বার্সার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ে ফাইনালে লিভারপুল
খেলাধূলা ডেস্ক: শুধু জিতলেই হতো না, গড়তে হতো ইতিহাস। তার উপর ম্যাচের আগে আক্রমণভাগের দুই তারকা মোহামেদ সালাহ ও রবের্তো ফিরমিনোকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় লিভারপুল। সে ধাক্কা কাটিয়ে দুর্দান্তভাবে জেগে উঠলো তারা। বার্সেলোনার জালে গোল উৎসব করে তুলে নিল অবিশ্বাস্য এক জয়। লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে গেল উদ্দীপ্ত ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা।
অ্যানফিল্ডে মঙ্গলবার রাতে শেষ চারের ফিরতি পর্বে ৪-০ গোলে জিতে দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে ফাইনালে ওঠে ‘অল রেড’ নামে পরিচিত দলটি। দুটি করে গোল করেন দিভোক ওরিগি ও জর্জিনিয়ো ভেইনালডাম। গত সপ্তাহে কাম্প নউয়ে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা।
অসাধ্য সাধনে করতে হবে চার গোল, অক্ষত রাখতে হবে নিজেদের জাল-কঠিন এ সমীকরণে খেলতে নামা লিভারপুল ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে গতিতে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ছিল। করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। অন্যদিকে, বার্সেলোনা ছিল ছন্নছাড়া। তাদের পরিকল্পনাহীন ফুটবলের মাঝে বাড়তি যোগ হয় ভুল পাসের ছড়াছড়ি। ছিল সুযোগ নষ্টের মহড়াও। সব মিলিয়ে আরও একবার নকআউট পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচে দিক হারালো মেসি-সুয়ারেসরা। আর অনেকেই যা ভাবেনি তাই করে দেখালো লিভারপুল।
দলটির স্বপ্ন যাত্রার শুরু সপ্তম মিনিটে। ডি-বক্সের মধ্যে একজনকে কাটিয়ে জর্ডান হেন্ডারসনের নেওয়া শট কোনোমতে ফেরান মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন, কিন্তু বিপদমুক্ত করতে পারেননি। আলগা বল গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে জালে পাঠান বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড দিভোক ওরিগি।
আক্রমণের ঝাপটা সামলে গুছিয়ে ওঠা বার্সেলোনা চতুর্দশ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায়। জর্দি আলবার কাটব্যাকে লিওনেল মেসির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক। তিন মিনিট পর ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে সময় নষ্ট করে সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করেন আর্জেন্টাইন তারকা।
খানিক পর ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে অতিথিদের। বিরতির ঠিক আগে ডান দিক থেকে মেসির দুর্দান্ত থ্রু পাস ডি-বক্সে পেয়ে শট নেন আলবা, দারুণ ক্ষিপ্রতায় হাত বাড়িয়ে রুখে দেন আগুয়ান গোলরক্ষক আলিসন।
দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে কর্নারে ভার্জিল ফন ডাইকের ব্যাক হিলে ভিতরে ঢুকতে যাওয়া বল গোললাইন থেকে ফেরান টের স্টেগেন। পরের মিনিটে মেসির রক্ষণচেরা পাস পেয়ে সুয়ারেসের নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক আলিসন।
প্রথমার্ধে ইংলিশ ডিফেন্ডার অ্যান্ড্রু রবার্টসন পায়ে ব্যথা পেলেও খেলা চালিয়ে যান। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাকে আর নামাননি কোচ। বদলি নামান জর্জিনিয়ো ভেইনালডামকে। ডাচ এই মিডফিল্ডারের নৈপুণ্যেই অবিশ্বাস্য জয়ের আশা জোরালো হয় লিভারপুলের।
৫৪তম মিনিটে ডান দিকে আলবার পা থেকে বল কেড়ে কিছুটা এগিয়ে ক্রস বাড়ান ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। বল একজনের পায়ে লেগে চলে যায় পেনাল্টি স্পটের কাছে। জোরালো নিচু শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ভেইনালডাম। এর দুই মিনিট পর বাঁ দিক থেকে সুইস মিডফিল্ডার জেরদান সাচিরির ক্রসে সবার উপরে লাফিয়ে হেডে পোস্ট ঘেঁষে জাল খুঁজে নেন ২৮ বছর বয়সী ভেইনালডাম।
দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-৩। কোণঠাসা হয়ে পড়া বার্সেলোনা শিবিরে জেগে ওঠে আরও একবার প্রথম লেগে বড় ব্যবধানে জয়ের পরও ছিটকে পড়ার শঙ্কা।
৭৯তম মিনিটে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের হতবাক করে দিয়ে স্কোরলাইন ৪-০ করেন ওরিগি। কর্নার পেয়েছিল লিভারপুল। গোলরক্ষক টের স্টেগেনসহ বার্সেলোনার রক্ষণভাগ তখনও ঠিক প্রস্তুত ছিল না, কিন্তু রেফারির বাঁশি শুনে আচমকা শট নেন অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড আর জোরালো শটে বল ঠিকানায় পাঠান ওরিগি।
বাকি সময়ে জ্বলে উঠবে কি, উল্টো যেন পুরোপুরি দিক হারিয়ে ফেলে বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষকে কোনো পরীক্ষাতেই ফেলতে পারেনি তারা। উল্টো চাপ ধরে রাখে লিভারপুল। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠে অ্যানফিল্ড।
এই নিয়ে শেষ ছয় মৌসুমে নকআউট পর্বে অ্যাওয়ে ম্যাচে হারল বার্সেলোনা। গত পাঁচ মৌসুমে তারা রোমা, পিএসজি, ইউভেন্তুস, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছিল।
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেষ চারের প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়লো লিভারপুল। ক্লাব পর্যায়ে ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার আগের সংস্করণে অবশ্য এমন কীর্তি আছে দুটি। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে গ্রিক ক্লাব পানাথিনাইকোস ও ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে বার্সেলোনা এই কীর্তি গড়েছিল।
আগামী ১ জুন মাদ্রিদের ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোতে হবে ফাইনাল। সেখানে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পার ও আয়াক্সের মধ্যে বিজয়ীদের মুখোমুখি হবে গতবারের রানার্সআপরা।