নবম থেকে ২০তম গ্রেড- বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কোন গ্রেডে কী বোঝানো হয়

Spread the love

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নবম থেকে ২০ তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন রীতি কার্যকর হবে। কিন্তু সরকারির চাকরির গ্রেড বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? কোন পদে কী গ্রেড প্রযোজ্য হয়?

কোন গ্রেডে কী আছে

গ্রেড মানে হচ্ছে সরকারি চাকরির কোন বেতন স্কেলে নতুন কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। পদভেদে এগুলো আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অনেক সময় এসব বেতন স্কেলে যেমন সরাসরি নিয়োগ করা হয়, আবার পদোন্নতি পেয়েও সরকারি কর্মচারীরা নতুন গ্রেড পেয়ে থাকেন।

এ নিয়ে বিবিসি বাংলার কথা হয়েছে পিএসসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক আবুল কাশেম মজুমদার ও বর্তমান সদস্য মো. হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে। তারা বেতন গ্রেড এবং শ্রেণির বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে, ব্রিটিশ আমল থেকে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণি হিসাবে নিয়োগের রীতি চলে এলেও ২০১৫ সাল থেকে সেই পদ্ধতি বাতিল করে গ্রেড পদ্ধতি চালু করা হয়। এর মানে হচ্ছে, কোন পদে থাকা বেতনের কোন গ্রেডে কাকে নিয়োগ করা হচ্ছে।

নবম থেকে ২০-তম গ্রেডের মধ্যে আগের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সকল শ্রেণির চাকরির নিয়োগ আওতাভুক্ত রয়েছে। এখন আর এসব পদকে শ্রেণি হিসাবে বর্ণনা করা হয় না, বরং গ্রেড হিসাবে নিয়োগ করা হয়।

বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হিসাবে যারা চাকরিতে প্রবেশ করে থাকেন, তারা নবম গ্রেডের বেতন স্কেলে আওতাভুক্ত হন।

এরপর যখন তারা পদোন্নতি পান, তখন তারা পর্যায়ক্রমে উপরের দিকের বিভিন্ন গ্রেডের বেতনভুক্ত হন।

সর্বোচ্চ যে সব গ্রেড

সচিব, অধ্যাপক ইত্যাদি পদে চাকরিরতরা প্রথম গ্রেডের বেতনভুক্ত হন। তেমনি অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবরা দ্বিতীয়, তৃতীয় গ্রেডের বেতনভুক্ত হয়ে থাকেন।

প্রথম থেকে অষ্টম পর্যন্ত সাধারণত পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত হন না, পদোন্নতির মাধ্যমে চাকরিরতরা গ্রেডভুক্ত হয়ে থাকেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়ে থাকে।

বিসিএস পরীক্ষা দিয়েও যারা ক্যাডারে নিয়োগ পান না, তাদের অনেক সময় নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত তারা ১০/১১ তম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। অনেক সময় এসব গ্রেডে সরাসরি নিয়োগও হয়ে থাকে।

আগে যেসব পদে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হতো, এখন সেসব পদে ১২/১৩/১৪-তম গ্রেডের আওতায় নিয়োগ করা হয়ে থাকে। নিচের গ্রেড থেকে কেউ পদোন্নতি পেয়েও এই সকল গ্রেডে বেতনভুক্ত হয়ে থাকেন। এই গ্রেডের পদগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইত্যাদি।

অতীতে তৃতীয় শ্রেণি হিসাবে পরিচিত যেসব চাকরি ছিল, সেগুলোকে এখন ১৫/১৬/১৭ নম্বর বেতন গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। করণিক, সহকারী কর্মকর্তা, কম্পিউটার অপারেটর ইত্যাদি পদ এসব বেতন স্কেলের মধ্যে রয়েছে।

আর ঝাড়ুদার, নৈশ প্রহরী, পিয়ন ইত্যাদি পদে নিয়োগগুলো শুরু হয় ১৮/১৯/২০-তম গ্রেড থেকে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব পদে ২০তম গ্রেডে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বেতন বাড়লে তারা ১৯ তম গ্রেড বা ১৮ তম গ্রেড পেয়ে থাকেন। পদোন্নতি হলে তারা আরো ওপরের দিকের গ্রেডও পেতে পারেন।

কোটার ভিত্তিতেও নিয়োগ

বাংলাদেশে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে এসব গ্রেডে মেধা ছাড়াও বিভিন্ন কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হতো। কিন্তু কোটা বাতিলের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনের পর একটি পরিপত্র জারি করে সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটায় নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

তবে ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার কয়েকজন সন্তান রিট করলে হাইকোর্ট শুনানির পর এই বছরের ৫ই জুন সরকারের ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে।

এ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয় যা দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়। এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার। দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

কারফিউর মধ্যে বিশেষ শুনানি করে গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ ও ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ২০-তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশের কোটা নির্ধারণ করে দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের আলোকের মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।


Spread the love

Leave a Reply