বৃটেন থেকে ১০০০ কোটি পাউন্ডে ৪৮ যুদ্ধবিমান কিনছে সৌদি
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃবৃটেনের কাছ থেকে ৪৮টি টাইফুন যুদ্ধবিমান কিনবে সৌদি আরব। এ বিষয়ে বৃটিশ সরকারের সঙ্গে তারা অস্থায়ী একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের তিন দিনের বৃটেন সফরের শেষ দিনে এই চুক্তি হয়। যদি চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপ পায় তাহলে তা হবে বৃটেনের বহুজাতিক প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও মহাকাশ বিষয়ক কোম্পানি বিএই সিস্টেমের জন্য এক বড় সুখবর। বৃটেনে এ কোম্পানিতে কাজ করেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। এখন প্রশ্ন সেখানে নয়।
প্রশ্ন হলো ইয়েমেনে সৌদি আরবের বোমা হামলায় রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঊষর জমিন। সেখানে নিহত হচ্ছেন অসংখ্য বেসামরিক মানুষ। দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সঙ্কট। ফলে এ সময়ে বৃটেনের সঙ্গে এমন যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা তুঙ্গে উঠতে পারে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করে বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। তিনি আরো বলেন, আমরা টাইফুন যুদ্ধবিমান বিষয়ে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের চূড়ান্ত দফার দিকে অগ্রসর হয়েছি। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের মহাকাশবিষয়ক অপ্রতিদ্বন্দ্বি প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ঘটবে এবং কর্মতৎপরতাও বৃদ্ধি পাবে। গত অক্টোবরে বিএই ঘোষণা করে, আগামী তিন বছরের মধ্যে তাদের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪০০ মানুষকে ছাঁটাই দেয়া হবে। এর কারণ, টাইফুন উৎপাদনে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ফলে এখন যে নতুন চুক্তিটি হয়েছে তার মূল্যমান ১০০০ কোটি পাউন্ড। এত বিশাল অর্থের সংস্থান আসায় এই প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। ওই চুক্তির পর বিএই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চার্লস উডবার্ন বলেছেন, প্রথম দফায় যে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গাতার দিকে অগ্রসর হবে। অন্যদিকে তার কোম্পানি ডিসেম্বরে কাতারের হাতে হস্তান্তর করবে ২৪টি যুদ্ধবিমান। এ জন্য কাতারের সঙ্গে রয়েছে ৫০০ কোটি পাউন্ডের চুক্তি। চার্লস উডবার্ন বলেন, সৌদি আরবকে সমর্থন দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, তারা তাদের সেনাবাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করতে চাইছে। তাদের যে ভিশন ২০৩০ রয়েছে তা অর্জনের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। উল্লেখ্য, খুব বেশি সময় হয় নি সৌদি আরবের ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে এসেছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালম। এরই মধ্যে তিনি ব্যাপক সংস্কারমুলক কাজ হাতে নিয়েছেন। দেশকে আধুনিকায়ন করতে গিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তার মধ্যে সৌদি আরবের নারীদের ক্ষমতায়ন। সেখানে নারীদের সম্প্রতি যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা আগে কখনো দেখা যায় নি।
তার সফলতা সত্ত্বেও ইয়েমেনে বোমা হামলায় অকাতরে মানুষ হত্যার জন্য তার ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন দেশের, স্থানের মানুষ। তাই মানবাধিকারের পক্ষশক্তিগুলো বলছে, সৌদি আরব এমন অবস্থানে নেই, যার সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারে বৃটেন। বৃটিশ সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে বোমা হামলা শুরু হয়। তারপর থেকে ওই সৌদি আরবের কাছে ৪৬০ কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রি করেছে বৃটেন। এর মধ্যে ২৭০ কোটি পাউন্ডের যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও ড্রোন কিনেছে। ১৯০ কোটি টাকার কিনেটে গ্রেনেড, বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র। নতুন চুক্তির অধীনে যে টাইফুন যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে সৌদি আরব তার গতি হবে ১৫০০ মাইল প্রতি ঘন্টায়। এই যুদ্ধবিমান স্থাল ও আকাশ পর্যায়ের যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র বহন করতে পারবে। তবে এই চুক্তিকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট আর্মস ট্রেড-এর অ্যানড্রু স্মিথ। তিনি বলেন, যদি এই অস্ত্র কেনাবেচা সত্যি হয় তাহলে তা হবে লজ্জাজনক। এর অর্থ হবে ইয়েমেনে আরো ধ্বংসলীলা। তিনি আরো বলেন, কয়েক দশক ধরে বৃটেনের পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠির সঙ্গে এক তিক্ত ও ক্ষতিকর সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু ক্রাউন প্রিন্সের জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে দেখিয়ে দিলেন যে, তিনি কতটা নিচে নামতে পারেন।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০০০ থেকে ১৪০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ইয়েমেনে। এর মধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি বেসামরিক। ওদিকে সৌদি আরবের কাছে বৃটেনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী লেবার দল নেতা জেরেমি করবিন। তিনি স্কটল্যান্ডে এক ভাষণে বলেছেন, বৃটেন সফরে আসা সৌদি আরবের শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৃটিশ অস্্রত বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানাই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের প্রতি। কারণ, সৌদি আরব ভয়াবহ বোমা হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনে। একই সঙ্গে আমরা ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, ইয়েমেনে এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে। এর প্রত্যক্ষ কারণ হলো সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন বোমা হামলা ও অবরোধ। সেখানে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে। লাখ লাখ শিশু কলেরায় ভুগছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট। এই জোটে মূল ভূমিকা সৌদি আরবের।