ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো জি-৭ সম্মেলন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তীব্র অস্থিরতা, আমাজনে আগুন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে গত শনিবার জি-সেভেন সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা। ফ্রান্সের সমুদ্রতীরবর্তী শহর বিয়ারিতজে ৩ দিন ধরে নানা প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনার মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে জি-সেভেনের ৪৫তম সম্মেলন। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড টাস্ক এই সম্মেলনকে রাজনৈতিক একতায় পৌঁছানোর সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো এবারের জি-সেভেনের শীর্ষ সম্মেলন। প্রতি বছরই বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্ব সম্মেলনে এসে গোলটেবিল বৈঠক করেন। এতে তারা অমীমাংসিত ও গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা ও ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকেন। এ বছর এতে যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্বাগতিক ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মানি চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, জাপানের প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে ও ইতালির পাওলো জেনটিলোনি। এবারের জি-সেভেন সম্মেলনের সবথেকে আলোচিত ইস্যু ছিল লাতিন আমেরিকার রেইনফরেস্ট আমাজনগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বনটির অন্তত ১০ হাজার স্থানে আগুন জ্বলছে। ফলে সামপ্রতিক সময়ে এ নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠে বিশ্ব। জি-সেভেনেও দেখা গেছে তার প্রভাব। একমাত্র আমাজন ইস্যুতেই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন বিশ্ব নেতারা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন প্রথম থেকেই আমাজনে আগুন নিয়ে ক্ষুব্ধ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সোমবার তিনি এ ইস্যুতে একমতে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সম্মেলন থেকে আমাজনে আগুন নেভাতে ও সেখানে পুনরায় বনায়নে আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে জি-সেভেন নেতারা। সম্মেলনে একে আন্তর্জাতিক সংকট হিসেবে আখ্যায়িত করেন ম্যাক্রন।
আমাজন নিয়ে আলোচনা একটি পর্যায়ে পৌঁছালেও অমীমাংসিত থেকে গেছে আলোচিত অন্য ইস্যুগুলো। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক শুরুর মুহূর্ত থেকেই অংশগ্রহণকারী দেশগুলো লৈঙ্গিক সমতার ওপর জোর দিতে থাকে। তবে এ আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। একাধিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সামরিকীকরণ ও বাণিজ্য ইস্যুগুলো ওঠে আসলেও তেমন ফলপ্রসূ হয়ে উঠেনি কোনোটিই।
তবে এবারের জি-সেভেন সম্মেলনের সবথেকে বড় চমক ছিল ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফের অংশগ্রহণ। জি-সেভেন সম্মেলনে প্রতি বছরই অন্য কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবার সে তালিকায় ছিল ইরান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, রুয়ান্ডা ও চিলি। সম্মেলনের শেষ দিনে সবাইকে অবাক করে ফ্রান্সের বিয়ারিতজে হাজির হন জাভাদ জারিফ। এ সময় তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এতে আলোচনা হয় পারমাণবিক সামরিকীকরণ নিয়ে। তবে তাতে বিস্মিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপও। এতে তিনি জানিয়েছেন, এত দ্রুত তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাননি।
এ ছাড়া ইমানুয়েল মাক্রনের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ পেয়ে বিয়ারিতজে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্মেলনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও চিলির নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও সম্মেলনের মূল অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও ডিজিটাল উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন তিনি। এর মধ্যে সবথেকে আলোচিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক নিয়ে। এ বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা। এতে ট্রাম্প কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের নিজেদের ইস্যু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে প্রয়োজনে তিনি মধ্যস্থতা করতে চান বলেও আগ্রহ প্রকাশ করেন ট্রামপ।এদিকে এবারের সম্মেলনে আবারো উত্তাপ ছড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে রাশিয়াকে ফের জি-সেভেনে যুক্ত করার দাবি তোলেন তিনি। নিজের দাবিতে নাছোড়বান্দা ট্রাম্পকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন উপস্থিত জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর নেতারা। তবে তারা সরাসরি এ দাবি নাকচ করে দেন। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করার পর রাশিয়াকে জি-এইট থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে জি-সেভেন নামে পরিচিত হয় জোটটি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাশিয়াকে পুনরায় এ জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে জোর চেষ্টা চালাতে থাকেন ট্রামপ। তারই অংশ হিসেবে এবারও সে দাবি তোলেন তিনি। তবে রাশিয়া উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাষ্ট্র নয় বলে দাবি করে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বেশিরভাগ সদস্য। এ দাবিতে ট্রামপকে সমর্থন দিয়েছে ইতালি।