ব্রাসেলসে হামলা : সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারী সনাক্ত, আইএসের দ্বায় স্বীকার
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
ব্রাসেলস বিমানবন্দরে বোমা হামলাকারী সন্দেহে একজনকে খুঁজতে এলার্ট জারি করেছে বেলজিয়াম পুলিশ। জাভেন্টেম বিমানবন্দর ও মেট্রো রেল স্টেশনে দু’টি বোমা হামলায় সে জড়িত বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। বিমানবন্দরের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। এক অনলাইন বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করে এর চেয়েও ভয়াবহ হামলা আসছে বলেও হুমকি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মঙ্গলবার ওই বোমা হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে অন্তত ২৫০ জন।
বেলজিয়ামের প্রসিকিউটর ফ্রেডরিক ভন লিউ বলেছেন, বিমানবন্দরে হামলায় সম্ভবত তিন জঙ্গি অংশ নেয়। এর মধ্যে দু’জন আত্মঘাতী হামলা চালায়। এক হামলাকারীর মৃতদেহের কাছে পাওয়া গেছে একটি একে-৪৭ রাইফেল। তৃতীয় হামলাকারীকে ধরতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন এই তিন হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ব্রাসেলস শহরের সেইরাবি এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে বেশ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য ও আইএস’র পতাকা পাওয়া গেছে। প্রসিকিউটর জানান, ধারণা করা হচ্ছে দুই আত্মঘাতী হামলাকারী বোমা বহন করছিলো।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারী একটি ট্রলি নিয়ে আরও দুই সন্দেহভাজনের সঙ্গে এয়ারপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আত্মঘাতী বোমা হামলার আগেই ওই দুই সন্দেহভাজন নিহত হন।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ৮টায় বিমানবন্দরে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে। এরপর লোকজন যখন দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করছিলো তখন দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। সেখান থেকে আরও একটি বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টা পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের কাছাকাছি মালবিক মেট্রোরেল স্টেশনে আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এই সন্ত্রাসী হামলার পর বেলজিয়ামে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।ঘোষণা করা হয়েছে কালো দিবস ও তিন দিনের জাতীয় শোক। ইউরোপজুড়ে জোরদার করা হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।
বেলজিয়ামের বিমানবন্দর ও মেট্রো স্টেশনে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা এ দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিবৃতিতে আইএস হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যেসব দেশ আগ্রাসন চালাবে এবং ইসলামিক স্টেট-বিরোধী ক্রুসেডার জোটের শরিকদের কালো দিন ফিরিয়ে দিতে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি। অনেকের ধারণা করছেন, প্যারিসে বোমা হামলাকারী আব্দেসালামের গ্রেফতারের প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হতে পারে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এই হামলাকে ‘অন্ধ, হিংসাত্মক ও কাপুরুষোচিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এটা বেদনার দিন; এটা একটি কালো দিন।
হামলার নিন্দা জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, আমরা এই সন্ত্রাসীদের কখনোই জিততে দেব না। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন,জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেন, পুরো ইউরোপের ওপরই আঘাত করা হয়েছে। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস ও ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ফেডারিকা মোঘারিনি।
কিউবা সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, জাতীয়তা-বর্ণ-ধর্ম বিশ্বাস নির্বিশেষে আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বজুড়ে যারা মানুষের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে,আমরা তাদের পরাজিত করতে পারি; তাদের পরাজিত করবই।
গত আট মাসে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু হওয়া রাশিয়া ও তুরস্কও বলেছে, এই হামলা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সীমানা নির্বিশেষে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে।
এদিকে, বেলজিয়ামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর দেশটির রাজধানী ব্রাসেলসের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপ। গতকাল মঙ্গলবার এ হামলার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবেশী ফ্রান্স, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপ ও আমেরিকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ব্রিটেনের বিমানবন্দর, সীমান্তসহ স্পর্শকাতর স্থাপনায় নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।