বিচারপতি শামসুদ্দনি চৌধুরীর আচরণ শোভনীয় নয়
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চিঠি পাঠানো শোভনীয় হয়নি। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালে এই বিচারপতি সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিকে আদালতে ডেকে এনে তাদের সাথে যে ধরনের আচরণ করেছেন, তাও শোভনীয় ছিল না।
গতকাল সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট ভবনে সভাপতির নিজ কে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একজন সংুব্ধ ব্যক্তি কোনো বিচারপতিকে অপসারণের জন্য তার বিরুদ্ধে আবেদন করতেই পারেন। কিন্তুএকজন আপিল বিভাগের বিচারপতির প থেকে প্রধান বিচারপতির অপসারণ চেয়ে আবেদন এই প্রথম। কোনো দেশের প্রধান বিচারপতির অপসারণের জন্য আবেদন শোভনীয় নয়। এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার বিচারপতি শামসুদ্দিনকে সংবর্ধনা দেবে না, তা মেজরিটির সিদ্ধান্ত। তবে আমার মতামতও তাদের (সুপ্রিম কোর্ট বার) পে রয়েছে।
খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হককেও আমরা সংবর্ধনা দেইনি। তিনি তা বুঝতে পেরে আগেই বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের প থেকে আমি সংবর্ধনা চাই না। এখন বিচারপতি শামসুদ্দিনকেও আইনজীবীরা সংবর্ধনা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে এই আচরণ থেকে অন্য সবাই শিা নেবেন।
খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, মতা জিনিসটা স্থায়ী না। ভয় রাখতে হয়। যে চেয়ারটায় তিনি আছেন, এই চেয়ারটা চিরদিনের জন্য নয়। সিনিয়র এই আইনজীবী আরো বলেন, আপিল বিভাগ এক রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একজনকে খালাস দিয়েছেন। অথচ রায়ের ১৩ মাস পরও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী তাতে স্বার করেননি। তিনি অনেকের রায়ে স্বার না করে বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগে ফেলছেন। হাইকোর্টে থাকতে দেয়া অনেক মামলার রায় এখনো লিখে শেষ করেননি। শামসুদ্দিন চৌধুরী অনেক মামলার জাজমেন্ট দেননি, তাই সেসব মামলার আসামিরা আপিল আবেদন করতে পারেননি।
এ দিকে গত রোববার সন্ধ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগে তার অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
সংবর্ধনা দেবে না সুপ্রিম কোর্ট বার : গত রোববার বিচারপতি শামসুদ্দিনকে সংবর্ধনা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট বার। আইনজীবীদের এক সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার পর থেকে তার বিভিন্ন কার্যকলাপে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও আদালতের ভাবমর্যাদা ুণœ হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট বার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর কারণে অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদ মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সুযোগ সুবিধা রা এবং উন্নয়নমূলক কাজের বিরোধিতা করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেছেন, বিচারপতি পদে শপথ নেয়ার সময় তিনি ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে শপথ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে, যা দুখঃজনক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তার ওই অনিয়মের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিচারপতি শামসুদ্দিনের বেতনভাতা ও পেনশন প্রদান না করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট বার। বিতর্কিত এই বিচারপতি তথ্য গোপন করে শপথ গ্রহণ করে দীর্ঘ দিন কার্যক্রম করা অনৈতিক ও বেআইনি মনে হওয়ায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারের প থেকে বিদায় সংবর্ধনা না দিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।