পালানোর সময় দাড়ি-গোঁফ ছেঁটে ফেলেন সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবু
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তাদের বহু দোসর দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করেন। তাদের প্রথম লক্ষ্য ভারত। এ যাত্রায় অনেকেই নিজের চেহারায় পরিবর্তন এতে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান। এমন দুজন হলেন সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবু। দাড়ি-গোঁফ ছেঁটে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন তারা।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে। বিকেলে থানা থেকে তাদের রাজধানীকে নিয়ে আসছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল। তাদের সঙ্গে আরও আটক হয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জেমসন মাহাবুব ও প্রাইভেট কারের চালক সেলিম।
স্থানীয়রা জানায়, একটি প্রাইভেট কার রোববার গভীর রাত থেকে কখনো ঘোষবেড় দিয়ে সীমান্তের দিকে, কখনো ধোবাউড়া রোডের দর্শাপাড় এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ চক্কর দেয়। এ সময় স্থানীয়দের বিষয়টি সন্দেহ হলে উৎসুক জনতা প্রাইভেট কারটি আটক করে। পরে গাড়িতে থাকা লোকজনের পরিচয় জানতে চায়। মোজাম্মেল হোসেন বাবু গোঁফ ও শ্যামল দত্ত দাড়ি ছেঁটে ফেলায় প্রথমে তাদের কেউ চিনতে পারেনি। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে নিজেদের পরিচয় দেন। পরে তাদের উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।
জানা গেছে, শ্যামল, বাবু, জেমসন এক দালালের সাহায্যে ভারতের মেঘালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ধোবাউড়া আসেন। তারা স্থানীয় বিএনপি নেতা রাজু ও মুশফিকের সহযোগিতা নিয়ে সীমান্ত পার হতে চেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে রাজু ও মুশফিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার জেমসন মাহাবুব বলেন, আমার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরে। আমাকে আমার স্যার মোজাম্মেল হোসেন বাবু সীমান্তে দিয়ে আসার কথা বলেন। তারপর আমরা ঢাকা থেকে একসঙ্গে ময়মনসিংহ হয়ে ধোবাউড়া সীমান্তের দিকে রওনা দিই। সে সময় সীমান্তে আসার পথে ১০টি মোটরসাইকেল পথ রুদ্ধ করে। আমাদের আটকে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর কিল-ঘুষি দিয়ে আমার কাছে থাকা টাকাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। পরে মানিব্যাগে ৩০০ টাকা দেখে তারা গালাগাল করে আবার সেটি ফিরিয়ে দেয়। তবে স্যারদের কাছ থেকে কী কী নিয়েছে আমি বলতে পারব না।
শ্যামল দত্ত স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা যারা ধরেছিল তারা নিয়ে গেছে। থানায় আটকের বিষয়ে কোনো নিউজ যেন না হয়, সে জন্য তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।
বিকেলে থানার সামনে বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা আটককৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা বলেন, হাসিনার তেলবাজ সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুকে ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে দ্রুত বিচার করতে হবে। তাদের থানা থেকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় ডিম ছোঁড়ে ও কিল-ঘুষি দেয়। দ্রুত পুলিশ তাদের থানা থেকে বেড় করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
এ ব্যাপারে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চাঁন মিয়া বলেন, তাদের সাধারণ জনগণ সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করে সকাল ৬টার দিকে ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাগর সরকার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে তাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ্জাহানের কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।
শ্যামল দত্ত দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মোজাম্মেল বাবু। এর আগে সপরিবারে ভারতে যাওয়ার সময় দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে আটকে দিয়েছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ।