ফিনিক্স পাখি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ 

Spread the love

 সরকারের ভুল ছিলআওয়ামী লীগের ভুল ছিল এবং গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। সমস্যার সঠিক মর্মার্থ উপলব্ধি করতে না পারা ছিলসরকারের সবচেয়ে বড় ভুল। এসবের ফলাফল হলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

এই সরকারের ভিত্তি  যাত্রারম্ভই হয়েছে মবের মধ্য দিয়ে। সেই মব ধীরে ধীরে মব জাস্টিসমব ট্রায়ালমব লিঞ্চিং হয়ে মাসকিলিং উন্নীত হয়েছে। যা চূড়ান্ত বিচারে এনার্কিজম বা নৈরাজ্যবাদ।

জুলাইআগস্ট ২০২৪ আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির দিকে দৃষ্টি দিলেই এটা স্পষ্ট হয়। এই আন্দোলনের অংশীজনদের রাজনৈতিকদর্শনপরামর্শকদের জীবনদর্শন এবং বিদেশী সমর্থকদের নীতি বিশ্লেষণ করলে নৈরাজ্যবাদের ভিত্তি আরও শক্তভাবে পাওয়াযায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোএই বাংলায় দুটি ভুল আন্দোলন সফল হবার নজির আছে। প্রথমটি ‘বঙ্গভঙ্গ রদ/বিরোধীআন্দোলন’ এবং দ্বিতীয়টি সরকারী চাকরিপ্রত্যাশীদের ‘কোটা আন্দোলন বলাবাহুল্যদুটিতেই প্রতিক্রিয়াশীলতা স্পষ্ট। অথচখালি চোখে মনে হবে দুটিই প্রগতিশীল আন্দোলনকিন্তু নাযতই ভেতরে যাই ততই মধু টাইপ প্রতিক্রিয়াশীলতার নিদর্শন স্পষ্টহয়। এটা বাঙালির দুর্ভাগ্য বটে!

এখন প্রশ্ন হলোএরকম নৈরাজ্যবাদী  প্রতিক্রিয়াশীল ভিত্তির ওপরে প্রতিষ্ঠিত সরকারের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করবেনসুশাসন আশা করবেনজনকল্যাণ প্রত্যাশা করবেনতারা গতকাল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেআগামীতে আওয়ামী লীগসহআরও অনেক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করবে। এটাই তাঁদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থান  পরিণতি। এটা যদি কেউ বুঝতে নাপারেনতাহলে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

যেখানে মুক্তিযুদ্ধকে এরা দুই পাকিস্তানের মুসলমানদের আচারিক দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেযেখানে ’৭২ এর সংবিধানকে নির্দিষ্ট অংশমুসলমানদের(মূলত জামায়াতমুসলিম লীগনেজামে সিওলামপিডিপিকেএসপি প্রভৃতিঅংশগ্রহণ ব্যতিরেকে বানানো মনেকরেনযেখানে অতীতের সকল রাজনৈতিক দর্শন  বয়ানকে তারা অস্বীকার করেনযেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জাতিরপিতা মানেন নাযেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলে প্রতিষ্ঠা করছেনযেখানে আওয়ামী লীগকে জার্মানির নাৎসীদলের সাথে তুলনা করেনসেখানে তাঁদের মতের সাথে অমিলের কথা বলা অবান্তর। এসবই তাঁদের ইঁচড়েপাকা চিন্তারবহিঃপ্রকাশ। এটুকু বুঝলে আর সরকারের সাথে আলোচনা বা দাবীদাওয়া জানানো কিংবা প্রতিবাদআহ্বান ইত্যাদির প্রয়োজননেই।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রাথমিক চেষ্টায় তারা পিছিয়ে গেলেও খুব শীঘ্রই নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় যাবে। চৌদ্দ দল্ভুক্তদলগুলোকেও নিষিদ্ধ করবে। এমনকি ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রগতিবাদী দলগুলোকেও নিষিদ্ধ করবে। নিশ্চিত থাকুনসময় পেলেএগুলো করবেই এবং এটাই তাঁদের রাজনৈতিক লাইন।

যুগে যুগে নৈরাজ্যবাদীদের হাতে দেশে দেশে প্রগতিশীলরা আক্রান্ত হয়েছে। প্রগতিশীলদের রাজনীতিকে তারা সন্ত্রাস বলে প্রচারকরে নিজেদের অপকর্মের স্বীকৃতি  ভিত্তি তৈরি করে। এজন্য মুখোশধারী কলমযোদ্ধাদের কাজে লাগায়। এটাই নিয়ম। মজারব্যাপারএসবই ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এটা অপ্রত্যাশিত কিছু না। এরকম এনার্কিস্ট বা নৈরাজ্যবাদীসরকারের কাছে এটাই স্বাভাবিক। বাংলা নামের দেশ প্রতিষ্ঠায় ছাত্রলীগের অবদানবাংলা নামক ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায়ছাত্রলীগের অবদানপ্রগতির পথে ছাত্রলীগের দীর্ঘ পথ হাঁটাছাত্রশিক্ষকের জন্য নিরাপদ বিদ্যায়তন নিশ্চিত করাছাত্রদেরন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকাধর্মজীবীধর্মবাদী  ধর্মাশ্রয়ী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের লড়াইশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ফান্ডামেন্ডালিস্ট মুক্ত রাখতে ছাত্রলীগের ভূমিকাসামরিক শাসন  স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এবংগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্রলীগের বিশাল আত্মত্যাগসবই নৈরাজ্যবাদী সরকারের কাছে অপরাধ বলে গণ্য হয়। হয়েছেও তাই। ফলেনিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবেই আসার কথাএসেছেও।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সাথেবিশেষ করে মফস্বল শহরের মানুষের সাথেকৃষক  শ্রমিকের সাথে এবংগৃহিণী নারীদের সাথে জুলাইআগস্ট আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই। উপরন্তু ছাত্রদের এক চতুর্থাংশের সমর্থিত আন্দোলন সরকারের ভুল পলিসি এবং বিশ্বমোড়লের আশীর্বাদপুষ্ট হলো অন্তর্বর্তী সরকার। যেটাকে বলা হয় ছাত্রসেনা অভ্যুত্থানেরসরকার। ফলে তারা জনবিচ্ছিন্ন অবস্থান থেকে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেই। এটাই তাঁদের একমাত্র রক্ষাকবচ। একদিন এইরক্ষাকবচ ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। সেদিন লম্ফঝম্ফ করা রাজনৈতিক ভাঁড়ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী  ভারাক্রান্ত বিশ্বমোড়লদেরলঞ্চও যাবে পঞ্চও যাবে।

হারিয়ে যাবার জন্য ছাত্রলীগের জন্ম হয়নিফিনিক্স পাখি হয়ে ফিরে আসবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে এবংছাত্রলীগের ইতিহাসে এটা একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। এই নিদারুণ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েচাপিয়ে দেয়া অন্যায় থেকেশিক্ষা নিয়ে দারুণ সূর্য হয়ে ফিরে আসবেএটাই প্রত্যাশা।

মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম 

Blogger, Digital creator and Human rights defenders


Spread the love

Leave a Reply