বৃটেনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম সমকামী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন বাংলাদেশী জাহেদ চৌধুরী
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃবাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ জাহেদ চৌধুরী (২৪) সমকামী বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। দু’বছরের জানাশোনার পর তিনি বিয়ে করলেন বৃটিশ নাগরিক সিন রোগানকে (১৯)। এর মধ্য দিয়ে বৃটেনে প্রথম কোনো মুসলিম প্রকাশ্যে সমকামী সম্পর্কের স্বীকৃতি দিলেন। জীবনসঙ্গীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করলেন। জাহেদকে সিন রোগান কথা দিয়েছেন তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। ওয়ালসাল রেজিস্ট্রি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ সময় দু’জনের পরনেই ছিল বাংলাদেশী প্রচলিত রীতির বিয়ের পোশাক। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজন। এর মধ্যে ছিলেন জাহেদ চৌধুরীর মা, বোন, বড়ভাই, কাজিন। অন্যদিকে সিন রোগানের পরিবার থেকে উপস্থিত ছিলেন তার মা, দুই বোন, বড়ভাই। এ ছাড়া আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাদের একান্ত ঘনিষ্ঠ দু’চারজনকে। বিয়ের পর এ দম্পতি হানিমুন করতে স্পেন চাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, জাহেদ চৌধুরীর সমকামী সম্পর্কের খবর তার পরিবার জানতে পেরে তাকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিল হজ করতে। সে হজ করে এসেছে। কিন্তু তার যৌন জীবনের আকাঙ্খা রয়েই গেছে। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা তার ওপর ছিলেন বিরক্ত। জাহেদ নিজেকে অসহায় বোধ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বীতশ্রদ্ধ জাহেদ আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। আত্মহত্যার আগে তিনি ডারলাসটনে একটি বেঞ্চের ওপর বসে কাঁদছিলেন। এমন সময় সেখানে আগমন ঘটে সিন রোগানের। জাহেদকে কাঁদতে দেখে তিনি তাকে সান্তনা দেন। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে ভাব জমে ওঠে। জাহেদের বেদনার কথা বুঝতে পারেন সিন রোগান। এরপরই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়তে থাকে। এ সবই দু’বছর আগের কথা। তাদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। একবার দু’বার নয়, অনেকবার তাদেরকে এমন হুমকি দেয়া হয়েছে। তাই তারা কোনো আড়ম্বরতা ছাড়াই ওয়ালসাল রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নিলেন। জাহেদ চৌধুরী বর। সিন রোগান কনে। বিয়ের সময় তারা মুসলিম রীতি অনুসরণ করেন। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়েছে, জাহেদ চৌধুরীর পিতামাতা বাংলাদেশী। বাসায় রয়েছে তার আরো তিন ভাইবোন। কিন্তু তাদের ছেড়ে তিনি এখন ‘স্ত্রী’ সিন রোগানকে নিয়ে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সে বিষয়ে জাহেদ চৌধুরী বলেছেন, ডারলাসটনে দু’বছর আগে একটি বেঞ্চের ওপর বসে আমি কাঁদছিলাম। এমন সময় আমার কাছে এসে দাঁড়ালো সিন রোগান। সে আমার কাছে জানতে চাইলো আমি ঠিক আছি কিনা। আমি তাকে সব বলার পর সে আমাকে আশা দিল। আমাকে বাঁচার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করলো। আমার সব বেদনা বুঝে নিল সে। আমি এর আগে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলাম। কখনো ফুটবল পছন্দ করতাম না। টিভিতে ফ্যাশন শো দেখতে পছন্দ করতাম। আমার মনে হতো আমি কোনো একটি বৃত্তে আটকা পড়ছি। স্কুলেও সেই একই অবস্থা। সবাই আমার থেকে দূরে থাকে। সবাই আমাকে নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলে। আমার ভাষা নিয়ে তিরস্কার করে। ডেইলি মেইল লিখেছে, তার যৌন আচরণ পাল্টাতে এক সময় তাকে একজন মেয়ে বন্ধু দেয়া হয়। তার সামাজিক পরিম-ল পাল্টে দেয়া হয়। তাকে মেডিকেশন দেয়া হয়। এমন কি তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয় ওমরাহ করতে। তাকে পাঠানো হয় পিতৃপুরুষের দেশ বাংলাদেশে। জাহেদ চৌধুরীর মতে, এর কিছুতেই তার স্বভাবের পরিবর্তন হয় নি। উল্টো রাস্তায় সমগোত্রের লোকজন তাকে অপমাণ করতো। তার বাসার সামনে ফেলে যেতো ময়লা আবর্জনা। অন্য মুসলিম বালকরা তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করতো। এমন সব অবস্থায় জাহেদ চৌধুরী আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জাহেদ চৌধুরী বলেছে, মুসলিম বালকরা আমার ওপর ভীষণভাবে হামলা চালাতো। তাই আমি আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় সিন রোগানের সঙ্গে সাক্ষাত আমার। এক সপ্তাহের মধ্যে হাউজিং এসোসিয়েশন আমাদেরকে থাকার জন্য একটি বাড়ি দিয়েছে। তারপর থেকে আমরা দু’জনে একসঙ্গে সেখানেই অবস্থান করছি। আমি গত জুনে সিনের জন্মদিনে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব করি। জাহেদ চৌধুরী বলেছেন, তার মা সব সময়ই তাকে সমর্থন দিয়েছেন। তার ভাষায়, মা না হলে আমি আজ এখানে থাকতাম না। আমাদের দু’পরিবার এখানে একত্রিত হয়েছি। এটা আমার কাছে ভীষণ সুখকর। জাহেদ চৌধুরী বলেন, আমরা বিয়ের দিন বাংলাদেশী বিয়ের পোশাক পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সিনকে বলেছি, বাংলাদেশে মুসলিমরা যে পোশাকে বিয়ে করেন আমরাও সেই একই পোশাক পরবো। এতে রাজি হয়ে যায় সিন। এ ছাড়া সিন রোগান ইসলাম গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করছেন। আমি তাকে বলেছি, সে কি আমার সঙ্গে থাকবে কিনা। সে বলেছে, প্রার্থনার জন্য সে যেকোনো জায়গায় যেতে চায়।