ব্রেক্সিট চুক্তির পরিবর্তন চায় যুক্তরাজ্য, ইইউ বলছে ‘না’

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ব্রেক্সিট চুক্তির বিতর্কিত ‘বেকস্টপ’ ধারা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্পাদিত চুক্তি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ফলে ব্রেক্সিট বিতর্ক যুক্তরাজ্যের গৃহবিবাদ ছাড়িয়ে আবারও নতুন মোড় নিল।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি গত ১৫ ডিসেম্বর বিশাল ব্যবধানে প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সে কারণেই ব্রেক্সিট কার্যকরে ব্রিটিশ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত কী, তা যাচাইয়ে এই ভোটাভুটি।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের গ্রাহাম ব্রাডির প্রস্তাবে বলা হয় বিতর্কিত ‘বেকস্টপ’ ধারা বাদ দিলেই তাঁরা সম্পাদিত চুক্তিটি সমর্থন করবেন। ৩১৭ জন আইনপ্রণেতা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর বিপক্ষে ছিলেন ৩০১ জন।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের স্পষ্ট নির্দেশনা পেয়েছেন। ‘বেকস্টপ’ ধারার পরিবর্তনে তিনি শিগগিরই ইইউর সঙ্গে পুনরায় আলোচনার জন্য যাবেন। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সহজ হবে না। কারণ, ইইউ’তে এমন আলোচনার সুযোগ কম। তবে সংসদের সমর্থনের পর তিনি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আদায়ে চেষ্টা আরও জোরদার করবেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইইউ নেতারা সম্পাদিত চুক্তি পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন। আর গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ইইউর পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে বলেন, সম্পাদিত চুক্তির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন ইইউ নেতারা।

কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের সংগঠন ‘ইউরোপিয়ান রিসার্স গ্রুপ’–এর প্রধান রিচার্ড রিচ মগ বলেন, এখন ইইউকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা চুক্তির বেকস্টপ ধারাটি বদল করবে, নাকি পরিস্থিতি চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদের দিকে ঠেলে দিয়ে ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ডের বিচ্ছেদ বিল হারাবে এবং অন্যান্য ঝুঁকি টেনে আনবে।

বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলছেন, মঙ্গলবারের ভোটাভুটি থেরেসা মের জন্য কিছুটা স্বস্তির মুহূর্ত এনে দিয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক খেলার শেষ সময়ে এসে ঠেকেছে। তাঁর মতে, এখন ইইউ নেতাদের কঠিন সিদ্ধান্তের সময়।

বিচ্ছেদ কার্যকরের পর ইইউর অংশ স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমানা উন্মুক্ত রাখার নিশ্চয়তাকে বলা হচ্ছে ‘বেকস্টপ’। এর ফলে নর্দান আয়াল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থেকে যাবে। ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ চুক্তির মাধ্যমে ওই সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা না গেলে তবেই এই ‘বেকস্টপ’ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। যুক্তরাজ্য এবং ইইউ উভয় পক্ষ এই সীমান্তে তল্লাশিচৌকি বসানোর বিপক্ষে। কারণ, এতে ওই অঞ্চলে আবারও বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা।

চুক্তির বিরোধীরা বলছেন, ‘বেকস্টপ’ ব্যবস্থার ফলে নর্দান আয়ারল্যান্ড আইনগতভাবে যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

মঙ্গলবারের ভোটাভুটিতে আরও একটি প্রস্তাব পাস হয়। এতে চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকর না করার পক্ষে মত দিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা। তবে এ প্রস্তাব মানতে বাধ্য নয় সরকার। ফলে ২৯ মার্চের নির্ধারিত দিনে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট ঘটতে পারে।

এদিন মোট ৭টি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। এর মধ্যে ৫টিই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তি পাশে ব্যর্থ হলে ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার যে দাবি, সেটিও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মে বলেছেন, ইইউর সঙ্গে আলোচনা শেষে দ্রুত তিনি পার্লামেন্টে হালনাগাদ চুক্তি নিয়ে হাজির হবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তি পাশে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীকে পরদিন আবারও নতুন প্রস্তাব নিয়ে সংসদে হাজির হতে হবে।


Spread the love

Leave a Reply