বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বিভেদ নয় চাই ঐক্য
সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী :
বিএনপি – জামায়াত দুটি পৃথক দল হলেও দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গি। সেই জোট সময়ের প্রয়োজনে ভেঙ্গে গেলেও আপাতত কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। দুটি দলই বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শেখ হাসিনা তার গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় অত্যন্ত সুচতুর ভাবে জোটবদ্ধ কোনো আন্দোলন জমাট বাঁধতে দেয় নি। Divide and Rule এর খেলা খেলে পক্ষগুলোকে আলাদা আলাদা শায়েস্তা করে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেছে।
আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে উঠা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এক দফার হাসিনা হঠাও আন্দোলনে পরিণত হয়। দেশের দল মত নির্বিশেষে আপামর জনতা একাট্টা হয়ে রাজপথে নেমে আসে। ফ্যাসিস্ট মাফিয়া হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় গত ৫ই আগস্ট।
হাসিনা পালিয়েছে ঠিকই। পালিয়েছে তার গুটি কয়েক লেসপেন্সার। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে ওর ছায়ায় বেড়ে উঠা সুবিধাভোগী পরজীবীরা ঠিকই মুখোশ পরিবর্তন করে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলেই বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে করছে বিভিন্ন কার্যকলাপ। মনে রাখবেন ওদের ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে পারলে প্রিয় মাতৃভূমি এবার অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে।
জুলাইয়ে দল মত জাতী ধর্ম নির্বেশেষে সবাই এক হতে পেরেছিলাম বলেই হাসিনার মাফিয়া চক্রকে পরাজিত করতে পেরেছিলাম। এখন ঐক্যবদ্ধভাবেই বিগত ১৫ বছরের জঞ্জাল দূরীকরণ, ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার কার্যকর করার কাজে সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ঐক্যবিনষ্টকারী সকল ধরণের কার্যক্রম থেকে জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের গুটিয়ে রাখতে হবে। আচরণে, কথাবার্তায় ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ পতিত স্বৈরাচার হাসিনা ও তার লেসপেন্সাররা। এই মুহুর্তে নিজেদের মধ্যে ক্লেদাক্ত প্রতিযোগিতা হবে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও হটকারিতা। এই কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি ও শক্তিক্ষয়ে লাভবান্ হচ্ছে পতিত বাকশালীরা।
এই যে আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান চমৎকার ভাষণ দিয়ে একটি স্বপ্নিল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন সেটা নিয়ে আমরা কয়জন কথা বলছি বা প্রচার করছি? মানুষ উনার স্বপ্নের বাংলাদেশ সম্পর্কে কিভাবে জানবে?
আমাদের একজন আপোষহীন নেত্রী আছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি বৃদ্ধ বয়সে প্রচন্ড নির্যাতন সহ্য করেছেন, জেলের মধ্যে ঢুকেছেন। তাও আপোষ করেন নি, পালিয়ে যাননি। আমাদের দলের অসাধারণ একজন প্রতিষ্ঠাতা আছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যার নামে তাঁর শত্রুরাও আজ পর্যন্ত এক পয়সার দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারে নি।
আমরা কি এগুলো নিয়ে কথা বলছি, আলোচনা করছি? না পড়ে আছি অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রোয়জনীয় বিবাদে? মনে রাখবেন, পরিবর্তীত বাংলাদেশে যে দল আগামীতে নেতৃত্ব দিবে তাদের নেতাকর্মীদের আরো অনেক বেশী মেধাবী, চৌকশ ও উদার মন মানসিকতার হতে হবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
আসুন বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের গান গাই। বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পেশি শক্তি নয় মেধার ভিত্তিতে একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
(লেখকঃ চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর ডেমক্রেসী এন্ড গুড গভর্নেন্স ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যুক্তরাজ্য যুবদল)