ব্রিটিশদের ১৪৪ ধারা:সেই আইন কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃভারতে বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য ঔপনিবেশিক যুগের কঠোর একটি আইন ব্যবহার করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানী দিল্লির কয়েকটি অংশে, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য এবং ব্যাঙ্গালুরু শহরসহ কর্ণাটক রাজ্যের কয়েকটি এলাকায়, এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে বিক্ষোভ করার জন্য কয়েকটি শহরে হাজার-হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
১৪৪ ধারার বিধানে বলা হয়েছে যে, নিরাপত্তাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় চারজনের বেশি মানুষের সমাবেশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।
আইনটি রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় পুলিশকে এই ক্ষমতা দিয়ে থাকে এবং এই আইন ভঙ্গ করা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
অনেকের ধারণা, বিক্ষোভ দমনের জন্য আইনটির অপব্যবহার করা হয়েছে।
সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ গৌতম ভাটিয়া বলেছেন, বাক স্বাধীনতার সাংবিধানিক গ্যারান্টি এবং সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারের সাথে এই আইনটি সাংঘর্ষিক।
তবে, সংবিধানে এসব অধিকারের উপর যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ আরোপের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে, যদি সেটা জনস্বার্থে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়।
তবে এই যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ বলতে কী বোঝায় সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আদালত রায় দিয়েছে যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেবল তখনই সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে যদি এটি জনগণের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজন হয় এবং যদি এর কারণে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলার ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
মি. ভাটিয়া বলছেন, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে যে এ ধরণের স্বাধীনতা, জন শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং শান্তির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও হুমকির সৃষ্টি করছে।
“উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি জানেন যে কোথাও মানুষ জড়ো হচ্ছে এবং সেখানে হিংসাত্মক বা উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে যেমন: সাধারণ মানুষকে ভবন পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তাহলে এই সমাবেশকে প্রতিরোধমূলকভাবেআটকে দেয়া যাবে।”
“তবে কিছু মানুষ যেকোনো সময় সহিংস হয়ে উঠতে পারে এমন সম্ভাব্য আশঙ্কার ভিত্তিতে এই অধিকারগুলোয় বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না। না হলে এই অধিকার থাকার পুরো উদ্দেশ্য ভেস্তে দেবে,” বলেন মি. ভাটিয়া।
উদাহরণস্বরূপ, বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্গালুরুতে আইনটি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে মানুষের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়ার কোনও সাম্প্রতিক রেকর্ড নেই।
সুতরাং ওই কঠোর আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে শর্তটির প্রয়োজন সেটা এই বিক্ষোভ সমাবেশের সঙ্গে মিলছে না, এটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।
“এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মৌলিক অধিকারের অযৌক্তিক লঙ্ঘন যা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে এবং করা উচিত,” মি. ভাটিয়া বলেছেন।
তক্ষশীলা ইন্সটিটিউশন এবং আইনি নীতি গবেষণা সংস্থা ভিধি সেন্টারের গবেষকরা তাদের সংঘবদ্ধ সহিংসতা মোকাবিলা করার উপায় সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্রে বলেছেন যে, ১৪৪ ধারা নিয়ে সমস্যাটি হল, “এটি প্রাথমিকভাবে জরুরি অবস্থার সময় প্রয়োগ করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল, তবে এই শর্তটি প্রায়শই পূরণ হয় না। বাস্তবে, এই আইন গণহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা অতিরিক্ত মাত্রায় এবং বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।”
একের পর এক সরকার ক্ষমতায় এসে বিক্ষোভ দমনের জন্য এই আইন প্রয়োগ করে গেছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার অবিনাশ কুমার বলেছেন, “শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুমতি না দেয়া মত প্রকাশের অধিকারকে অসম্মান করার সামিল”।
স্পষ্টতই, ভারতের উচিত এসব বিক্ষোভকে অপরাধ হিসেবে দেখা বন্ধ করা।