বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইন সার্ভিসে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ রেখে মেয়র জন বিগসের প্রথম বাজেট পাশ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ২০১০ সালের পর দ্বিতীয় কোন অধিবেশন ছাড়াই পাশ হয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ২০১৬/১৭ অর্থ বছরের বাজেট। বাজেটে বেশ কিছু ফ্রন্ট লাইন সার্ভিসে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে এডাব্ব কেয়ার, স্ট্রিট ক্লিনিং, এন্টি সোশাল বিহেভিয়ার দমন ইত্যাদি। বাড়ানো হয়েছে সামর্থ্যরে মধ্যে ঘরবাড়ী নির্মানে বরাদ্দ। এছাড়া ১৬ উর্দ্ধ উচ্চচ শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সাহায্যও অব্যাহত রাখা হয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস বাজেটকে ভারসাম্যপূর্ণ এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারী, বুধবার মালবারী প্লেসের কাউন্সিল অধিবেশনে লেবার মেয়র জন বিগস উত্থাপিত বাজেটটি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ হয়। প্রস্তাবিত বাজেটের পক্ষে ২৫ এবং বিপক্ষে ১৭ ভোট পড়ে। গত ২০১৫ সালের ১১ জুন নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এটি হচ্চেছ মেয়র জন বিগসের প্রথম বাজেট। একই সাথে ৬ বছর আগে টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়রাল পদ্ধতি চালু হওয়ার পর লেবার পার্টিরও প্রথম বাজেট। স্পিকার কাউন্সিলার আব্দুল মুকিত চুনু এমবিএ এর সভাপতিত্বে এই বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লেবার দলের কাউন্সিলার ছাড়াও ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ এবং টোরী দলের কাউন্সিলাররা উপস্থিত ছিলেন। কোন ধরনের সংশোধনী এবং দ্বিতীয় কোন কাউন্সিল মিটিং ছাড়াই প্রস্তাবিত বাজেটটি পাশ হওয়ায় মেয়র বিগস সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রমাণিত হলো টাওয়ার হ্যামলেটস সত্যিকার অর্থেই সামনে এগিয়ে যাচ্চেছ। মেয়র বিগস তার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, বাসিন্দাদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে এবারের বাজেট পেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সমস্যাকে সমাধান এবং টাউন হলে স্বচ্চছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। মেয়র বিগস বলেন, এবছরের বাজেট প্রণয়নে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো টোরি সরকারের ব্যাপক ব্যয় সংকোচন। আর একারনে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদেরকে ২০২০ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ৫৯ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ সাশ্রয় করতে হচ্চেছ। এর মধ্যে এ বছর করতে হচ্চেছ ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড। জন বিগস তার বাজেটকে দূরদর্শী বাজেট আখ্যায়িত করে বলেন, সাবেক মেয়র এই ৫৯ মিলিয়ন কাটকে বিল“িত করেছিলেন ভোট হারানোর ভয়ে। আরো আগে থেকে অল্প অল্প করে একে কমিয়ে আনা হলে এখন আমাদের উপর চাপ পড়তো না। তিনি মেয়র থাকলে তাকে ২০১৬/১৭ অর্থ বছরের জন্য ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড বাজেট কাট করতে হতো। গত বছরের বাজেটেই এই ২৫ মিলিয়ন কাটের প্রস্তাব তিনি করে গিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র জন বিগস ৮ মিলিয়ন কম কাটের প্রস্তাব করেছেন। মেয়র বলেন, বাজেটে অর্থ সাশ্রয়কালে ফ্রন্ট লাইন সার্ভিসগুলো যাতে অব্যাহত থাকে আমি এই চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি বেশ কিছু ফ্রন্টলাইন সার্ভিসে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছি। রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্চছন্নতা ও অসামাজিক কার্যকলাপ দমনে ১ মিলিয়ন এবং ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ ও ট্রিটমেন্টের জন্য ৪শ ৬৫ হাজার পাউন্ড অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে ক্লিন টিমের জন্য অতিরিক্ত ২শ হাজার পাউন্ড, ফ্লাই টিপ স্কোয়াড চালু এবং আগের মেয়রের আমলে চালুকৃত বড় ধরনের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য ১৫ পাউন্ড চার্জ বাতিল করেছি। এডাব্ব কেয়ার খাতে সেবার মান উন্নয়ন এবং কেয়ার ওয়ার্কদের বেতন বৃদ্ধির জন্য এথিক্যাল কেয়ার চার্টার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ রেখেছি। স্থানীয়ভাবে সোশাল কেয়ার এবং হোম কেয়ার খাতে ব্যয় বৃদ্ধি মোকাবেলায় ৫.