ব্যর্থ বিদ্রোহের পর প্রিগোশিনের প্রথম বার্তা, প্রকাশ্যে এলেন পুতিন ও শোইগু

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাশিয়ায় ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের দেশত্যাগকারী নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন এক বার্তায় বলেছেন, তিনি সরকার উৎখাতের জন্য মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেননি। অন্যদিকে ওয়াগনারের ২৪ ঘন্টার বিদ্রোহ অবসানের পর সোমবার দেশটির সরকারি টিভিতে প্রথমবারের মত প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে দেখা গেছে।

প্রায় ১১ মিনিট স্থায়ী অডিও বার্তায় মি. প্রিগোশিন বলেন, তার সেনাদলের দুটি শহরের সামরিক স্থাপনা দখল ও মস্কোর দিকে যাত্রার লক্ষ্য ছিল প্রতিবাদ জানানো, সরকার উৎখাত করা নয়।

রুশ কর্তৃপক্ষ আগামী ১লা জুলাই থেকে ওয়াগনার গ্রুপকে বন্ধ করে দিয়ে এর সৈন্যদেরকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল। মি. প্রিগোশিন বলছেন, তার গ্রুপ এর বিরোধী ছিল এবং কমান্ডাররা কেউই মন্ত্রণালয়ের সাথে কোন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ওয়াগনার গ্রুপকে সক্রিয় রাখার উপায় বের করতে বেলারুসের নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেংকো সহায়তা করেছেন।

প্রিগোশিন তার বার্তায় রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর সমালোচনা করে দাবি করেন – ওয়াগনার গ্রুপকে প্রথম আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হলে অনেক আগেই ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শেষ হয়ে যেতো।

ব্যর্থ বিদ্রোহের পর এই ভাড়াটে বাহিনীটির ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আজই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, আফ্রিকা মহাদেশের মালি ও মধ্য-আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ওয়াগনার গ্রুপের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ক্রেমলিন সোমবার ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ভিডিও ভাষণ অনলাইনে পোস্ট করে।

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং এই গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের রাশিয়া ত্যাগের পর এই প্রথমবারের মত প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কোন ভিডিওতে দেখা গেল। ৎ

এতে একটি যুব শিল্প ফোরামে আগত অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে রুশ প্রেসিডেন্টকে ভাষণ দিতে দেখা যায়। এতে তিনি ওয়াগনার গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলীর কোন উল্লেখ করেননি। তবে ভাষণটি কখন রেকর্ড করা হয় তা স্পষ্ট নয়।

এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট পুতিন আজ ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসির সাথে ফোনে কথা বলেছেন বলে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়।

বিবৃতিতে ওয়াগনার বিদ্রোহের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট রুশ নেতৃত্বের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

সংবাদদাতারা বলছেন, মি. পুতিন ও তার সরকার যে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে করে যাচ্ছেন এমন একটা চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে।

অন্যদিকে যে শহরটি ছিল ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহী তৎপরতার কেন্দ্র – সেই রোস্টভ-অন- ডনে ঐক্যের ডাক ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

টেলিগ্রামে স্থানীয় একটি চ্যানেলে এসব পোস্টারের ছবি দেখা যায়।

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং এই গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের রাশিয়া ত্যাগের পর সোমবার প্রথমবারের মত মি. শোইগুকেও টিভিতে দেখা গেছে।

মি. শোইগুকে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সৈন্যদের পরিদর্শন করতে দেখা যায়, তবে কখন এবং কোথায় এসব ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তার কোন আভাস দেয়া হয়নি।

ওই বিদ্রোহের সময় মি. প্রিগোশিন – মি. শোইগুকে “অশুভ” বলে আখ্যায়িত করে তাকে তার পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন।

বিবিসির সংবাদদাতা কেলিন ডেভলিন বলছেন, মি. শোইগুর এ সফর যখনই হয়ে থাকুক, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে মি. শোইগু স্বপদে বহাল আছেন।

ইতোমধ্যে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন বলেছেন, রাশিয়ার “স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন” এবং দেশকে অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পেছনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

এই ঘটনাবলীর পর রুশ মুদ্রা রুবলের মূল্যমান গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যায়। তবে কিছুক্ষণ আগে তার দর ডলারের বিপরীতে ৮৭.২৩০০ থেকে দুই শতাংশ বেড়েছে।

ওয়াগনারের ব্যর্থ বিদ্রোহে পশ্চিম জড়িত নয়: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ায় ওয়াগনার গোষ্ঠীর ব্যর্থ বিদ্রোহের ঘটনার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্ররা জড়িত ছিল না।

এক সংবাদ সম্মেলনে মি. বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সাথে সমস্বিতভাবে এ ঘটনার ব্যাপারে প্রতিক্রিয় জানিয়েছে।

“আমরা নিশ্চিত করেছি যে আমরা পুতিনকে যেন এ ঘটনার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশ ও নেটোকে দায়ী করার কোন সুযোগ দেয়া না হয়” – বলেন জো বাইডেন – “এতে আমাদের কোন ভূমিকা ছিল না।”

যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বলেছে যে এই বিদ্রোহ ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ এবং এতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে ‘তার নেতৃত্বে ফাটল ধরেছে।’

নেটো জোটের মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের ব্যর্থ অভ্যুত্থান আরো একবার দেখিয়ে দিয়েছে যে মি. পুতিন ইউক্রেনে ‘অভিযান’ চালিয়ে এক বড় ভুল করেছেন।

ওয়াগনারের বিদ্রোহের ব্যাপারে চীন এ কয়েকদিন নিরব থাকলেও গত রাতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে।

এতে বলা হয়, যা ঘটেছে তা “রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়।”

বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার “বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী” এবং অংশীদার হিসেবে চীন রাশিয়াকে তার “জাতীয় স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রয়াসে” সমর্থন দেয়।

প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে তদন্ত
অন্যদিকে ওয়াগনার বিদ্রোহে নেতৃত্ব দানকারী ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বেলারুস চলে গেছেন বলে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হলেও তাকে এখন পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি, এবং তিনি এ পর্যন্ত কোন কথাও বলেননি।

মি. প্রিগোশিনের রাশিয়া ছাড়ার আগে শনিবার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং ‘এক সমঝোতার’ খবর পাওয়া গেলেও – রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে। তবে এর অর্থ কি তা স্পষ্ট নয়।

ওই রিপোর্টে বলা হয় মি. প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে ফেডারেল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান তদন্ত করছে।


Spread the love

Leave a Reply