বেথনাল গ্রীনের ইয়র্ক হল সুইমিং পুল পুনরায় চালু করলেন মেয়র লুৎফুর রহমান
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রীনের অবস্থিত ঐতিহাসিক ইয়র্ক হল সুইমিং পুল হলটি প্রায় দুই বছর পর আবার খুলে দেয়া হলো সর্বসাধারণের জন্য। এক দশমিক তিন মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে আধুনিকায়ন ও পুণঃসংস্কারের পর পুলটি বুধবার ২০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে পুণরায় উদ্বোধন করেন বারার নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।
পুল হলটি পুণরায় জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ক্লাব সাতাঁরুদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন বারার কাউন্সিলরগণ, কাউন্সিলের লেজার সেন্টার পরিচালনাকারী অংশীদারী প্রতিষ্ঠান জিএলএল-এর প্রতিনিধিবৃন্দ এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদরা।
১৯২৯ সালে নির্মিত ঐতিহাসিক ইয়র্ক হল লেজার সেন্টারটি গ্রেড-টু তালিকাভূক্ত। ৩৩ মিটার দীর্ঘ পুলের সম্পূর্ণ পুল ট্যাঙ্কটি ১৯২০ এর দশকের মূল নকশার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন টাইলস লাগানো হয়েছে।
মেয়র লুৎফুর রহমান, জিএলএল এর সিইও পিটার বুন্ডে, কাউন্সিলের কালচার এন্ড রিক্রিয়েশন বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর ইকবাল হোসেইন, স্থানীয় অ্যাথলেট রোকসানা বেগম এবং হেইলি ম্যাকলিন পুলের পাশে দাঁড়িয়ে ফিতা কেটে পুলটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ইয়র্ক হলের সুইমিং পুলের দরজা আবারও স্থানীয় কমিউনিটির উপভোগের জন্য খুলে দেওয়ায় আমি আনন্দিত।
তিনি বলেন, আমাদের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আর এই প্রচেষ্টার মূল অংশই হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে ও সহজে এক্সেস যোগ্য লেজার সেন্টার গুলোর নেটওয়ার্ক। প্রত্যেকেই যাতে তাদের স্থানীয় লেজার সেন্টারের সুবিধা নিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে বারার সকল লেজার সেন্টারেই ছাড়কৃত মূল্যে মেম্বারশীপের সুযোগ আছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার, কাউন্সিলর ইকবাল হোসেইন বলেন, “সাঁতার সব বয়সের মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ব্যায়াম। ইয়র্ক হলের নতুন এই সুইমিং সুবিধাদি এটাকে একটি জলজ কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবে এবং ক্লাবসমূহ, স্কুলসমূহ, ক্যাচ আপ প্রোগ্রামগুলো, ওপেন ডে কর্মসূচি, সুইমিং লেসন বা সাঁতার শিখার কর্মশালা ইত্যাদি সকল ধরনের কার্যক্রম আগামী সপ্তাহ ও মাস গুলোতে এখানে ফিরে আসবে।”
কার্বণ নিঃসরণ কমাতে এবং গ্রাহকদের জন্য একটি হালকা, পরিচ্ছন্ন ও উজ্জল অভিজ্ঞতার সুযোগ তৈরি করতে এয়ার হ্যান্ডলিং সিষ্টেম আপগ্রেড করার পাশাপাশি এনার্জী সাশ্রয়ী লাইটিং স্থাপন করা হয়েছে।
যেসকল সাঁতারুর চলাফেরায় সমস্যা আছে, তাদের সাহায্য করার জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য উত্তোলন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এই পুলে।
উল্লেখ্য, ‘দ্যা হোম অব ব্রিটিশ বক্সিং’ হিসেবে জাতীয়ভাবে ব্যাপক পরিচিত ইয়র্ক হলের মাল্টিপারপাস ভেন্যু ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বহু ম্যাচ আয়োজন করেছে। ২০০৫—২০০৭ সালে এটি সংস্কার করা হয়েছিলো এবং বেজমেন্টে যেখানে পুরনো আমলের টার্কিশ বাথ ছিলো সেখানে ডে স্পা সুবিধা ও অত্যাধুনিক জিম গড়ে তোলা হয়।
বারার সকল বাসিন্দার স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য এবং বৈষম্য মোকাবেলা ও সুযোগ সুবিধাদি নিশ্চিত করার জন্য বারার পাবলিক লেজার সেন্টারের জন্য ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইয়র্ক হলের পুলকে আধুনিকায়ন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় অন্য যে লেজার সেন্টার গুলোর সুবিধাদির আধুনিকায়ন করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে মাইল এন্ড লেজার সেন্টার, জন অরওয়েল স্পোর্টস সেন্টার এবং হোয়াইটচ্যাপেল লেজার সেন্টার।
জনপ্রিয় ব্যায়াম এবং জীবনের অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় দক্ষতা হিসেবে সাঁতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জিএলএল এর প্রধান নির্বাহী পিটার বুন্ডে বলেন, একটি দাতব্য সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে জি এল এল কমিউনিটির স্বাস্থ্য এবং সুস্থতাকে সহযোগিতা করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করি, ইয়র্ক হল সুইমিং পুলের এই উন্নতিগুলি ব্যবহারকারীদের জন্য আরো লোভনীয় পরিবেশ তৈরি করবে। এর ফলে আমাদের বর্তমান সাঁতারুদের স্বাগত জানানো এবং আগামীতে আরো নতুন নতুন সাতাঁরুর সাথে দেখা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাতে এবং ইয়র্ক হল সাঁতারু কমিউনিটিকে ফিরে পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
সুইমিং পুল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত উদযাপন অনুষ্ঠানে ১৭ জন তরুণ এ্যাথলেটকে ২০২২ সালের জি এল এল স্পোর্টস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড (জি এস এফ) প্রদান করা হয়। জিএসএফ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম স্বতন্ত্র ক্রীড়াবিদ সহায়তা কর্মসূচি, যা এই বছর ৪৩টি বারার এ্যাথলেটদের সহযোগিতা করেছে। গত ১৪ বছরে জিএসএফ প্রায় ২০ হাজার তৃণমূল ও প্রতিষ্ঠিত এ্যাথলেটের ক্রীড়া স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করে। এজন্য এ পর্যন্ত জাতীয়ভাবে প্রায় ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যমানে নগদ অর্থ সহায়তা ও ট্রেনিং মেম্বারশীপ প্রদান করা হয়েছে।
মেয়র লুৎফুর রহমান এবং জিএলএল এর চীফ এক্সিকিউটিভ পিটার বুন্ডে ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের জন্য কারাতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে বেথনাল গ্রিন ভিত্তিক ক্লাব কাইজেন রিউ কারাতে ডু।
সার্টিফিকেট লাভকারীদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ট ক্রীড়াবিদ কারিসা হু কারাটে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে কিক বক্সার থেকে বক্সারে পরিণত হওয়া ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব রোকসানা বেগম, মাস্টার সুইমার র্যালফ পিনেল ও পিটার ডিক্সন এবং হার্ডালার হেইলি ম্যাকলিন উপস্থিত ছিলেন।
বেঙ্গলী উইমেন্স বিজনেস ঐতিহ্য কালেক্টিভ এর ‘তাতী ক্যাটারিং’ এবং সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ টাওয়ার প্রজেক্ট এর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীদের জন্য আপ্যায়ন করা হয়েছিলো।