ব্রিটেন ফিরতে চায় আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি যুবক

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃকয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ যুবক আশরাফ মাহমুদ ইসলাম। নিজের ভুল বুঝতে পেরে এখন যুক্তরাজ্যে নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে চায় সে। তবে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কথা জানিয়ে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। বিষয়টি নিয়ে এখন আদালতে লড়াই করছেন তার আইনজীবীরা।

১৯৯৬ সালে লন্ডনে জন্ম নেওয়া আশরাফ সম্ভবত ২০১৫ সালে সিরিয়ায় যায়। দেশে ফিরে আসার আবেদনে সে জানায়, সিরিয়ার মানুষকে সাহায্য করার চিন্তা থেকেই সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু সহিংসতা বাড়ার পর সে আইএসবিরোধী কুর্দি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর গত ১০ মাস ধরে সে তাদের হাতেই বন্দী আছে। সে এখন জন্মভূমি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে চায়।

তবে সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেওয়ায় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নাগরিকত্ব বাতিল করার বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ বছরের প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড এক চিঠিতে আশরাফকে জানান, ‘আপনি একজন ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক। আপনি সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছেন। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্যে আপনার উপস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে’।

যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, কোনও নাগরিকের বিকল্প জাতীয়তা থাকলে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে। কারণ দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় তার কাছ থেকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলেও তিনি ‘রাষ্ট্রহীন’ হবেন না। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদি কোনও নাগরিক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় আর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলেও তিনি রাষ্ট্রহীন হয়ে না পড়েন, তাহলে যেকোনও ব্রিটিশ নাগরিক নিজের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মনে করেন তাতে জনগণের জন্য ভাল হবে।

২২ বছর বয়সী আশরাফ নিজের আবেদনে বলেছে, যুক্তরাজ্যকে সে নিজের একমাত্র ঠিকানা হিসেবে জানে। এমনকি সেখানে ফিরে এসে যতদিন প্রয়োজন কারাগারে থাকতেও সে আগ্রহী। ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সে বলেছে, ‘আমি যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে কোনও ভিডিও তৈরি করিনি, আমি কখনও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে কিছুই করিনি। আমি বুঝতে পেরেছি, আমি একটি ভুল করেছি আর আমি ফিরে যেতে চাই’।

আশরাফ মাহমুদ ইসলামের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, ব্রিটিশ সরকারের এই নির্দেশ আশরাফকে রাষ্ট্রহীন করে ফেলবে। কারণ উত্তরাধিকার সূত্রে সে বাংলাদেশি জাতীয়তা পাবে না বা নাগরিকত্ব অর্জনও করতে পারবে না। তারা আরও বলেন যে, আশরাফ বন্দি থাকায় এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে আপত্তি জানাতে পারছে না। কার্যকর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার স্বার্থে তাকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আবেদন করেন আইনজীবীরা।

আশরাফের পরিবারের একজন সদস্য এক বিবৃতিতে বলেছেন, তার ‘মগজ ধোলাই’ করা হয়েছিল। আত্মীয়দের কাছে পাঠানো চিঠিতে সে বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সবাই চাই, আশরাফ নিরাপদে বাড়িতে ফিরে আসুক।’

সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াইপিজি আশরাফসহ আরও আইএস সদস্যকে আটক করে রেখেছে। বাহিনীটি চায় আইএস বন্দিরা যেখান থেকে এসেছে সেখানেই ফেরত যাক। তারা চায় যুক্তরাজ্য সরকার তাদের সব নাগরিককে ফেরত নিয়ে যাবে।


Spread the love

Leave a Reply