পুলিশ সার্ভিসের বিবৃতি কি বেনজীর ও আছাদুজ্জামান মিয়াকে ‘সুরক্ষা’ দেবার চেষ্টা?
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে দেশটির পুলিশ সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোকে ”উদ্দেশ্যমূলক ও অতিরঞ্জিত” বলে অভিহিত করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
শুক্রবার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়।
যার শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ করা হয় – “বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের প্রকাশিত বা প্রচারিত অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রসঙ্গে”।
সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের “অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতি” নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। পরবর্তীতে অন্যান্য গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর শিরোনাম হয়।
কয়েকদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ‘অঢেল সম্পদ’ নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পুলিশের এই দুই সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে এই বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএস এ) সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা ব্যক্তিকে ‘মিন’ (নির্দেশ) করে বলেননি।
বরং ‘তথ্যসূত্র ও প্রমাণ ছাড়া’ প্রচারিত বা প্রকাশিত ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মানহানিকর’ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে দাবি তার।
আদালতের নির্দেশে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের কিছু সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসেব এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনও জ্ঞিাসাবাদের জন্য মি. বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের তলব করেছে। কিন্ত তারা এখনো হাজির হয়নি।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগরের সাবেক পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ‘বিপুল সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে আদালত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের তরফ থেকে এখনো কোন পদক্ষেপ আসেনি।
বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক মহাপরিদর্শক মো. নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখা অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব।”
তাই, “কোনো তথ্য প্রমাণহীন অভিযোগ যদি উঠে থাকে, সেটার প্রতিবাদ তারা করতেই পারে।”
অন্যদিকে এই প্রেস রিলিজটাকেই ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
“এতে প্রমাণ হয় বাহিনীর মধ্যেই দুর্নীতির সুরক্ষাকারী একটা চক্র আছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
বিবৃতিতে কী বলা হয়েছে?
বিপিএসএর সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ করে লেখা।
তাতে বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রচারিত অতিরঞ্জিত রিপোর্ট সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
এ ধরনের আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাওভাবে প্রচারিত/প্রকাশিত অতিরঞ্জিত রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।”
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “গণতন্ত্র ও দেশবিরোধীচক্রের নাশকতা প্রতিহত করার কারণে তারা পুলিশকে “প্রতিপক্ষ” বিবেচনা করে নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত।
“বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীরাও” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত” উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম তাদের(বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসী) “অনুকরণ” করছে।
এর অংশ হিসেবে গণমাধ্যমগুলো, “পুলিশের বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে, যা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার হীন উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে” বিসিপিএ’র কাছে।
আরো বলা হয়, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের রিপোর্টের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই।”
রিপোর্টগুলোকে “বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অতি কথিত” বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
এসবের মধ্যে “কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ” এর “ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থ” হাসিলের প্রচেষ্টা রয়েছে বলেও মনে করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
“যা সাংবাদিকতার নীতিমালা বিরোধী,” বলছে সংগঠনটি।
তারা বলছে, “কী কারণে, কার উদ্দেশ্য হাসিল এবং কার ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় মিডিয়া বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা রটনায় লিপ্ত, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা অযৌক্তিক নয়।”