ব্লু-হোয়েলের থাবা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচল কলেজছাত্র
বাংলা সংলাপ ডেস্ক ঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইমন (১৬)। সে ঢাকার মিরপুর শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনলাইন সুইসাইড গেইম ‘ব্লু হোয়েল’ এ আসক্ত হয়ে পড়ে টগবগে এই কিশোর। এক পর্যায়ে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। কিন্তু পরিবারের সচেতনতায় এ যাত্রায় রক্ষা পেল ইমন।
শনিবার দিনগত রাতে নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নবীনগর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ঘটনাটি জানাজানি হলে নবীনগরে বেশ আলোচনার ঝড় বইছে। ইমনকে দেখতে রোববার সকাল থেকে উৎসুক জনতা থানায় ভিড় জমায়।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মুশফিকুর রহমান ইমন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি এবং ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে ঢাকার মিরপুর শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে ভর্তি হয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মরণ খেলা গেম ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়ে পড়ে এই কিশোর। তারপর থেকেই পড়ালেখায় অমনোযোগী ও উদাসীনতায় পরিবারের সদস্যদের কাছে কিছুটা সন্দেহ হয়। ইমনকে তার মা উদাসীনতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সে আবেগে আপ্লুত হয়ে অবলীলায় ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করবে বলে জানায়।
ইমন তার মাকে বলে- ‘আমি আর বেশিদিন বাঁচব না, আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
কারণ জানতে চাইলে ইমন তার মা-বাবাকে হাত কেটে বিভিন্ন রক্তাক্ত চিহ্ন দেখালে তারা কেঁদে ফেলেন। ইমনের অবস্থার অবনতি দেখে গত শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে তার মা নবীনগর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ইমনকে বিভিন্নভাবে বোঝায়। পরে সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। সে বলে, ‘ব্লু হোয়েলে আক্রান্ত হয়ে নিজেকে আত্মহত্যার পথে ধাবিত করাই ছিল আমার বড় ভুল।’
মুশফিকুর রহমান ইমন বলে, প্রথমে ফেসবুকে ব্লু হোয়েলের প্রচারণা দেখে কৌতূহলবশত আমিও ব্লু হোয়েলে ঢুকি। এভাবে দুই-একদিন দেখতে দেখতে আমি কেমন যেন নিজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তাদের (ব্লু হোয়েলের) দিক-নির্দেশনা মতো ছবি আপলোড ও ম্যাসেজের মাধ্যমে আমি মনের অজান্তেই মৃত্যুর পথে নিজেকে ঠেলে দিই।
সে বলে, সবাইকে আমাকে বোঝানোর পর এখন বুঝতে পেরেছি ব্লু হোয়েল মানেই মরণ খেলা। কেউ যেন আমার মতো আর ব্লু হোয়েলে আসক্ত না হয়।
নবীনগর থানার ওসি মো. আসলাম সিকদার বলেন, ইমন খুবই মেধাবী ছাত্র। সে ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে শনিবার রাতে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তার হাত কেটে ফেলে। পরে তার মা-বাবা খবর দিলে পুলিশ পাঠিয়ে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি।
তিনি বলেন, সবাই মিলে তাকে বোঝানোর পর সে তার ভুল বুঝতে পারে। রোববার দুপুরে ইমনকে তার মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।