বৃটিশ নারী এমপিদের যৌন নির্যাতনের কাহিনী
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃযৌন হয়রানি ও অবমাননা নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন বৃটেনের কয়েকজন নারী রাজনীতিক। তাদের অনেকে বর্তমানে পার্লামেন্ট সদস্য। হলিউড প্রযোজক হারভে উইন্সটেনের যৌন কেলেঙ্কারির খবর সারা দুনিয়ায় রটে যাওয়ার পর সম্প্রতি ‘# মি টু’ হ্যাসট্যাগ চালু হয়। এতে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য নারী তাদের নীরবতা ভেঙেছেন। প্রকাশ্যে বলেছেন তাদের ওপর যৌন নির্যাতনের কথা। সর্বশেষ বৃটেনের ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ ও বিরোধী লেবার দলের নারী এমপিদের কয়েকজন এ প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে যারা এন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে মুখ খুলতে উৎসাহিত করছেন তারা। লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যেসব নারী এমপি এ নিয়ে মুখ খুলেছেন তার মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ দলের তেরেসা ভিলিয়ার্স, ব্যারোনেস অ্যান জেনকিন, বিরোধী লেবার দলের জেস ফিলিপস, মেরি ক্রেয়াহ্। এর আগে এমন সব অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছিলেন এমপি মারিয়া মিলার। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া অভিজ্ঝতা শেয়ার করেছেন সমতা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ডন বাটলার। এতে বার্মিংহাম ইয়ার্ডলির এমপি জেস ফিলিপস বলেছেন তিনি কিভাবে তার বসের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। তখন ২০ এর কোটায় বয়স তার। তিনি কাজ করতেন একটি বারে। ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেছেন, আমি তখন একটি বারে কাজ করতাম। মনে আছে, একটি পার্টিতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে একজনের বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে ছিলেন আমার বস। ওই বাসায় একটি সোফার ওপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি আমি। যখন আমার ঘুম ভাঙে দেখতে পাই তিনি (আমার বস) আমার বেল্ট খুলছেন। আমার ট্রাউজারের ভিতরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। এ সময় আতঙ্কে আমার পুরো শরীর যেন অবস হয়ে যায়। তিনি ছিলেন আমার চেয়ে অনেক বড়। হতে পারে ২৫ বছরের বড়। এমন সময় ওই রুমে কেউ একজন এলেন এবং আমার শরীরের ওপর থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলেন। পরের দিন কাজে গেলাম। কিন্তু বিষয়টি মেনে নেয়া খুব কঠিন ছিল। ওই ঘটনার পর এমনটা ঘটতেই থাকলো। তাই অন্য নারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বেশির ভাগ নারীকে বলছিÑ আপনারা আপনাদের ফেলে আসা অতীতের দিকে তাকান। হয়তো বলবেন- আমি পুলিশকে জানাতে চেয়েছিলাম। আমি জানি কর্মক্ষেত্রে এমন যৌন সহিংসতার শিকার যারা তারা এ অভিযোগ করতে পারেন না নানা কারণে। এমপি জেস ফিলিপস আরো একটি যৌন নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তখন তার বয়স ১৯ কিংবা ২০। ফ্রান্সের একটি বারে প্রবেশ করেন তিনি। একজন পুরুষ সেখানে তার তার শরীর হাতড়াতে থাকে। জেস ফিলিপের ভাষায়, একদল যুবক আমাদের সঙ্গে কথা বলছিল এবং নোংরা আচরণ করছিল। আমাদের সবারই বয়ফ্রেন্ড ছিল। আমরা তাই তাদেরকে বলেছিলাম, তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এ সময়ে তাদের একজন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমাকে একটি দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরলো। শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলো স্পর্শ করলো। আম তার মুখের ওপর ঠাস করে থাপড় বসিয়ে দিলাম। আমি বয়সে তার চেয়ে বড় ছিলাম। আমার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। আমি ওই বার থেকে বেরিয়ে এলাম। আমরা বেরিয়ে যেতেই ওই যুবকদল হাসতে লাগালো আমাদেরকে নিয়ে। এটা প্রকৃত একটি যৌন হয়রানি। এমপি মেরি ক্রেয়াহ্ বলেন, তার বয়স তখন সবেমাত্র ৭ বছর। তিনি প্রাইমারি স্কুলের খেলার মাঠে খেলছিলেন। সেখানেই তিনি যৌন হামলার শিকার হন। তার ভাষায়, চুমু দেয়ার এক খেলার সময় আমার আন্ডারওয়্যার টেনে ছিড়ে ফেলা হলো। ১২ টি বালক আমাকে যৌন হয়রান করেছিল। আমার চেয়ে তাদের বয়স বেশি ছিল। ১০ থেকে ১১ বছরের বড় তারা। এছাড়া স্থানীয় একজন যাজকও তার শরীর স্পর্ষ করেছেন। বাসায় পৌঁছে দেয়ার সময় একজন শিক্ষকও তাকে চুমু দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এমপি মেরি ক্রেয়াহ্ বলেন, আমার প্রজন্মের ও তার চেয়ে সিনিয়র অনেক নারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, চার্চে, স্কুলে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে এমপি তেরেসা ভিলিয়ার্স বলেন, কনজার্ভেটিভ পার্টির একটি অনুষ্ঠানে তাকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করা হয়েছিল। গত শতাব্দীর শেষের দিকের এক ঘটনার কথা বলেন তিনি। তার ভাষায়, তখন আমি ইউরোপিয়ান নির্বাচনের প্রার্থী ছিলাম। যোগ দিয়েছিলাম কনজার্ভেটিভ দলের একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে বক্তব্য দিয়ে রাতে বের হওয়ার সময় আমি অনুভব করলাম কতগুলো লোলুপ হাত। এর মধ্যে ছিল আয়োজকদের একজনের হাতও। অন্যদিকে ব্যারোনেস জেনকিন বলেন, তিনি যখন তরুণ একজন মন্ত্রী হিসেবে বৃটিশ পার্লামেন্টে প্রথম কাজ শুরু করেন তখন একজন এমপি তার কাঁধ স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় জেনকিন চালাচ্ছিলেন গাড়ি। তার ভাষায়, পুরো যাত্রাপথে আমি ছিলাম বিচলিত। পুরুষরা সব সময়ই আপনাকে হিট করার চেষ্টা করে।