বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রীকে মারধরের ঘটনায় নিন্দার ঝড়
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক প্রবাসীকে এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সদস্যদের মারধরের ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। যাত্রী ও দর্শনার্থীদের মারধর ও দুর্ব্যবহারে বিমানবন্দরের সেবা নিয়েই যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছে।
গত ৮ জানুয়ারি নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরে এভসেকের সদস্যরা কথা কাটাকাটির জের ধরে মারধর করে মুখ ও মাথা জখম করে ফেলে। পরে ওই যাত্রীকে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক সুফিয়ানের কাছে হাজির করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা পরিশোধ শেষে ওই যাত্রী মুক্তি পান। যাত্রীদের এ ধরনের হয়রানির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এবং মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। বর্তমানে ওই কমিটি কাজও শুরু করেছে।
বিমানবন্দরে মারপিটের শিকার নরওয়ের নাগরিক সাঈদ উদ্দিনের পিতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার ছেলের ওপর হামলার ঘটনায় দেশে বিচার না পেলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অভিযোগ করব। আমি, আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, আমার ছেলে মহিউদ্দীন, সাঈদ উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাত আরা আমরা সবাই নরওয়ের নাগরিক। আমরা দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঢাকায় অবতরণ করি। আমরা আমাদের ইমিগ্রেশন শেষ করে বাহিরে আসি। আমি খেয়াল করে দেখি আমার ছোট ছেলে সাঈদ নাই। পরে ভেতরে দেখি সেও আসতেছে। এরপর গেটে ডানপাশে দাঁড়ালে নিরাপত্তা কর্মী (এভসেক সদস্য) আমাকে বলে ‘ওই মিয়া এখানে দাঁড়িয়েছেন কেন? সরে দাঁড়ান।’ তখন আমি তারে বলি এই কথা আপনি ভালো করেই বললেই তো হতো। আমরা শুনছি বিমানবন্দর আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। লোকজনও প্রবাসীদের স্যার ডাকে। আপনি এ রকম আচরণ করছেন কেন? এ কথা বলার পর সে আমাকে ধাক্কা দেয়। এই অবস্থায় আমার ছোট ছেলে চলে আসে। এ সময় আমার গায়ে হাত দেয়া দেখে সে রাগান্বিত হয়। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে তারা সবাই মিলে আমার সামনেই আমার ছেলেকে ধরে মারপিট করে।
তিনি বলেন, বাবার সামনে ছেলেকে রক্তাক্ত দেখা এটা বাবার জন্য অনেক কষ্টের।
আসলাম হোসেন নামের এক যাত্রীর স্বজন বলেন, এক প্রবাসীকে মারধরের ঘটনা ফেসবুকে দেখেছি। যেভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছে তাতে করে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, প্রবাসী যাত্রীরা বিমানবন্দরে আসার পর দ্রুত আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছটফট করে। তাদের ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। এ কারণে এভাবে মারধর করাটা কতটা যৌক্তিক।
এদিকে নরওয়ে প্রবাসীকে মারধর ও হেনস্থার ঘটনায় বিবৃতি দেয় লন্ডন কানেক্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল (সিবিআই) ইউকে। সংগঠনটির পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত এ ঘটনা প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সিবিআইইউকে বাংলাদেশ সরকারকে এই ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে এ ঘটনায় সরকারকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের শারীরিক-মানসিক আঘাতের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও আহ্বান জানায়।
অন্যদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত শনিবার বেবিচক চেয়ারম্যান বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। তিনি যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়াও বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সেবার মান আরও উন্নত করার
নির্দেশ দেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, আমরা বিমানবন্দরের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন যে সংখ্যায় যাত্রী ও তাদের স্বজনরা বিমানবন্দরে আসেন তাতে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পুরো বিমানবন্দর যাত্রীবান্ধব। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গেই যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে।