পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি সিলেটের ৫ লাখ মানুষ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বৃষ্টিতে সিলেটের নদনদীর পানি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারিগাঙ্গ নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেকটা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় সিলেট মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ২০টি এলাকার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন।
জানা গেছে, গত ২৮ মে রাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার ফের বন্যা কবলিত হয়।
সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন শেষরাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ আর নামে পাহাড়ি ঢল। সকালেই তলিয়ে যায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার (১৮ জুন) ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি।
সিলেট নগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত।
গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার পথঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মঙ্গলবার বিকাল ৬টায় জানায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.২৮ সে.মি সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট জুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রাম ও এলাকার ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরের ৪টি ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৭৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী তিন দিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।