৮ মিলিয়ন পাউন্ড বাজেট প্রেশারও মোকাবেলা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সত্যিকার অর্থে সামর্থ্যরে মধ্যে ঘরবাড়ী বানানোর জন্য এফোর্ডেবল হাউজিং কমিশন গঠন করেছি। এক হাজার কাউন্সিল হাউস বানানোর টার্গেটকে সামনে রেখে কাজ চলছে। রাইট টু বাই থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ষ্ক্রলোকাল অথরিটি গ্র্যান্টম্ব নামে বিশেষ একটি স্কিম চালু করেছি। এই স্কিমের অধীনে ইতিমধ্যে ৭ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা দিয়ে সামর্থ্যরে মধ্যে ৭০টি নতুন বাড়ী নির্মান করা সম্ভব হবে। এসব খাতে অর্থ বরাদ্দের সুফল বারার বাসিন্দারা অচিরেই ভোগ করতে শুরু করবেন বলে মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধির কারন ব্যাখ্যা করে মেয়র বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় তার নিজের ইচ্চছার বিরুদ্ধে এই ট্যাক্স বাড়াতে হয়েছে। আর বৃদ্ধি প্রাপ্ত ৩.৯৯% এর মধ্যে ২% বাধ্যতামূলকভাবে সরাসরি চলে যাবে এডাব্ব সোশাল কেয়ার খাতে। কারন কেন্দ্রীয় কনজারভেটিব সরকার এই খাতে বরাদ্দ বাতিল করে কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থ জোগানের জন্য কাউন্সিলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। বৃদ্ধি প্রাপ্ত বাকী ১.৯৯% ব্যয় হবে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য ফান্ডিং কাট এবং বিভিন্ন খরচ বৃদ্ধি মোকাবেলায়। তবে কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি পেলেও নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের কাউন্সিল ট্যাক্স বেনিফিট যথারীতি অব্যাহত থাকবে বলে মেয়র আশ্বস্থ করেন। মেয়র জানান, শুধু টাওয়ার হ্যামলেটস নয়, লন্ডনের প্রায় সব বারাতেই এই কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে হবে। রাজধানী লন্ডনের হ্যাকনী, নিউহাম, বার্কিং এন্ড ডেগেনহাম, লুইশাম, বেক্সলী, ব্রোমলী, রিচমন্ড ইত্যাদি বারাও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য যে, টাওয়ার হ্যামলেটসে একটি ব্যান্ড ডি প্রপার্টির কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি পাবে বছরে ১৬.৩৩ পাউন্ড। অর্থ্ ামাসে ১.৩৬ পাউন্ড। কাউন্সিলের দাফন সাবসিডি স্কিম বাতিল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এটি একটি সিরিয়াস ইস্যু। এবিষয়টিতে আমি অত্যন্ত সচেতন তথা সংবেদনশীল। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কেন্টের কেমনাল পার্কে ইতিমধ্যে মাব্বি ফেইথ কবরস্থান বিপুল অর্থব্যয়ে লিজ নিয়েছে। সেখানে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দারা বিশেষ সাবসিডিতে তাদের প্রিয়জনদের দাফন করা শুরু করেছেন। এর বাইরে দরিদ্রদের জন্য সরকারেরও একটি ষ্ক্রফিউনারেল পেমেন্ট স্কিম নামেম্ব বিশেষ সাবসিডি স্কিম রয়েছে। এটা অনেকেরই অজানা। আমরা বাসিন্দাদের এই সরকারী স্কিমের সুবিধা নেয়ার জন্য প্রচারনা চালাবো। এজন্য আর আলাদা করে টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবসিডি স্কিম চালু রাখা দরকার নেই। এতোদিন টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের দাফনের জন্য নিজস্ব কোন জায়গা ছিলোনা বলেই এই স্কিম চালু ছিলো। লেবার পার্টিই এটা চালু করেছিলো। মেয়র এ নিয়ে রাজনীতির নিন্দা জানান। মেয়র স্কুলের শিক্ষার্থীদের গরসফিহ্ব স্কুল ট্রিপ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে যে প্রচারনা চালানো হচ্চেছ এরও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, এই স্কুল ট্রিপের খরচ সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুলগুলোকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই খরচ তাদের নিজস্ব বাজেট থেকে ম্যানেজ করতে বলা হয়েছে। কারন প্রত্যেক স্কুলই সরকার থেকে বিভিন্ন অনুদান পেয়ে থাকে। অনুরুপভাবে স্কুল ক্রসিং পেট্রোলের খরচও স্কুলগুলোকে তাদের নিজস্ব বাজেট থেকে ম্যানেজ করতে বলা হয়েছে। বয়ষ্কদের ষ্ক্রইনকনটিনেন্স লন্ড্রি সার্ভিসম্ব বন্ধ করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা এখানে বহুল ব্যবহৃত সার্ভিস নয়। টাওয়ার হ্যামলেটসে গত বছর মাত্র ২০ জন বাসিন্দা এই সেবা গ্রহন করেন। এই সেবা অব্যাহত রাখতে দুম্বজন স্থায়ী স্টাফ এবং গাড়ী ও ড্রাইভারের প্রয়োজন হয়। এটা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। এখন থেকে যারা এই সার্ভিস গ্রহন করবেন তাদের অন্য অপশন রয়েছে। পারসোনাল এলাউন্স থেকে তারা এই খরচ বহন করতে পারবেন। এছাড়া এনএইচএসও এই সেবা ফ্রি দিয়ে থাকে। ১০ জন এনফোর্সমেন্ট অফিসার প্রত্যাহার করা হয়েছে – এই প্রচারনাও সত্য নয় বলে মেয়র জানান। বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ৫৮ জন এই কাজ করেন। এখন থেকে ৪৮ জন অফিসার ষ্ক্রজেনিরিক ওয়ার্কিং প্র্যাকটিসেরম্ব অধীনে কোন ধরনের গ্রুপিং ছাড়াই সকল কাজ করবেন। এতে করে বাসিন্দারা আরো বেশী সেবা পাবেন। এতোদিন এক বিভাগের কাজ আরেক বিভাগ করতো না। কাউন্সিল এই খাত থেকে ৪শ ৫১ হাজার পাউন্ড বাঁচিয়ে অন্যান্য ফ্রন্ট লাইন সার্ভিসে ব্যবহার করবে বলে মেয়র জানান।