বাংলাদেশে এমপিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা লজ্জাজনক !
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ নির্বাচিত সংসদ সদস্যের (এমপি) মধ্যে ১০৮ জনেরই আয়কর দেয়ার তথ্য নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও কর দেয়ার তথ্য নির্বাচনী হলফনামায় নেই। ফলে তাদের কর দেয়ার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে এসব তথ্য পেয়েছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
তবে কর দেয়ার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ৫৬ জন এমপি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট। এসএসসি পাস করেননি এমন এমপির সংখ্যা ১২ জন। এছাড়াও ৪ জন এমপির বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার নিচে। আর কোটি টাকার ওপরে সম্পদ রয়েছে তাদের সংখ্যা ২৪৪। এবারের সংসদেও ব্যবসায়ীদের আধিপত্য রয়েছে। প্রায় ৬২ শতাংশ এমপির পেশা ব্যবসা।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, কেমন এমপি পেলাম, এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তৈরির জন্যই হলফনামা যাচাই করেছে সুজন। এক্ষেত্রে অনেক এমপির কর দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এককথায় বলা যায়, তাদের কর দেয়ার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। নিয়ম অনুসারে কর দিলে প্রার্থীকে অবশ্যই হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করতে পারে।
সুজনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়া ২৯৮ জনের মধ্যে ১৮৮ জন কর দিয়েছেন। শতকরা হিসাবে যা ৬৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। এর মধ্যে মহাজোটের ১৮০ জন, ঐক্যফ্রন্টের ৫ এবং স্বতন্ত্র ৩ জন। আবার কর দেয়া এমপিদের মধ্যে ৫ হাজার টাকার কম কর দিয়েছেন এমন সংখ্যা ৭ জন। আর ১০ লাখ টাকার ওপরে কর দিয়েছেন এমন এমপির সংখ্যা ৫০ জন। সর্বোচ্চ কর দিয়েছেন ১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আবার ১ কোটি ১০ লাখ টাকা কর দিয়েছেন এমন এমপির সংখ্যা ১০০ জন। আর ১০৮ জন এমপির কর দেয়ার কোনো তথ্য নেই। কেউ কেউ ওই ঘরটি ফাঁকা রেখেছেন। কেউ রিটার্ন সার্টিফিকেট জমা দিলেও কর দিয়েছেন কি না, সেটি উল্লেখ নেই।
এবারের এমপিদের মধ্যে ৫ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ রয়েছে তাদের সংখ্যা ৯৪ জন। আর ১ থেকে ৫ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তাদের সংখ্যা ১৫০। অর্থাৎ ২৯৮ জন এমপির মধ্যে ২৪৪ জনেরই কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। শতকরা হিসাবে যা ৮১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে ২ জন এমপির ৫ লাখ টাকার নিচে সম্পদ রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্লেষণে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচিতদের মধ্যে ৪০ জন এমপি ঋণী। এর মধ্যে ২১ জনের ৫ কোটি টাকার ওপরে ঋণ রয়েছে। ১০ জনের ঋণ রয়েছে ১ থেকে ৫ কোটি টাকার মধ্যে। আর ঋণগৃহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার বেশি।
অস্বাভাবিক তথ্য রয়েছে এমপিদের আয়ে। হলফনামার তথ্য অনুসারে ৪ জন এমপি ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার নিচে। তাদের মাসিক আয় ১৬ হাজার টাকারও কম। ওইভাবে হিসাব করলে তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় পড়ে। ফলে এ বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আবার বছরে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করেন- এমন এমপির সংখ্যা ১৫ জন।
অন্যদিকে ৮০ জন এমপির বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকার ওপরে। জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, হলফনামার তথ্য যাচাই করা উচিত। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, অনেকে সঠিক তথ্য দেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি তদন্ত করতে পারে।
তবে এমপিদের মধ্যে পেশা হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ২৯৮ জনের মধ্যে ১৮২ জনের পেশা ব্যবসা। শতকরা হিসাবে যা ৬১ দশমিক ০৭ শতাংশ। একেবারে পিছিয়ে নেই কৃষকও। এবারের সংসদে কৃষক রয়েছেন ১৩ জন। অর্থাৎ কৃষকও এমপি হচ্ছেন। আইনজীবীর সংখ্যা ৩৮ এবং চাকরিজীবী ১৪ জন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, শিক্ষাগত যোগ্যতা।
এবার ১২ জন এমপির শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। মহাজোটে তাদের সংখ্যা ১১ জন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ১ জন। এছাড়া শুধু এসএসসি পাস করেছেন এমন এমপির সংখ্যা ৮। এইচএসসি পাস করেছেন, এমন এমপির সংখ্যা ৩৬ জন। অর্থাৎ ৫৬ জন এমপি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট। শতকরা হিসাবে যা ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২১ জন এমপির বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। – সৌজন্যেঃ যুগান্তর