বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতিঃ চোখের সামনেই টুকরো হয়ে যাচ্ছে ইউরোপ

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ২১টি দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা সতর্ক করেছেন, ইউরোপে উদারবাদী মূল্যবোধ ১৯৩০ এর দশকের পর থেকে এবার সবচেয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিটের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীদের উত্থানের কারণে এ চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এক বিবৃতিতে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্বের ৩০ জন লেখক, ইতিহাসবিদ ও নোবেলজয়ী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে ওই বিবৃতিটি প্রকাশ হয়েছে। ওই বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, চিন্তার ধারক ইউরোপ ‘আমাদের চোখের সামনেই টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে’। জনতোষণবাদের উত্থান নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

এ বছর ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসা) সম্পন্ন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। আর আগামী ২৩ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় নির্বাচন। ইউরোপ সংশ্লিষ্ট বড় এ দুই ঘটনাকে সামনে রেখে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবীরা। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ফরাসি দার্শনিক বার্নার্ড হেনরি লেভি ৮০০ শব্দবিশিষ্ট ওই বিবৃতিটির খসড়া করেছেন। এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন-ঔপন্যাসিক ইয়ান ম্যাকওয়ান ও সালমান রুশদি, ইতিহাসবিদ সাইমন শামা এবং নোবেল পুরস্কারজয়ী সভেতলানা অ্যালেক্সিভিচ, হেরটা মুলার, অরহান পামুক ও এলফ্রিডে জেলিনেক।

বিবৃতিতে জনতোষণবাদের উত্থান ঠেকাতে প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে, জনতোষণবাদ না ঠেকাতে পারলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় নির্বাচন ‘সবচেয়ে বিপর্যয়পূর্ণ’ হবে। জনতোষণবাদ নিয়ে সতর্ক করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এখন আমাদেরকে অবশ্যই ইউরোপ হতে হবে নয়তো জনতোষণবাদের জোয়ারে ভেসে যেতে হবে। আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকতাকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে; নয়তো এর অসন্তোষ, বিদ্বেষ গ্রহণ করতে হবে এবং এগুলোর কষ্টের ছায়া আমাদেরকে ঘিরে ধরবে।’

সালমান রুশদি গার্ডিয়ানকে বলেন: ‘গত ৭০ বছরের যেকোনও সময়ের চেয়ে ইউরোপ এখন সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে। আর কেউ যদি সে ধারণায় বিশ্বাসী হয়, তবে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। আমি আশা করি দ্বিতীয় গণভোট আহ্বান করার মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সাহস আছে। ব্রেক্সিটের বিপর্যয় থেকে তা দেশকে বাঁচাতে পারতো। পাশাপাশি ইইউকে উদ্ধারের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারতো।’

ম্যাকেওয়ান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ‘খুব হতাশা’য় আছেন। আর সেকারণেই ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ‘যুগের ধারা বদলানোর আশাবাদ ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’ বলেন, ম্যাকেওয়ান।

পামুক বলেন, ইউরোপের ধারণা অ-পশ্চিমা দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ‘আমি বিশ্বের যে অংশে বাস করি সেখানে ইউরোপের ধারণা ব্যতীত স্বাধীনতা, নারী অধিকার, গণতন্ত্র ও সাম্যের সুরক্ষা দেওয়াটা কঠিন। ইউরোপের ঐতিহাসিক সফলতার মধ্য দিয়ে এসব চিন্তাধারা ও মূল্যবোধের সুরক্ষা দেওয়ার কাজ সহজ হয়েছে। আর বিশ্বজুড়ে মানবতার ক্ষেত্রে এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ব্রিটেন অংশ নেবে না। পর্যবেক্ষকদের অনেকে আভাস দিয়েছেন, এ নির্বাচনে জনতোষণবাদী, জাতীয়তাবাদী ও অভিবাসনবিরোধী দলগুলোর জন্য সমর্থন বাড়বে। এদের অনেকেই জাতীয় নির্বাচনে তাৎপর্যপূর্ণ সফলতা পেয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে ইউরোপের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসা মধ্য ডানপন্থী ও মধ্য বামপন্থী দলগুলো পিছু হটায় এমনটা সম্ভব হয়েছে।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন, নির্বাচন হলো ‘উদারবাদী গণতন্ত্র’কে বিদায় জানানোর সুযোগ। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ইউরো-সংশয়বাদীরা সরে যেতে চাইলেও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই ইইউ ছাড়তে চায় না। বরং এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় তারা।


Spread the love

Leave a Reply