প্রেমের ফাঁদে ফেলে যুবককে তরুণীর অমানুষিক নির্যাতন
বাংলা সংলাপ ডেস্ক: এর আগে চার বার বিয়ে করেছিলেন মরিয়ম আক্তার মন্টি (২৩)। সৌদি প্রবাসী মো. রাসেলের (২৮) সঙ্গে ছিল তার পঞ্চম বিয়ে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই যুবককে বিয়ে, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি মন্টি। তার পরকীয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়া মাত্রই রাসেল ও তার বাবা-মাসহ পরিবারের ছয়জনের নামে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন। শেষ রাসেলকে অপহরণের পর অমানুষিক নির্যাতন। ম্যাচ লাইটার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল রাসেলের যৌনাঙ্গ। অবশেষে র্যাব-১১ এর হাতে আটক হয় মন্টি, তার প্রেমিকসহ চারজন। র্যাবের জ্ঞিসাবাদে অবশ্য সকল অপরাধ স্বীকার করছেন ওই তরুণীসহ আটক অন্যরা।
মো. রাসেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার আব্দুল হকের ছেলে।
যুবকের সঙ্গে প্রতারণা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ র্যাবের হাতে আটক তরুণীসহ চারজন। ইনসেটে নির্যাতনের শিকার যুবক
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থান থেকে মরিয়ম আক্তার মন্টি (২৩), তার বড় ভাই মো. পাপ্পু মিয়া (২৮), প্রেমিক মো. অভিত মিয়া (২৮) ও বাবা মো. বাদল মিয়াকে (৫৮) আটক করা হয়। পরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে আনা হয়।
র্যাব জানায়, অভিযোগ রাসেল জানায়, তাকে গত দুই মাস আগে ডিবির পরিচয়ে অজ্ঞাত কয়েকজন নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। অচেতন করে এক বাসায় নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধরসহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করে। ম্যাচ লাইটার দিয়ে যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দেয়। পরে অপহরণকারীরা সেই নির্যাতনের ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করে রাসেলের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
রাসেলের পরিবার সেই রাতেই বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা পাঠায় এবং অবশিষ্ট টাকা নগদে পরিশোধ করবে বলে জানায়। পরের রাতে টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীরা রাসেলকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে নরসিংদীর শাপলা চত্বরে আসার পর রাসেল প্রসাব করার জন্য মাইক্রোবাস থেকে নামে। একটি পিকআপ ভ্যান সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাসেল ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে লোকজন আসতে থাকলে তাকে রেখে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে রাসেল পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে র্যাব অফিসে অভিযোগ জানায়।
র্যাবের মিডিয়া কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন আরও জানান, অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযানে নামি। আটক সকলেই নরসিংদী জেলার সদর থানার স্থায়ী বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
রাসেল জানায়, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে মন্টি নামে এক সুন্দরী মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। কিছু দিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের ৬ মাসের মাথায় রাসেলের সৌদিতে চাকরির ভিসা চলে আসে। বিদেশ যাওয়ার আগে মন্টি বিয়ে করার বায়না ধরে। উপায় না দেখে রাসেল নরসিংদীর কোর্টে গিয়ে মন্টিকে বিয়ে করেন। দেড় মাস পরে রাসেল তার পরিবারের কাছে বিয়ের বিষয়টি জানায়। সাত মাস মাস পরে রাসেল দেশে এসে মন্টিকে বাড়িতে তুলে আনে। ছুটি শেষে রাসেল আবার সৌদি চলে যায়। এর মধ্যে মন্টি অন্তঃসত্ত্বার অজুহাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে সোনাদান নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় এবং পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে। এরপর থেকে তার পরিবার বিভিন্ন ছলনার আশ্রয় নিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে থাকে। রাসেল এর মধ্যে কয়েকবার বিদেশ থেকে দেশে আসা যাওয়া করে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসার পর মন্টির পরকীয়ার প্রমাণ পায় রাসেল। অবস্থা বেগতিক দেখে মন্টি তখনই নরসিংদী জেলার সদর থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে রাসেল ও তার বাবা-মা সহ পরিবারের ছয়জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় রাসেল ১৩দিন কারাভোগের পরে জামিনে মুক্তি পায়। তবুও স্ত্রীকে ছেড়ে না দিয়ে মীমাংসা পাওয়ার আশায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর নরসিংদী শ্বশুরবাড়িতে আসার সময় তাদের লোকজন দ্বারা অপহৃত হন।
রাসেল কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, অপহরণের পর তার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে ওঠেন। ওরা টাকার জন্য পুরুষাঙ্গের ৬০ শতাংশ ম্যাচ লাইটার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। প্রায় দুই মাস চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও এখনও অনেক যন্ত্রণা হয়। তিনি অভিযুক্তদের গ্রেফতারে র্যাবকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রতারক চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
র্যাব জানায়, আটকদের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর থানায় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।