নেপালের পোখারায় যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের আশঙ্কা
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাহাত্তর জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে নেপালের একটি বিমান পোখারা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর অন্তত ৪০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে আরও মৃতদেহ পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে উদ্ধারকর্মীরা।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় যাওয়ার পর অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। সেই সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
এটিআর ৭২ মডেলের দুই ইঞ্জিনের বিমানটিতে মোট ৬৮ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের ১৫ জনই ছিলেন বিদেশি নাগরিক। বাকি চারজন ছিলেন বিমানটির কর্মী।
বিমান বিধ্বস্তের পরপরই নেপালের সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে।
‘’আরও মৃতদেহ পাওয়া যাবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। বিমানটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে,’’ সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন।
যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন নেপালি ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। বাকিদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান এবং দুইজন কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন।
এছাড়া আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের একজন করে নাগরিক ছিলেন বিমানটিতে।
এই ঘটনার পর মন্ত্রিপরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল। দেশের এজেন্সিগুলোকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
নেপালে ১৯৯২ সালের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পরে এটাই সবচেয়ে বেশি মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা। এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, সেই বছর পাকিস্তানি এয়ারবাস এ৩০০ কাঠমান্ডুতে অবতরণ করগে গিয়ে একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়।
এই বিমানটি ১৫ বছরের পুরনো ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, দুই ইন্জিনের এটিআর ৭২ বিমানগুলো যৌথভাবে তৈরি করে এয়ারবাস এবং ইটালির লিওনার্দো কোম্পানি।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এ ধরনের ছয়টি বিমান রয়েছে।
নেপালে বিমান দুর্ঘটনা একেবারে বিরল নয়। গত এক যুগে নেপালে অন্তত আটটি বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে যাতে যাত্রী ও ক্রু মিলে ১৬৬ জন নিহত হয়েছে।
২০১৮ সালের ১২ই মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান।
সেই দুর্ঘটনায় বিমানের মোট ৫১ জন যাত্রী এবং ক্রু নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর।
গত বছরের ২৯শে মে পোখারা থেকে পশ্চিমের শহর জমসমে যাওয়ার পথে ২২ জন যাত্রী নিয়ে তারা এয়ারের একটি বিমান নিখোঁজ হয়। পরে পাহাড়ের একটি খাঁজে ভেঙ্গে পড়া বিমানটির সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে যাত্রীদের সবাই নিহত হয়েছিল।
বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৪টি পর্বত শৃঙ্গের আটটি নেপালে রয়েছে, যার মধ্যে হিমালয়ও অন্যতম। নেপালে যেকোনো সময় পরিবর্তনশীল আবহাওয়া এবং পাহাড়ের মাঝে কঠিন এয়ারস্ট্রিপ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
নেপালের কিছু বিমান দুর্ঘটনা
- মে ২০২২ – পোখারা থেকে জমসমের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী টুইনঅটার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২২ জন নিহত।
- এপ্রিল ২০১৯ – লুকলা বিমানবন্দরের রানওয়েতে দুটি হেলিকপ্টারের সাথে সামিট এয়ারের একটি বিমানের সংঘর্ষে তিন জন নিহত।
- ফেব্রুয়ারি ২০১৯ – এয়ার ডাইনাস্টির একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে সাতজন নিহত। নিহতদের মধ্যে তৎকালীন সংস্কৃতি, পর্যটন ও বিমান চলাচল মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীও ছিলেন।
- সেপ্টেম্বর ২০১৮ – গোর্খা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এয়ার অলটিচ্যুডের একটি হেলিকপ্টার জঙ্গলের মধ্যে বিধ্বস্ত হলে ছয়জন নিহত হয়। এদের একজন ছিলেন এক জাপানী পর্যটক।
- মার্চ ২০১৮ – বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। একান্ন জন নিহত হয়।
- ফেব্রুয়ারি ২০১৬ – পোখারা থেকে জমসম যাওয়া তারা এয়ারের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২৩ জন নিহত।
- জুন ২০১৫ – ডক্টর্স উইদআউট বর্ডার্সের ভাড়া করা হেলিপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে চার জন নিহত। তারা ভূমিকম্প পরবর্তী ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন।
- মে ২০১৫ – ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে নিয়োজিত মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত। ছয়জন আমেরিকান সৈন্য, দুইজন নেপালী সৈন্য এবং ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত।
- মার্চ ২০১৫ – একটি তুর্কী বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়লে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চারদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হয়।
- ফেব্রুয়ারি ২০১৪ – পোখারা থেকে জুমলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া নেপাল এয়ারলাইন্স কর্পোরেশনের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৮ জন নিহত।
- সেপ্টেম্বর ২০১২ – কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সিতা এয়ারের বিমান ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা উনিশ জনের সবাই নিহত হয়।
- মে ২০১২ – পোখারা থেকে জমসমের উদ্দেশ্যে ভারতীয় তীর্থযাত্রী বহনকারী অগ্নি এয়ারের একটি বিমান বিধ্বস্ত। উনিশ জন নিহত।
- সেপ্টেম্বর ২০১১ – বুদ্ধা এয়ারের একটি বিমান কাঠমান্ডুর কাছে বিধ্স্ত। চৌদ্দ জন নিহত, যাদের মধ্যে নেপালী, ভারতীয় ও অন্যান্য দেশের নাগরিকেরাও ছিলেন।
- ডিসেম্বর ২০১০ – লামিডান্ডা থেকে কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৯ জন যাত্রী ও তিন জন ক্রু নিহত।
- অগাস্ট ২০১০ – কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বিমান বিধ্স্ত হয়ে ১৪ জন নিহত।
- অক্টোবর ২০০৮ – লুকলা বিমানবন্দরে একটি বিমান অবতরণের সময়ে বিধ্বস্ত হলে ১৮ জন নিহত হয়। একজন আহত।
- সেপ্টেম্বর ২০০৬ – শ্রী এয়ারের হেলিকপ্টার বিধ্স্ত হয়ে ২৪ জন নিহত। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তখনকার বন ও ভূমি রক্ষা প্রতিমন্ত্রী গোপাল রাই, পরিবেশবিদ ড. হার্ক গুরুং, ড. সিবি গুরুং ও তীর্থমান মাস্কে।