বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনিঃ জনবিচ্ছিন্ন রুশনারা আলী, কমিউনিটেতে নতুন চমক রাবিনা খান
ডেস্ক রিপোর্টঃ লন্ডন জুড়ে মিলিয়ন ভোটার ৪ জুলাই নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে ভোট দেবেন। বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রীণ এন্ড স্টেপনি আসনটি লেবারের দুর্গ বলে পরিচিত। এই আসনের বাঙালি ভোটাররা ঐতিহ্যগত ভাবে লেবার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকেন। সে হিসেবে ২০১০ সালে তৎকালীন এমপি জর্জ গ্যালোওয়ের অভিষিক্ত রেসপেক্ট পার্টির প্রার্থী আবজল মিয়াকে পরাজিত করে রুশনারা আলী লেবারের পক্ষে এই আসনে জয়ী হন। এভাবে তিনি প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৬০শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন, তিনি ৩৭,৫২৪ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন – যা দেশের বৃহত্তম। এই আসনে কনজারভেটিভ প্রার্থী ৬,৫২৮ ভোট নিয়ে দূরবর্তী দ্বিতীয় স্থানে এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ৫,৮৯২ ভোট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
২০১০ সাল থেকে এটি একটি নিরাপদ লেবার আসন হিসাবে দেখা হচ্ছে। যাইহোক, দলটি ২০১৯ সালের নির্বাচনে টাওয়ার হ্যামলেটস স্থানীয় কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল মেয়র লুতফুর রহমানের অ্যাসপায়ার পার্টির কাছে।
এই বছরের শুরুতে পার্লামেন্টে লেবার পার্টি লাইন টান এবং গাজা যুদ্ধবিরতি ভোটে বিরত থাকার মিসেস আলীর সিদ্ধান্ত নির্বাচনী এলাকার কিছু লোককে ক্ষুব্ধ করেছিল, যেটি দেশের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার একটি। বলা যায় এই আসনের ভোটারদের বিশাল একটি অংশ রুশনারা আলীর উপর ক্ষুব্ধ । আসনটি লেবারের নিরাপদ থাকায় রুশনারা কাউকে তোয়াক্কা করেন না। কমিউনিটি থেকে প্রায়ই বিচ্ছিন্ন থাকেন তিনি, জরুরী প্রয়োজনেও তাকে কমিউনিটির কোন কাজে পাওয়া যায়না। গাজায় যুদ্ধ বিরতি ইস্যুতে পার্লামেন্টে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন রুশনারা আলী। গাজা ইস্যু নিয়ে কমিউনিটির মানুষ রুশনারার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইনও করেছেন। যেহেতু বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা তাই ভোটাররা বিকল্প প্রার্থী না পেয়ে রুশনারা আলীকে বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। কিন্তু এবারের হিসেবটা ভিন্ন। রুশনারা আলীর বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী লিবডেম থেকে রাবিনা খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মিসেস খান বাঙালি পারায় খুবই জনপ্রিয়। তিনি ২০১৮ সাল থেকে লিবডেমের সাথে যুক্ত।
রাবিনা খান ১২ বছর ধরে স্থানীয় কাউন্সিলর ছিলেন, হাউস অফ লর্ডসের একজন বিশেষ উপদেষ্টা, তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের সাথে স্টেপনিতে বসবাস করছেন।
রাবিনা একটি দাতব্য সংস্থার জন্য কাজ করছেন এবং একজন ফ্রিল্যান্স NCTJ গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড সাংবাদিক হিসাবে Financial Times, Guardian, Yahoo News, Independent, Washington Post এবং অন্যান্যদের জার্নালে নিয়মিত লিখছেন । তিনি একজন প্রকাশিত লেখক এবং বর্তমানে বার্কবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ছেন।
একজন ক্যাম্পেইনার ও সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে তার একটি সু সম্পর্ক রয়েছে। রাবিনা প্রতিটি দরজায় কড়া নাড়ছেন।
রাবিনা ফিলিস্তিনিদের জন্য নিয়মিত ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন। তার দল লিবডেমও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের দাবী জানিয়েছে।
আমাদের রাজনীতিতে যা ভাঙা হয়েছে তা ঠিক করতে চান খান, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং জলবায়ু সংকটে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য লড়াই করতে চান রাবিনা খান।
তাঁর দল লিবডেম শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছে – দলের সকল সংসদ সদস্য গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করেছেন, একটি দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করেছেন এবং সমস্ত জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির আহবান জানিয়েছেন।
