প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সন্তান হত্যা কী করে সম্ভব?
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় তুহিন নামে সাত বছর বয়সী এক শিশুর হত্যাকান্ডের সাথে তার বাবা এবং চাচার জড়িত থাকার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য একজন বাবা কিভাবে তার নিজের সন্তানকে হত্যায় জড়িত থাকতে পারে – সেটি ভেবে অনেকেই চমকে উঠেছেন।
শিশু তুহিনকে হত্যার নৃশংসতা বিস্তারিত সংবাদমাধ্যমে দেখার পর অনেকে শিউরে ওঠেন।
এই ঘটনা অনেকের মনে আরো গভীর দাগ কেটেছে যখন পুলিশ জানায় যে এই নৃশংস হত্যার সাথে শিশুটির বাবা এবং চাচা জড়িত। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো।
নিজের সন্তানের হত্যাকান্ড দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর এই মানসিকতা অনেককে চমকে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে নিজের পরিবারের ক্ষতি করে হলেও প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দেবার মনোবৃত্তি কাজ করে। এসবের শিকার শিশুরাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“শিশুদের তো রি-অ্যাকশন দেবার সুযোগ নেই। তাদের সহজেই ঘায়েল করা যায়। একটা অ্যাডাল্ট মানুষকে হত্যা করতে গেলে হয়তো অনেক বেগ পেতে হবে। কিন্তু একটা শিশুর ক্ষেত্রে সেটা হয়না” – বলছিলেন ফারজানা রহমান।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, নিজের ক্ষতি করে হলেও যারা অপরকে ফাঁসানোর জন্য উদ্যত হয় – তারা বিকৃত মানসিকতার লোক।
অনেকে মনে করেন, নিজের পরিবারের ক্ষতি করে প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপাতে পারলে সেটি পুলিশের কাছে হয়তো বেশি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে।
কারণ, পুলিশ হয়তো কোনভাবেই বিশ্বাস করতে চাইবে না যে কোন ব্যক্তি নিজের পরিবারের ক্ষতি করতে পারে। এমন মানসিকতা থেকেই এ ধরণের প্রবণতা তৈরি হয় বলে মনে করেন সাবেক পুলিশ বিভাগের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা।
“এই প্রবণতা আগে থেকেই ছিল। অপর পক্ষকে জড়িয়ে দেবার জন্য এ ধরণের কাজ হতো,” বলেন মি: হুদা।
সমাজ এবং অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব ক্ষেত্রে প্রতিহিংসা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে কেউ-কেউ হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে নিজের আত্মতুষ্টি পাওয়াটাই মুখ্য হয়ে ওঠে বলে উল্লেখ করেন খন্দকার ফারজানা রহমান।
“যে কোন উপায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোটা বড় হয়ে ওঠে। সেটা যেভাবেই হোক না কেন। হিতাহিত বোধটা তখন আর থাকেনা,” বলেন ফারজানা রহমান।
সমাজ এবং অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে জমিজমা কিংবা নানা ধরণের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দেবার জন্য অনেকে নানা সুযোগ খোঁজেন।
সামাজিক তিক্ততা থেকেই এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে তারা মনে করেন।