প্রিন্স উইলিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেনফেল টাওয়ারের দেখতে গেলেন রানি
বাংলা সাংলাপ ডেস্কঃব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স উইলিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেনফেল টাওয়ারের বেঁচে যাওয়া দুর্গতদের দেখতে গেলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দুর্গতদের জন্য স্থাপিত এক ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন রানি। এদিকে সবশেষ আপডেট হিসেবে এখন পর্যন্ত ৩০ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, নিহত সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।
বুধবার রাতে পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে। আগুনের তাণ্ডবে ভবনটি একদম ছারখার হয়ে যাওয়ায় ১৭ প্রাণহানির পাশাপাশি কোনও কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তৃতীয় দিনের সেই ভস্মীভূত ভবনে মরদেহের সন্ধান করছেন উদ্ধারকারীরা। তবে লন্ডন মেট্রোপলিট্রন পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে, সব মরদেহ পাওয়ার ব্যাপারে তারা নিজেরাই নিশ্চিত নন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডিকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই খবর জানিয়েছে। এদিকে নিখোঁজদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন স্বজনরা। দেওয়ালে তারা লিখে রাখছেন খুঁজে না পাওয়া প্রিয় মানুষের নাম-পরিচয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সব নিহত মানুষকে শনাক্ত করা যাবে না বলে লন্ডন মেট্রোপলিট্রন পুলিশের দেওয়া বিবৃতির পর দুর্গতদের দেখতে যান তিনি। সেখানে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় বাসিন্দা এবং কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন রানি। উদ্ধারকারীদের ‘দুঃসাহসী’ ভূমিকার প্রশংসা করেন এলিজাবেথ। ‘অবিশ্বাস্য উদারতা’য় এগিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান রানি।
১৯৭৪ সালে নির্মিত ভবনটিতে ১২০টি ফ্ল্যাট ছিল। বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ওই ভবনে ৪০০ থেকে ৬০০ মানুষের বসবাসের কথা জানিয়েছে। তবে আগুন লাগার পর ঠিক কতজন বের হতে পেরেছেন বা কতজন আটকা পড়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। ভবনের ভেতরে বহু মানুষের জিম্মি হয়ে থাকার খবর জানিয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বিতর্কিত বৃষ্টিপ্রতিরোধী প্রলেপে মোড়ানো ভবনটিতে এখন সারি সারি ভস্মীভূত বস্তু। পুড়ে যাওয়া আসবাবগুলোর এমন অবস্থা যে এখন বোঝার উপায় নেই কোনটা কী জিনিস। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভস্মীভূত জানালা, গলে যাওয়া টেবিল আর বিভিন্ন আসবাবের সমাহার। দেখা গেছে অর্ধেক কাপড়ে ভর্তি ওয়াশিং মেশিন, যেন ভবনের বাসিন্দাদের জীবনের আর্তির এক আধমরা সাক্ষী। এইসব ভস্মীভূত বস্তুর মধ্যে যে মানুষের মরদেহ নেই তা কে বলতে পারে?মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি সবশেষ আপডেট হিসেবে ৩০ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এদের মধ্যে একজন হাসপাতালে নিহত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত বিবৃতির কিছু আগে তিনি স্বীকারোক্তি দেন, ‘দুঃখজনক হলেও একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে; নিহতদের প্রত্যেককে বোধহয় শনাক্ত করতে পারব না আমরা।’
আগুন লাগার খবর পাওয়ার ছয় মিনিটের মাথায় দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে আগুন নেভাতে তাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়। ভয়াবহ সেই আগুন নেভাতে দুইদিন লেগে যায় তাদের। এরপর শুরু হয় মরদেহ উদ্ধারের কাজ। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ভবনের উপরের তলাগুলোতে উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্তও ভবনে জীবিত মানুষ ছিলেন। উদ্ধার কর্তৃপক্ষের ধারণা, তাদের কেউ এখন বেঁচে নেই।