পুরানো লিজহোল্ড সিস্টেমের অবসান, সবুজ প্রযুক্তি এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ এবং বায়ু ও জল দূষণ মোকাবেলা করা তার এবং দলের লক্ষ্য। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, দূষণ কমানো এবং প্রত্যেকের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা রাবিনা খানের চ্যালেঞ্জ। একটি আবাসন সংকট মোকাবেলা করা যা তরুণদের একটি প্রজন্মের দাম কমিয়ে দেয়।
রাবিনা জানান, বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনিতে আমি সবই দেখেছি – শহরের সম্পদ থেকে স্থানীয় সংগ্রাম পর্যন্ত। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চালিত করে। একজন মা হিসাবে, আমি আমাদের শিশু এবং যুবকদের যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি, বিশেষ করে কোভিডের পরে পেয়েছি। আমি আমাদের তরুণ-তরুণীদের জন্য চাকরির আরও ভালো সুযোগ তৈরি করব।
আমি যদি আপনাদের সাংসদ নির্বাচিত হই তখন আমাদের কমিউনিটির কাছে আরো অ্যাক্সেসযোগ্য হবো। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং উচ্চ এনার্জি বিলের মতো সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা, মানুষের আবাসন সমস্যাগুলির পক্ষে ওকালতি করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও অন্তর্ভুক্ত এজেন্ডা করব।
জনগণ ও সম্প্রদায় আমার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে – একজন আসনের এমপি হওয়া শুধু একটি দায়িত্ব নয়; এটা আমার অটল অগ্রাধিকার। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে, অনেকে শক্তিহীন বোধ করছে। আপনার এমপি হিসেবে আমি এটিকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করব। এক শতাব্দী ধরে, লিব ডেমস ন্যায্য ভোট, সমান ক্ষমতা এবং জবাবদিহিতার জন্য লড়াই করেছে। আসুন ব্রিটিশ রাজনীতিকে আরও প্রাসঙ্গিক, আকর্ষক এবং আমাদের প্রয়োজনের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল হতে রূপান্তরিত করি।
বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনী আসনে আরেক বাঙালি প্রার্থী আজমল মশরু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজমল মশরুর এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণটা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ।
এবারের নির্বাচনে রাবিনা খান রুশনারা আলীর বিরুদ্ধে একজন শক্তিশালী প্রার্থী এটা স্পস্ট, যদিও এখানে লেবারের দুর্গ তাই তাকে নির্বাচনে জিততে অনেকটা পরিশ্রম করতে হবে। রুশনারা আলির অহংকার ভাঙতে হলে বাঙালি ভোটারদের বুঝাতে হবে এই আসনে মিসেস খান বাঙালির যোগ্য প্রতিনিধি। এখানে লিবডেমের ৫ হাজারের বেশি নিজস্ব ভোট রয়েছে, একেত্রে আজমল মশরুর নিজস্ব কোন ভোট নেই বললে চলে। বাঙালিদের সাপোর্ট পেলে এই আসনে লেবারের দুর্গ তছনছ হয়ে যেতে পারে, যেমনটা টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র নির্বাচনে ভোটাররা সংখ্যাগরিস্ট ভোটে লুতফুর রহমানকে লেবারের দুর্গ ভেঙ্গে দিয়ে ফিরিয়ে এনেছিল।
মিঃ মাসরুর, যিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমানের সমর্থন পেয়েছেন বলে বোঝা যায়, ২০১০ সালে মিসেস আলীর বিরুদ্ধে লিবারেল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন।
এই আসনে কনজারভেটিভ থেকে প্রার্থী হয়েছেন অস্কার রেনি। তিনি বাংগালীদের কাছে তেমন একটা পরিচিত না হলেও কনজারভেটিভ পার্টির নিজস্ব ভোট পাবেন বলে আসা করা হচ্ছে। অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন স্বতন্ত্র থেকে রেগি অ্যাডামস, মোঃ সোমন আহমেদ, গ্রিণ পার্টি থেকে ফোবি গিল, এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার পার্টি থেক ভেনেসা হাডসন,
সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির জন মাবুট , রিফর্ম ইউকে থেকে পিটার স্কিয়েটস এবং স্বতন্ত্র শাম উদ্দিন ।
এলাকা: নির্বাচনী এলাকার ওয়ার্ডগুলির মধ্যে রয়েছে বেথনাল গ্রিন, শ্যাডওয়েল, স্পিটালফিল্ডস ও বাংলাটাউন, সেন্ট ডানস্টানস, সেন্ট পিটারস, স্টেপনি গ্রিন, উইভারস এবং হোয়াইটচ্যাপেল
সীমানা পরিবর্তনের প্রভাব: সীমানা পরিবর্তনে এ আসনের রাজনৈতিক রূপরেখার কোনো পরিবর্তন হয়নি।