ব্রিটেনের ভেতরে এখন অবৈধ অভিবাসী আট লাখ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ একটা স্বতঃসিদ্ধ সত্য হল যা দেখা যায় না, তা গণনা করাও কঠিন। কিন্তু অন্তত অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানবিদরা অনেক সময়েই এই সত্য মানতে পারেন না।
আর এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো পিউ রিসার্চ সেন্টারের তৈরি একটি প্রতিবেদনে যেখানে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক বিশ্বের নানা ধরনের স্রোতধারার ওপর আলোকপাত করে থাকে। এবং এর গবেষণার ফলাফল প্রায়ই সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে শিরোনামে পরিণত হয়।
সর্বশেষ প্রতিবেদনে পিউ রিসার্চ সেন্টার যা দাবি করছে তা খুবই সরল: এই মুহূর্তে ব্রিটেনে প্রায় আট থেকে ১২ লাখ অবৈধ অভিবাসী বাস করছে।
পিউ সেন্টারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘অবৈধ অভিবাসী’ সংজ্ঞা হল এমন কোন লোক যার কোন দেশে থাকার বৈধ অধিকার নেই। নানা দেশে তাদের নানা নামে ডাকা হয়ে থাকে: ‘অনুমতিপত্র-বিহীন অভিবাসী’ কিংবা ‘দলিল-বিহীন অভিবাসী’ ইত্যাদি।
কারা এই হিসেবের মধ্যে পড়ছেন? এখানে কিছু উদাহরণ দেয়া হল:
- একজন অস্থায়ী কর্মী যার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
- এমন কোন লোক যারা দালালদের টাকা দিয়ে সেই দেশে প্রবেশ করেছেন।
- এমন কোন লোক যিনি আশ্রয় প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু তারপরও সেই দেশে রয়ে গেছেন।
পিউ সেন্টার কীভাবে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা হিসেব করেছে?
বেআইনি অভিবাসীদের সংখ্যা গণনা করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি পথ হলো যারা এই বিষয় সম্পর্কে জানেন তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা। যেমন: নির্মাণ প্রকল্পের ম্যানেজার। কারণ, কোন নির্মাণ শ্রমিককে কাজ দেয়ার আগে এরাই তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন।
আরেকটি উপায় হচ্ছে যাকে বলে ‘স্নোবলিং’। গবেষকরা প্রথমে একজন অবৈধ অভিবাসীর সাথে যোগাযোগ করেন, এবং তার মাধ্যমে অন্যদের খুঁজে নেন। এর ফলে তথ্যের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
ব্রিটেনের অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা হিসেব করতে গিয়ে পিউ ‘রেসিডিউয়াল মেথড’ ব্যবহার করেছে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা হিসেব করে যারা বাকি থাকবে, তাদের মোট সংখ্যা গণনা করা হয়।
ব্রিটেনের অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা
প্রথমে পিউ রিসার্চ সেন্টার হিসেব করেছে ব্রিটেনে সেই সব বাসিন্দা যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে এসেছেন।
তারপর প্রতিষ্ঠানটি হিসেব করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা বসবাসকারীদের কতজনের কাছে সে দেশে থাকার বৈধ অনুমতি রয়েছে।
এই বিষয়ের ওপর ২০১৭ সালের তথ্য থেকে যা জানা যাচ্ছে:
ব্রিটেনের অফিস অফ ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা ব্রিটিশ নাগরিকদের মোট সংখ্যা ২৪ লাখ।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যাকে হোম অফিস নামে ডাকা হয়, সেটি বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা ১৫ লাখ লোকের হাতে কোন না কোন বৈধ কাগজপত্র, যেমন ওয়ার্ক ভিসা, রয়েছে।
এর পর গবেষণা কেন্দ্রটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা মানুষের মোট সংখ্যা থেকে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে এমন লোকের সংখ্যা বাদ দিয়েছে।
ঐ তথ্যকে আরও যাচাই বাছাই করে পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা একমত হয়েছেন যে ব্রিটেনে আট থেকে ১২ লাখ অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন।
কিন্তু এই হিসেবে মধ্যে একটা সমস্যা রয়েছে। সেটা হল এটা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
বিবিসি এই বিষয়টি নিয়ে আগেও রিপোর্ট করেছে যে এই মুহূর্তে আসলে কত অবৈধ অভিবাসী ব্রিটেনে রয়েছে সে সম্পর্কে সরকারের কোন ধারণাই নেই।
দ্বিতীয়ত, এখন ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে কতজনের হাতে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে সেই সংখ্যা হোম অফিসও জানে না।
যেমন, ব্রিটেনের বৈধ বাসিন্দা ছিলেন, এমন কোন লোক যদি তার নিজ দেশে ফিরে গিয়ে থাকেন, কিংবা তার মৃত্যু হয়ে থাকে, সেটা জানার কোন উপায় নেই।
পিউ রিসার্চ সেন্টার এসব দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে, তবে উল্লেখ করেছে তাদের এই গণনা বাস্তবতার এতটাই কাছাকাছি যে নীতিনির্ধারকরা এর ওপর ভিত্তি করেই পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
অবৈধ অভিবাসীদের অন্যান্য সংখ্যার সাথে এর অমিল কোথায়?
গত ২০ বছর ধরে অভিবাসনের ধারা থেকে আমরা যা জানতে পারি, এবং ব্রিটেনে মোট অবৈধ অভিবাসীর যে হিসেব আগে জানা গেছে, তার সাথে পিউ গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিবেদনের খুব একটা তফাৎ নেই।
হোম অফিস ২০০৫ সালে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল এই সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার।
দু’হাজার সতের সালে হোম অফিসের পরের আরেকটি গবেষণায় আগের তথ্যগুলিকে হালনাগাদ করে বলা হয়েছিল এই সংখ্যা চার লাখ ১৭ হাজার থেকে আট লাখ ৬৩ হাজার হবে। এদের মধ্যে ছিল সেই সব শিশু যাদের জন্ম ব্রিটেনে হয়েছে।
এর পরের বছরগুলিতে ইউকে এবং ইউ-তে অভিবাসনের হার অনেক বেড়েছে। সেই বিচারে পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় খুব একটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না।
কিন্তু তারপরও এই নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকবেই। যারা এই তথ্যকে বিশ্বাস করতে রাজি নন, তারা বলবেন বানোয়াট উপাত্ত ব্যবহার করে এই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।