ব্রেক্সিট নিয়ে লেবার পার্টি’র নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে ব্রেক্সিট বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার এ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রত্যাখ্যান করেন।
কিয়ের স্টারমার বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা শুধু আমাদের সমাজেরই অংশই নন; বরং তাদের নিয়েই আমাদের সমাজব্যবস্থা। তারা কখনও আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সস্তা বিষয় হতে পারেন না। তাই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি জয়ী হলে বর্তমান সরকারের ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। তারা এদেশে কাজ করারও সুযোগ পাবেন। তবে গোপনে কিছুই করা হবে না। ক্ষমতায় এলে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়েই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা হবে।
আগামী ৮ জুনের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করলো লেবার পার্টি।
এর আগে বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে শর্তসাপেক্ষে ইউরোপীয় নাগরিকদের এ ধরনের সুবিধা প্রদানের কথা বলেছিলেন। তবে লেবার পার্টি’র কর্মপরিকল্পনায় একতরফাভাবে এ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১২ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের বসবাস।
কিয়ের স্টারমার বলেন, লেবার পার্টির সরকার ব্রেক্সিট সংক্রান্ত নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আমরা সরকারের এ সংক্রান্ত শ্বেতপত্র কাটছাঁট করবো। নতুন করে প্রস্তাবিত অগ্রাধিকারগুলো এতে প্রতিস্থাপন করা হবে। আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে সিঙ্গেল মার্কেট এবং কাস্টমস ইউনিয়নের মতো ইস্যুগুলো। এছাড়া গ্রেট ব্রিটিশ রিপিল বিলের বদলে ইইউ রাইটস অ্যান্ড প্রটেকশনস বিল আনা হবে।
এর আগে ১৮ এপ্রিল ২০১৭ মঙ্গলবার লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে যুক্তরাজ্যে আগাম সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। হঠাৎ করেই তার এ ঘোষণায় অবাক হন অনেকেই। কারণ ২০২০ সালে বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়াদপূর্তির এতো আগে নির্বাচনের ডাক দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কী কারণে থেরেসা মে-এর প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত? ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজেও অবশ্য এ সিদ্ধান্তের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়, ব্রেক্সিটের পর ‘জাতি ঐক্যবদ্ধ হলেও পার্লামেন্ট দ্বিধাবিভক্ত’। বিরোধী দল লেবার পার্টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চূড়ান্ত বোঝাপড়ার চুক্তির বিরোধিতার হুমকি দিয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা সরকারকে অচল করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন নির্বাচন না দিলে ‘তাদের রাজনৈতিক খেলা অব্যাহত থাকবে।’
থেরেসা মে বলেন, ব্রেক্সিট–পরবর্তী যুক্তরাজ্যে দরকার নিশ্চয়তা, সেই সঙ্গে স্থায়িত্ব এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব। দেশ পরিচালনার জন্য এটা জরুরি। ব্রেক্সিট ইস্যুতে দেশ এক হলেও পার্লামেন্ট এক হতে পারছে না। পার্লামেন্টের মধ্যকার বিভাজনের কারণ আমাদের সফলভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সক্ষমতা কমে যাবে। এটা দেশকে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার মুখে ঠেলে দিবে। ফলে আমি মনে করি, দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই মুহূর্তে নির্বাচন প্রয়োজন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য মনে করছেন, লেবার পার্টির বর্তমান বেহাল অবস্থার সুযোগ নিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। কারণ সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে লেবার পার্টি। এক জরিপে বলা হয়েছে, ভোটারদের কাছে কনজারভেটিভ পার্টির গ্রহণযোগ্যতা যেখানে ৪২ শতাংশ; সেখানে লেবার পার্টির গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ২৭ শতাংশ।
২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের গণভোটের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরন পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন থেরেসা মে। গত কয়েক মাসে তিনি একাধিকবার আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। ফলে তার এই আকস্মিক ঘোষণা সবাইকে অবাক দেয়। তবে আগাম নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কাজ করবে, এমন একটি সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই নির্বাচন।’ আগাম নির্বাচনের প্রচারণায় আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান জেরেমি করবিন।
থেরেসা মে’র উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে দেখছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে লেবার নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে জয়ী হলে আমিই সরকারকে নেতৃত্ব দিতে চাই। এমন একটি সরকার গঠন করতে চাই যে সরকার দেশের রূপান্তর ঘটাবে, যে সরকার প্রতিটি মানুষকে প্রকৃত আশা দেখাবে। সার্বিকভাবে প্রতিটি মানুষের জন্য ন্যয়বিচার ও অর্থনৈতিক সুযোগের নীতি বাস্তবায়নে কাজ করবে— এমন একটি সরকার আমরা গঠন করতে চাই।’