ব্রিটেনের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাগুলো কীধরনের ছিল
ইংল্যান্ডে ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় এক আত্মঘাতী হামলায় ২২ জন নিহত এবং ৫৯ জন আহত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে যেসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার একটি খতিয়ান তুলে ধরেছে বিবিসি নিউজ।
লন্ডন হামলা, ৭ই জুলাই ২০০৫
৭ই জুলাই ২০০৫-এ লন্ডন পরিবহন নেটওয়ার্কের উপর চারটি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। ঐ হামলাকে প্রায়ই উল্লেখ করা হয় সেভেন-সেভেন এই নামে।
লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি বোমা ফাটানো হয়। এর একটিতে ছয়জন; দ্বিতীয়টিতে সাতজন এবং তৃতীয়টিতে পাতাল রেলের দুটি স্টেশনের মাঝখানে আরেকটি বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ২৭ ব্যক্তি।
এছাড়াও লন্ডনের কেন্দ্রে একটি ভিড়ভর্তি বাসে চতুর্থ বিস্ফোরণে মারা যায় ১৪ জন।
হামলাকারীরা ছিল উত্তর ইংল্যান্ডের ইসলামী চরমপন্থী যারা হামলা চালিয়েছিল মোহাম্মদ সিদিক খানের নেতৃত্বে।
বাকি তিনজন বোমাহামলাকারীর প্রত্যেকেই ছিল পাকিস্তানি অভিবাসীদের ছেলে, যাদের জন্ম ব্রিটেনে।
এই বোমা হামলার দু সপ্তাহ পরেই হুবহু একইধরনের একটি হামলার চেষ্টা হয়। সেটারও লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার উপর হামলা চালানো। তবে সেবার তাদের বোমা বিস্ফোরিত না হওয়ায় ওই হামলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
গ্লাসগো বিমানবন্দর হামলা, ৩০শে জুন ২০০৭
গর্ডন ব্রাউন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবার তিন দিন পর দুই ব্যক্তি গ্লাসগো বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের মধ্যে জিপ চালিয়ে দিয়ে হামলা চালায়।
গাড়িটিতে পরে আগুন ধরে যায়।
হামলাকারীদের একজন বিলাল অবদুল্লাহ ব্রিটেনে জন্ম একজন মুসলমান চিকিৎসক। ইরাকি বংশোদ্ভুত এই চিকিৎসক কাজ করত রয়্যাল আলেকজান্দ্রা হাসপাতালে এবং এই চিকিৎসক জিপ থেকে বেরিয়ে টার্মিনাল ভবনে লোকজনের উপর হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।
জিপের চালক, কাফিল আহমেদ জিপটি সেখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। তার গায়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। পরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। ওই হামলায় আর কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
পরে জানা যায় এর ৩৬ ঘন্টা আগে লন্ডনের একটি নাইটক্লাবে একটি বোমাহামলার ব্যর্থ চেষ্টার সঙ্গে ঐ হামলার যোগাযোগ ছিল।
লি রিগবি, ২২শে মে ২০১৩
দুই ব্যক্তি – মাইকেল অ্যাডেবোলাজো আর মাইকেল অ্যাডেবোয়ালে ব্রিটিশ সৈন্য লি রিগবির উপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের উলইচ এলাকার সেনা ছাউনির বাইরে এক রাস্তার উপরে।
মিঃ রিগবিকে প্রথমে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারা হয়, তারপর চাপাতি ও কাটারী দিয়ে তাকে কোপানো হয়। হামলার পর পুলিশ আসা পর্যন্ত হামলাকারীরা অপেক্ষা করে এবং পথচারীদের মোবাইল ফোনে তাদের আক্রমণের উদ্দেশ্য জানিয়ে বার্তা রেকর্ড করে।
তারা বলে ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা একজন ব্রিটিশ সেনাকে খুন করেছে।
এই দুই ব্যক্তি ছিল নাইজেরিয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ। তারা জন্মসূত্রে ছিলেন খ্রিস্টান এবং পরে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়।
দুজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অ্যাডেবোলাজোকে আমৃত্যু এবং অ্যাডেবোয়ালেকে অন্তত ৪৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
জো কক্স, ১৬ই জুন ২০১৬
লেবার সংসদসদস্য জো কক্সকে হত্যা করে টমাস মেয়ার নামে এক ব্যক্তি। উত্তর ইংল্যান্ডে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে বারস্টল নামে এক শহরে লাইব্রেরির বাইরে মিঃ মেয়ার “সবার আগে ব্রিটেন” এই বলে ধ্বনি দিচ্ছিল।
ব্রিটেনের সরকারি কৌঁসুলিরা এই হামলাকে “সন্ত্রাসী হামলা” বলে বর্ণনা করে।
মেয়ার জো কক্সকে প্রথমে গুলি ও পরে ছুরিকাঘাত করে। জো কক্স সেইসময় চেঁচিয়ে সবাইকে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলেন। ৭৭ বছর বয়স্ক বার্নাড কেনি বলে এক ব্যক্তি হামলাকারীকে বাধা দিতে গেলে হামলাকারী তার পাকস্থলিতে ছুরি মারে।
ইউকে-তে ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের ঠিক আগে এই হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনার পর গণভোটের প্রচারণা স্থগিত করে দেওয়া হয়।
বিচারক বলেন ওই হামলার ছিল “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত।”
ওয়েস্টমিনস্টার হামলা, ২২শে মার্চ ২০১৭
লন্ডনে সংসদ ভবনের কাছে ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে পথচারীদের উপর গাড়ি তুলে দিয়ে হামলা চালায় খালিদ মাসুদ নামে ব্রিটিশ এক ব্যক্তি।
কেন্ট শহরে জন্ম নেওয়া খালিদ মাসুদের আদি নাম ছিল এড্রিয়ান এলমস্। তার ওই হামলা ইসলামী উগ্র মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল বলে মনে করা হয়।
সেতুর উপর হামলা চালানোর পর মাসুদ হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েস্টমিনস্টার হাউসের ফটকে ধাক্কা মারলে তাকে আটকানোর চেষ্টা করে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার কিথ পামার।
খালিদ মাসুদ সেইসময় ছুরিকাঘাতে পুলিশ কনস্টেবল পামারকে হত্যা করে এবং তাকে গুলি করে হত্যা করে অন্য পুলিশ অফিসাররা।
কিথ পামার সহ চারজন পথচারী প্রাণ হারায়।