‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রাণচাঞ্চল্য, উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবার বাংলা নববর্ষের সাক্ষী হলো সবাই। ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে দেখা গেছে নতুনত্ব। যেন সকল ভয় বাধা পেরিয়ে এক নতুনের দিকে যাত্রা সকলের। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এবার মূল আকর্ষণ ছিলো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। অনেকে বলছেন, যা দেখতে অনেকখানি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে যায়।

সোমবার সকাল থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি ও চারুকলা এলাকায়। গানের তালে তালে নেচে-গেয়ে মেতেন ওঠে সকলে। অনেক শিশুরা এসেছে পিতার কাঁধে চড়ে। প্রেমিক যুগল হাঁটছেন একে অপরের হাত ধরে। সকলের পরনে নববর্ষ নির্দেশক রঙের কাপড়। লাল, হলুদ কিংবা সাদা শাড়িতে বর্ষবরণে এসেছেন নারীরা। বাদ যাননি পুরুষরাও, পরেছেন একই রঙের পাঞ্জাবি ও পায়জামা।

এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ ছিলো ‘ফ্যাসিবাদের মোটিফ’। গত শনিবার ভোরে ফ্যাসিবাদের মোটিফ পুড়িয়ে দেয় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ফলে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয় শোভাযাত্রার আয়োজন। কিন্তু শিল্পীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফের নির্মিত হয় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি। এই মুখাকৃতি নিয়েই পালিত হয় নববর্ষ। যদিও মোটিফে আগুন দেয়ায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছেন ওই ব্যক্তির সহপাঠীরা।

নববর্ষ চলছে আর তাতে নেই পান্তা ইলিশ, তা কী করে হয়! ঢাবির কলা ভবনের সামনে বটতলায় পান্তা ইলিশের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। পান্তা ইলিশের আয়োজনের সঙ্গে থাকে নাগরদোলা। ঢাবির সংগীত বিভাগের আয়োজনে পরিবেশিত হয় সংগীত। বটতলায় হওয়ার কথা রয়েছে নববর্ষের উদযাপন উপলক্ষে রম্যবিতর্কও।

এদিকে ঢাবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে স্টল দিতে দেখা গেছে ছাত্র অধিকার পরিষদকে। প্রায় চারটি স্টলে নববর্ষের আগত দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে হরেক রকমের খাবার। একই স্থানে দেখা গেছে বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের স্টলও। গান-বাজনার পাশাপাশি এসব স্টলে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতেও দেখা গেছে।

ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন ইসলাম বলেন, ‘এবারের নববর্ষ উদযাপন একটু অন্যরকম। এ রকম নববর্ষ উদযাপন আমরা ইতিপূর্বে দেখিনি। ফ্যাসিবাদের মোটিফ পুড়িয়ে দেয়ার পরও তা আবার নতুন করে তৈরি করে শোভাযাত্রায় আনতে পারার মধ্যেই সকলের আনন্দ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।’

আরেক শিক্ষার্থী সানজানা আরিফ বলেন, ‘এবার ক্যাম্পাস ভিন্ন রকম লাগছে। শোভাযাত্রা ভিন্ন রকম ছিল। আমি গত কয়েক বছরের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করিনি। তবে এবার অংশগ্রহণ করেছি।’

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষের অঙ্গীকার : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা না হারাই। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার”।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশবাসীকে নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আজকে সবাইকে আপন করে নেয়ার দিন। এবারের নববর্ষ, নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। আসুন, আমরা বিগত বছরগুলির গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি। চলুন, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব, বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। পুরো পৃথিবীতে যেখানে যেখানে বাঙালিরা আছেন আজ আমাদের সবার আনন্দের দিন, বর্ষ বরণের দিন।

পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীও চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষে এবার বড় পরিসরে উৎসব উদযাপন করছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।


Spread the love

Leave a Reply