ফ্রান্সে ‘অপমানিত’ লিওনেল মেসি কোথায় যাবেন – সৌদি আরব নাকি স্পেন?
ডেস্ক রিপোর্টঃবিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে পেতে ৪০ কোটি ইউরোর প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। বাংলাদেশি মুদ্রা সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলে এটাই হবে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের চুক্তি। আবারও লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে একই লিগে দেখা যেতে পারে।
রোনালদোকে বিশ্বকাপের পরপরই সৌদি আরবের আরেক ক্লাব আল নাসর ২০ কোটি ইউরোর বেশি দিয়ে দলে নিয়েছিল। মেসি যদি আল হিলালের চুক্তিতে রাজি হয়ে যান, তবে তিনি রোনালদোর দ্বিগুণ বেতন পাবেন সৌদি আরবে।
লিওনেল মেসি এখন ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়ে খেলছেন। চলতি বছরের ৩০শে জুন মেসির সাথে পিএসজির চুক্তি শেষ হবে, তখন মেসি হবেন ফ্রি এজেন্ট, অর্থাৎ কোনও ক্লাব ট্রান্সফার ফি ছাড়াই মেসিকে দলে টানতে পারবে।
পিএসজিতে কঠিন সময়
পিএসজি যদিও চাচ্ছে মেসিকে আরও এক মৌসুম ক্লাবে রাখতে। কিন্তু খেলাধুলা বিষয়ক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই স্পোর্টস বলছে, “লিওনেল মেসি ও পিএসজির সম্পর্ক সামনে এগুবে না বলেই মনে হচ্ছে।”
পিএসজি এখন একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, গত মাসে রেঁনের কাছে এরপর এপ্রিল মাসের তিন তারিখ লিঁওর বিপক্ষে হেরেছে পিএসজি।
যে ক্লাবে লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপের মতো ফুটবলার আছেন সেই ক্লাবের সমর্থকরা ঘরের মাটিতে এমন হার মেনে নিতে পারেননি।
পিএসজির স্টেডিয়াম পার্ক ডে প্রেন্সেসে লিওনেল মেসিকে উদ্দেশ্য করে বাঁশি বাজিয়েছে এবং দুয়ো দিয়েছে ফরাসী ক্লাবটির সমর্থকরা, যেটা ভালোভাবে নেননি সাবেক ফুটবলাররা।
মেসির সাবেক সতীর্থ ফরাসী ফুটবলার থিয়েরি ওঁরি মনে করেন, “ফুটবলের ভালোবাসার জন্যই মেসির উচিৎ বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়া। পার্কে যেটা হলো সেটা বিব্রতকর, আপনি আপনার সেরা ফুটবলারকে উদ্দেশ্য করে এভাবে বাঁশি বাজাতে পারেন না, যে কি না ১৩টি গোল ও ১৩টি এসিস্টও করেছেন।”
বিশ্বকাপ জয়ী একজন ফুটবলারের প্রতি এই আচরণকে ‘অপমানজনক’ বলছেন ওঁরি। ফ্রান্সের কিংবদন্তী এই ফরোয়ার্ড বলেন, তিনি মেসির ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলো তিনি ইউরোপে দেখতে চান, বিশেষত বার্সেলোনায়।
ওঁরি ও মেসি বার্সেলোনায় একসাথে খেলেছেন, ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছিলেন। “বার্সার জন্য মেসি যা করেছে এবং যেভাবে মেসি বার্সেলোনা ছেড়েছিল তা আমার একেবারেই ভালো লাগেনি”, বলেন ওঁরি।
লিওনেল মেসি পিএসজি যোগ দেয়ার পর ব্যালন ডি অর জিতেছেন, জিতেছেন বহুদিনের স্বপ্ন ফিফা বিশ্বকাপ। পিএসজির সমর্থকরা চাইছেন ক্লাবে সাফল্য, বিশেষত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে বাদ পড়ার পর মেসির সমালোচনায় মেতে উঠেছেন সমর্থকদের একটা অংশ।
বিশ্বকাপের পর পিএসজি সাতটি ম্যাচে হেরেছে। চলতি বছর মেসি ১৩ ম্যাচে ছয় গোল করেছেন।
তবে পিএসজি চাইছে এখন তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে একটা ফুটবল প্রকল্প দাঁড় করাতে, যেখানে সাময়িক সাফল্যের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যকেই বড় করে দেখা হবে।
ফুটবল বিশেষজ্ঞ কাভেহ সোলেকোল মনে করছেন, “এখন যে অবস্থা তাতে করে পথ আলাদা হলে মেসি ও পিএসজি দুই পক্ষের জন্যই ভালো।”
ফরাসী গণমাধ্যমেও মেসিকে নিয়ে নেতিবাচক খবর বের হচ্ছে কিছুদিন যাবৎ, ফ্রান্সের ফুটবল বিষয়ক শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম এল একুইপে ব্যানার হেডলাইনে এসেছে, ‘মেসি উধাও’।
এসব কিছুই ভালোভাবে নিচ্ছেন না লিওনেল মেসি ও তার পরিবার।
লিওনেল মেসির বাবা হোর্জে মেসি তার এজেন্ট হিসেবে আছেন। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে পিএসজির সাথে চুক্তি নবায়নের বিষয়ে আলাপ করেছিলেন। কিন্তু এখন এই চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা কমে আসছে।
মেসি বার্সেলোনায় ফিরবে?
লিওনেল মেসির চাওয়া তিনি শীর্ষ পর্যায়ের ইউরোপিয়ান ফুটবলে খেলা। বার্সেলোনা চাইছে তাদের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে আবারও দলে ফেরাতে। কিন্তু এখন লিওনেল মেসিকে দলে নেয়ার আর্থিক সামর্থ্য বার্সেলোনার আছে কি না সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।
স্প্যানিশ ফুটবল সাংবাদিক জেরার্ড রোমেরো এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, “বার্সেলোনা এখন পৃষ্ঠপোষক খুঁজছে, মেসিকে দলে নিতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, সেটা জোগাড় না করে কোনও প্রস্তাব দেবে না বার্সা।”
২০০০ সালে আর্জেন্টিনার নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ থেকে ১৩ বছর বয়সে বার্সার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন মেসি। সিনিয়র দলের হয়ে তার অভিষেক হয় ১৬ বছর বয়সে, ২০০৪ সালে।
বার্সেলোনায় লিওনেল মেসি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটিয়ে এসেছেন, সে সময় মেসির সতীর্থ ছিলেন জাভি হার্নান্দেজ, এখন তিনি বার্সেলোনার কোচ।
বার্সেলোনা মাঝে খারাপ সময় কাটালেও চলতি মৌসুমে লা লিগা জয়ের পথেই আছে।
বার্সেলোনা এখন স্পন্সর ও ইউরোপিয়ান ফুটবলের ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লের দিকে তাকিয়ে, লিওনেল মেসি সমর্থকরা এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
গত বছরের মে মাসে মেসির আমেরিকান ক্লাবে যাওয়ার খবরও বেরিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি।
লিওনেল মেসি আমেরিকায় গেলে মায়ামিতে থাকেন। লিওনেল মেসি যে আমেরিকা যেতে চান সেটা কখনোই গোপন ছিল না।
মায়ামির সৈকতে তার একটি বাড়ি আছে এবং তিনি আগেই বলেছেন ক্যারিয়ারের শেষ দিকে দুই বছর আমেরিকায় খেলতে চান।