই শব্দ ওই সাব থেকে এসেছে। এটা সমুদ্রের নীচের প্রাকৃতিক শব্দ হতে পারে। আমরা শব্দ শুনতে পাচ্ছি এবং আরও জাহাজ তল্লাশি অভিযানে যোগ দেয়। এরপর আমরা আরও শব্দ শুনতে পাই এবং আমি এটাকে কাকতালীয় বলে মনে করি না, ”

ক্যাপ্টেন মারকুয়েট বিশ্বাস করেন যে বোর্ডে যারা আছে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম।

কিন্তু তারপরও কিছুটা আশা রয়েছে কারণ টাইটানকে তুলে আনার জন্য সব ধরণের সরঞ্জাম আনা হচ্ছে।

অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ডুবো-যানটি খুঁজে পাওয়া দরকার বলে তিনি জানান।

গভীর সমুদ্রের পরিবেশ খুবই নিষ্ঠুর এবং ক্ষমাহীন। অনেকটার পৃথিবীর বাইরের মহাকাশের মতো।

টাইটানিক যেখানে ডুবেছে সমুদ্রের নীচের সেই স্থানটিকে “মধ্যরাতের অঞ্চল” বলা হয় – যা এর হিমায়িত তাপমাত্রা এবং চিরস্থায়ী অন্ধকারের জন্য পরিচিত।

টাইটানে পূর্ববর্তী অভিযানে অংশ নেওয়া অভিযাত্রীরা সমুদ্রের তলদেশে নামার আগে সেই ভয়াবহ অন্ধকারে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

সাবমার্সিবলের আলোয় সামান্য দূর পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়। তবে সেটাও মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যে থাকলে।

উদ্ধারকারীদের এই সব ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে।

 

সাবটি পাওয়া গেলেও সেটি উদ্ধারে আরও কয়েক ঘন্টা সময় লাগবে
গভীর-সমুদ্রের অভিযাত্রী ড. ডেভিড গ্যালো বলেছেন যে টাইটানে আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে অলৌকিক কিছু হওয়া লাগবে, তারপরও তিনি আশাবাদী।

তিনি আইটিভি-তে গুড মর্নিং ব্রিটেনকে বলেছেন যে পানির নীচে থেকে আসা শব্দগুলো “বিশ্বাসযোগ্য এবং পুনরাবৃত্তি হচ্ছে”।

ধারণা করা হচ্ছে যে এই শব্দ ডুবো জাহাজ থেকে আসছে এবং এই শব্দের উৎস সনাক্ত করতে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।

“এই মুহূর্তে, আমাদের ধরে নিতে হবে যে এই শব্দ সাবমেরিন থেকে আসছে এবং দ্রুত সেই স্থানে গিয়ে এর অবস্থান সনাক্ত করতে হবে এবং সাবমেরিনটি কোথায় রয়েছে তা যাচাই করার জন্য সেখানে রোবট নামতে হবে,” তিনি বলেন।

“তাদের সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকতে হবে কেননা সাবটি উদ্ধারের পর পৃষ্ঠে নিয়ে যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে।”

টাইটান সাব কত গভীরে থাকতে পারে?

টাইটান সাবমার্সিবল প্রায় ৪০০০ মিটার গভীরতায় পৌঁছতে সক্ষম।

এটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের দিকে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান সমুদ্রের তলদেশে ৩,৮০০ মিটার গভীরে।

ওই ধ্বংসস্তূপ পর্যন্ত যেতে সাবটির পৃষ্ঠ থেকে অন্তত দুই ঘণ্টা সমুদ্রের গভীরে যাত্রা করতে হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ আগেই প্রায় এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে সাবটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

তার আগ পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

যাইহোক, নিখোঁজের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তারা এলাকার একটি সোনার অনুসন্ধানে “জলের নিচের শব্দ” সনাক্ত করেছে।

মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী বলেছে যে তারা শব্দের উৎস সম্পর্কে জানতে কাজ করছে তবে এখনও পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি।

ডেভিড লখরিজ নামে একজন সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ এই সাবের সম্ভাব্য নিরাপত্তা সমস্যার বিষয়ে ২০১৮ সালে সতর্ক করেছিলেন।

ডেভিড লখরিজ নামে একজন সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ এই সাবের সম্ভাব্য নিরাপত্তা সমস্যার বিষয়ে ২০১৮ সালে সতর্ক করেছিলেন।

টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে পাঁচ বছর আগে সতর্ক করা হয়েছিল
ডেভিড লখরিজ নামে একজন সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ এই সাবের সম্ভাব্য নিরাপত্তা সমস্যার বিষয়ে ২০১৮ সালে সতর্ক করেছিলেন।

