বাংলা সংলাপের অবিরাম এগিয়ে চলা
সাজু আহমদ
প্রিন্ট মিডিয়ার সবচেয়ে ক্লান্তিকাল চলছে সারা পৃথিবীতে।সাধারনত বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রিন্ট মিডিয়ার রসদ যোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু এখন বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রিন্ট মিডিয়া থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ইলেক্ট্রনিক ও সোসিয়াল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে । আর তারা পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে তাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে স্বর্ত জুড়ে দিচ্ছে । এসব বড় বড় কোম্পানিগুলো আবার বিভিন্ন দল ও মতের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকে ব্যবসাকে লাভবান করতে ,তাই এক্ষেত্রে সৎ সাংবাদিকতা করা খুবই দুরহ হয়ে যায়। তাই সম্প্রতি দেখবেন বিলেতে মূল ধারার শত বছরের পুরনো পত্রিকা গার্ডিয়ান প্রতিটি নিউজ কিংবা কলামের অনলাইন সংস্করনের পিছনে পাঠকদের অনুদান প্রদানের জন্য অনুরোধ করে সৎ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ।
ব্রিটেনের অন্যতম মূল ধারার পত্রিকা সৎ সাংবাদিকতার প্রতীক গার্ডিয়ানের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের কমিউনিটি ভিত্তিক ভিন দেশে বাংলা পত্রিকার কি অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয় ।
কয়েক বছর আগে বিলেতে বংলা পত্রিকা বের করার হিড়িক পড়ল আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে । এ সময় ইস্ট লন্ডন মসজিদের সামনে প্রায় ১৪/১৫টি পত্রিকা বিনামুল্যে সরবরাহ করা হত। এই পত্রিকাগুলো বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে প্রকাশিত হয়ে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধমের জোয়ারে আর কমিট্মেন্টের অভাবে তাসের ঘরের মতো হাওয়া হয় গেছে কয়েক বছরের মধ্যেই। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাও । এখনও যে ২/৩টি পত্রিকা বিনামুল্যে পাঠকদের কমিউনিটির মূল্যবান সংবাদ পৌছে দিচ্ছে সেগুলোর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলা সংলাপ। অন্য পত্রিকাগুলো বিভিন্ন ভাবে সাহায্য পেয়ে থাকলেও এই পত্রিকার একমাত্র সাহায্যদাতা পত্রিকাটির সম্পাদক মশাহিদ আলী। গত কয়েক বছরে ৭/৮টি পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলেও গত ৮ বছর ধরে অবিরাম গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলা সংলাপ এবং তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র পত্রিকাটির সম্পাদকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দৃঢ়চেতা আত্তপ্রত্যয়ী মনোভাবের কারনে ।আমি আশ্চর্ষ হয়ে দেখি একজন মানুষ একা একটি পত্রিকার নিউজ ,ডিজাইন ,বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে পত্রিকার রসদ জোগানোর সবচেয়ে কঠিন কাজটিও করেন এই সম্পাদক ।এই পত্রিকাটিই তার ধ্যান জ্ঞান ।
একা একটি পত্রিকাকে ৯ বছরে টেনে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ।এই অসম্ভব কঠিন কাজটি করেছেন পত্রিকাটির সম্পাদক । সকাল ১১টায় ফোন করেন অথবা রাত ৯টায় ফোন করেন সম্পাদক সাহেবকে তার টেবিলে পাবেন ঠিকই । অনেক সময় দেখা যায় অনেক বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তিনি সাহস করে নিউজ করে ফেলেন। যেটা অনেকে করতে তিনবার ভাবেন । পত্রিকার নিউজ, গেটআপ ও প্রথম পাতার ব্যাপারে কোন যুক্তি তুলে ধরলে তিনি মেনে নেন। এটা তার একটি বড় গুণ। এই পত্রিকাটি আরও যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে এটা আশা করি একজন পাঠক ও সাংবাদিক হিসেবে।
কিন্তু গত ২০ বছর ধরে খন্ডকালীন সাবাদিকতার অভিজ্ঞতায় সম্পাদকের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে বর্তমানে যেখানে আংগুল টিপে সারা বিশ্বের সব পত্রিকা হাতের মুঠোয় চলে আসে, সেখানে প্রিন্ট মিডিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাঠককে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। যারা বাংলা ভাষা , সংস্কৃতি এবং মন ও মননে বাংগালি তাদের সহযোগী করতে হবে, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে। আর এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বাংলা সংলাপ । বাংলা ভাষা সংস্কৃতি ও বাংলা প্রিন্ট মিডিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলি সকল সংকৃন্নতাকে পিছনে ফেলে । বাংলা সংলাপ এগিয়ে যাক অবিরাম গতিতে ,পৌঁছে যাক বিলেত সহ সকল বাংলাভাষী পাঠকের অন্তরে। সাথে সাথে বেঁচে থাক বিলেতের সকল প্রিন্ট মিডিয়া ।