ব্রেক্সিট চুক্তির পরিবর্তন প্রশ্নে দুই মেরুতে দুই পক্ষ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃআগামী ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা। অথচ একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে এই বিচ্ছেদ কার্যকরের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
সর্বশেষ চুক্তির একটি ধারা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু ইইউ সেই পরিবর্তনে নারাজ। শেষ সময়ে এসে দুই পক্ষের দুই মেরুতে অবস্থানের কারণে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়গুলো বারবার সামনে চলে আসছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাসের চেষ্টার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইইউ নেতাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সম্মত হন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সংসদ সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে চুক্তিতে উল্লেখিত ‘বেকস্টপ’ বিষয়ক ধারাটির গ্রহণযোগ্য পরিবর্তন করা হলে চুক্তিটি অনুমোদন করবে বলে জানিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ। কিন্তু ইইউ নেতারা বলেছেন, সম্পাদিত চুক্তি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
বিচ্ছেদের পর ইইউর সদস্য স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার কৌশলকে বলা হচ্ছে ‘বেকস্টপ’। এর ফলে নর্দান আয়ারল্যান্ড আইনগতভাবে যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে সমালোচনা উঠেছে।
আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগেই ইইউর তরফ থেকে চুক্তি পরিবর্তনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা হলেও বিকল্প প্রস্তাব তৈরিতে ব্যস্ত যুক্তরাজ্য। ‘বেকস্টপ’ ব্যবস্থার বিকল্প উপায় খুঁজতে ব্রেক্সিটপন্থী এবং ব্রেক্সিটবিরোধী সাংসদদের নিয়ে একটি কমিটি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী মের চুক্তি পরিবর্তনের দাবি নিয়ে ইইউতে যাওয়ার কথা। তার আগে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন একটি বিকল্প খুঁজে বের করতে কাজ করছে ওই কমিটি।
কিন্তু ইইউর পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে বলেন, বেকস্টপ ব্যবস্থা চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ইইউ অন্য নেতারাও একই অবস্থানে অনড়।
তবে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটপন্থী রাজনীতিকদের কেউ কেউ বলছেন, ইইউ একেবারে শেষ মুহূর্তে অবস্থান পরিবর্তন করবে, এটাই তাদের কৌশল।
কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী রাজনীতিক নাইজেল ফারাজ গত শুক্রবার ইইউ পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে বলেন, চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ হলে ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ডের বিচ্ছেদ বিল খোয়াবে ইইউ। এ ছাড়া যেসব সদস্য দেশ যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে, তারাও বড় ক্ষতির শিকার হবে। তাই চুক্তিতে পৌঁছানো ইইউর জন্য বেশি জরুরি।
কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আরেক নেতা জেকব রিচ মগ বলেন, নানা আপত্তি থাকলেও বেকস্টপ ধারা পরিবর্তন সাপেক্ষে ব্রেক্সিট চুক্তি সমর্থন করবেন তিনি। আর কোনো কারণে চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ হলে তিনি বেশি খুশি হবেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, বিচ্ছেদবিষয়ক প্রয়োজনীয় আইন পাসের স্বার্থে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ খানিকটা পেছাতে রাজি তাঁরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মে রোববার আবারও বলেছেন, ২৯ মার্চের নির্ধারিত সময়েই বিচ্ছেদ কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে এক ভোটাভুটিতে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ ৯ মাস পিছিয়ে দেওয়ার একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয় ব্রিটিশ সংসদ।
অন্যদিকে নর্দান আয়ারল্যান্ডের আইরিশ জাতীয়তাবাদী দল শিন পেইনের প্রধান ম্যারি লু ম্যাকডোনাল্ড গত রোববার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্রেক্সিটের পর আয়ারল্যান্ড সীমান্তে কেন তল্লাশি চৌকি তারা মেনে নেবেন না। তারা স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ডের একত্র করার (রিইউনিফিকেশন) দাবিতে গণভোট চাইবেন।