ডেভিড লোখরিজ ওশানগেটে কাজ করার জন্য ২০১৭ স্কটল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটন রাজ্যে চলে আসেন।

কিন্তু এক বছরেরও কম সময় পরে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিলেন যে টাইটানের কার্বন হুলের ত্রুটিগুলো চোখের আড়ালে চলে যেতে পারে। এজন্য ডুবোজাহাজটির সার্বিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে তিনি একটি বহিরাগত সংস্থার সাহায্য নিতে কোম্পানির প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন যে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট লেখার আগ পর্যন্ত তার মৌখিক সতর্কতাগুলি উপেক্ষা করা হয়েছিল।

পরে তাকে ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ সহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে একটি বৈঠকে ডাকা হয়, যিনি নিখোঁজ সাবমার্সিবলটিতে রয়েছেন।

ওশানগেট লখরিজকে গোপনীয় তথ্য প্রকাশের জন্য চাকরীচ্যুত করে এবং এজন্য কোম্পানি তার বিরুদ্ধে মামলাও করে।

এই সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ পরে তাকে অন্যায্যভাবে বরখাস্তের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে মামলার নিষ্পত্তি হয়।

লখরিজের আইনজীবী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আদালতের নথিতে আরও বলা হয়েছে যে, লখরিজ জানতে পারেন টাইটানের ফরোয়ার্ড ভিউপোর্টের নির্মাতারা এটিকে শুধুমাত্র ১,৩০০ মিটার গভীরতায় পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। অথচ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের ৩,৮০০ মিটার গভীরে অবস্থিত

সমুদ্রবিজ্ঞানী বলেছেন যে ঘটনাটি শিল্পের জন্য বড় সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে। এখান থেকে তাদের শেখা উচিত।

সমুদ্রবিজ্ঞানী ডেভিড মারনসকে বলেছেন: “এই ঘটনার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।”

“এই ধরণের ঘটনা আমরা বারবার ঘটতে দিতে পারি না, এবং আমাদের এই শিল্পের দিকে নজর দেওয়া উচিত এবং যাত্রীদের এত গভীরে নিয়ে যাওয়ার আগে চিন্তাভাবনা করা দরকার কারণ যদি কোন ভুল হয়ে যায় তবে তা শুধরানোর খুব কম সুযোগ রয়েছে। ”

তিনি বলেছেন, টাইটানের নিরাপত্তা যাচাই না হওয়া একটি “উদ্বেগের বিষয়”।

টাইটান সম্পর্কে কিছু তথ্য
• সাবটি একজন পাইলট একটি ভিডিও গেম কন্ট্রোলারের সাথে চালনা করেন।

• সাবটি অত্যন্ত সংকীর্ণ, যার আয়তন ২২ ফুট x ৯.২ ফুট x ৮.৩ ফুট।

• ভেতরে একটি ব্যক্তিগত টয়লেট আছে, যেখানে এটি ব্যবহার করার সময় ছোট পর্দা টানা হয়।

• সাবটি তার ডাইভ শুরু করার আগে, একটি সহায়তা দল বাইরে থেকে দরজাটি বন্ধ করে দেয় এবং ১৯টি নাটবল্টু দিয়ে সিল করে ক্রুদের ভিতরে লক করে দেয়।

উদ্ধার অভিযানের সরঞ্জাম
একটি কানাডিয়ান পি-থ্রি বিমান টাইটানের অনুসন্ধান এলাকায় পানির নিচের শব্দ শনাক্তে কাজ করছে। এই বিমানটি পানির নীচে শব্দ শনাক্ত করেছিল।

পি-থ্রি ওরিয়ন স্পটার বিমান গভীরভাবে অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এতে ইনফ্রারেড এবং দীর্ঘ-পরিসরের ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরার পাশাপাশি বিশেষ ইমেজিং রাডার রয়েছে।

উদ্ধার প্রচেষ্টার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাহন হল আরওভি যা দূর থেকে চালানো হয়।

অনুসন্ধানের প্রচেষ্টায় সহায়তা করার পাশাপাশি, আরওভি’র ডুবো জাহাজটিকে পৃষ্ঠে নিয়ে আসার সক্ষমতা রয়েছে।

আরেকটি সরঞ্জাম হল ভিক্টর ৬০০০ – একটি মানববিহীন ফরাসি রোবট যা ৬০০০ মিটার গভীর পর্যন্ত ডুব দিতে পারে। এটিও দূর থেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।

তবে এর নিজ থেকে সাবমার্সিবল তোলার ক্ষমতা নেই।


Spread the love

Leave a Reply