বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের শরীর সেতুর ওপর চেয়ারম্যান

Spread the love

16174890_1202057473224999_4179266105828279130_nবাংলা সংলাপ ডেস্কঃদুই সারিতে স্কুল শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে মেলে দেয়া হাতের ওপর একজন শিক্ষার্থী শুয়ে আছে। আর তার পিঠের ওপর দিয়ে জুতো পায়ে হেটে যাচ্ছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। অন্যপাশে একজন শিক্ষার্থী হাত আর হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উবু হয়ে রয়েছে, যাতে তিনি তার পিঠের ওপর পা দিয়ে নামতে পারেন।

এই ছবিটি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আর সমালোচনার ঝড় তৈরি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায়।

মঙ্গলবার সেখানকার নীলকমল উছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছিল। সেই অনুষ্ঠানে আরো অনেক কিছু শরীর চর্চার মতো মানবদেহের পদ্মা সেতু তৈরি করে। আর সেই পদ্মা সেতু শরীরের ওপর দিয়ে হেটে যান হাইমচর উপজেলার চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী।

তবে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বিবিসিকে বলেন, ”প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা এরকম সেতু তৈরি করে থাকে এবং সেখানে অনেকবার প্রধান অতিথিকে হেটে যাবার অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগের প্রধান শিক্ষক হেঁটেছেন, একজন ইউএনও হেঁটেছেন এমন ছবি আছে। এবারও শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান হেটে যাওয়ার অনুরোধ করলে প্রথমে তিনি রাজি না হলেও, পরে রাজি হন।”

কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে অনেকে প্রকাশ করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

ফেসবুকে শাফিউদ্দিন আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, অমানবিক।

সাইফুর রাজা নামের একজন মন্তব্য করেছেন, এদের মতো নেতাদের জন্য অনেক ভালো ভালো নেতা আর জনপ্রতিনিধিরা লাঞ্ছিত হন।

শাহিনুর ইসলাম লিখেছেন, বিবেকহীন।

একজন লিখেছেন, আমরা যতই আধুনিক হচ্ছি, ততই আমাদের বিবেক, সততা আর মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে।

এ ধরণের ঘটনা স্কুলটিতে অনেকদিন ধরেই চলছে বলে জানিয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। এই ছবিটি ২০০১ সালেরএ ধরণের ঘটনা স্কুলটিতে অনেকদিন ধরেই চলছে বলে জানিয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। এই ছবিটি ২০০১ সালের

যোগাযোগ করা হলে হাইমচর উপজেলার চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারি বিবিসিকে বলেন, ”আমি ওই মানব সেতুতে উঠতে চাইনি। কিন্তু তারা বলে, এটা নাকি তাদের স্কুলের ঐতিহ্য। এমনকি তারা আমাকে জুতা খুলেও উঠতে দেয়নি, কারণ সেতুতে নাকি কেউ জুতা খুলে ওঠে না। এর আগেও নাকি অনেকে উঠেছে। পরে সম্মানী হিসাবে আমি পাঁচ হাজার টাকাও দিয়েছি।”

কিন্তু স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপর দিয়ে হেটে যাওয়াটা একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে কতটা ভালো হয়েছে, জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ”আমার বিবেক বাধা দিয়েছে। কিন্তু তাদের জোরাজুরির কারণে আমি বাধ্য হয়েছি।”

_93902584_facebook2তবে ফেসবুকে অনেকে শিক্ষার্থীদের শরীরের উপর জুতো পায়ে হাটার এই ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও শাস্তি দাবি করেছেন।

স্কুলটির একজন সাবেক শিক্ষার্থী হাসান দবির বিবিসিকে বলেন, ”অনেকদিন ধরে স্কুলে এটা চলছে। আমিও স্কুলটির ছাত্র থাকাকালে এ ধরণের ঘটনার শিকার হয়েছি। কিন্তু এটা বোঝার মত বয়স তখন আমাদের ছিল না। কিন্তু এখন বুঝতে পারি এটা কতটা অমানবিক। এটা আসলে স্কুল কমিটিকে খুশি করার জন্য করে। একজন শিক্ষর্থী আরেকজন শিক্ষর্থীর গায়ে উঠতে পারে। কিন্তু বয়স্কদের ক্ষেত্রে ওঠার এই পরম্পরা বন্ধ হওয়া উচিত।”


Spread the love

Leave a Reply