ভারতে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ // জাকির নায়েকের বক্তব্যে হামলায় উদ্বুদ্ধ হন জঙ্গিরা

Spread the love

56বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ
জাকির নায়েকবাংলাদেশের গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলার পর ভারতে বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করতে কেবল অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে আরও যেসব অনুমোদনবিহীন টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে, সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। খবর এনডিটিভির
যদিও অনেক আগে থেকেই ভারতে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। তারপরও কিছু কেবল অপারেটর এটি বিশেষ ব্যবস্থায় সম্প্রচার করে আসছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশের গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় হামলার পর ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাকির নায়েকের মালিকানাধীন পিস টিভি ও জাকির নায়েকের ভূমিকা নিয়ে আবারও বিতর্ক ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে, গুলশানে হামলাকারীদের দুজনের ফেসবুক থেকে জানা যায়, তাঁরা জাকির নায়েকের বক্তব্যে জঙ্গি হামলায় উদ্বুদ্ধ হন। এটি জানার পরই জাকির নায়েকের জনসমক্ষে দেওয়া বক্তব্য তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। সর্বশেষ ভারতের উত্তর প্রদেশের মুসলিম নেতারা জাকির নায়েককে ইসলামবিরোধী ও ভারতবিরোধী আখ্যা দিয়ে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
কয়েক দিন ধরেই মুম্বাইয়ে অবস্থিত জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। এর মধ্যেই পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ এল সরকারের তরফ থেকে।
 
জাকির নায়েকের কার্যক্রম ইসলাম ও ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী হওয়ায় ২০০৮ সালে লক্ষ্ণৌ, কানপুর ও এলাহাবাদের রাজ্যসরকার তাঁকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন যুক্তরাজ্য ও কানাডায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় নিষিদ্ধ ১৬ চিন্তাবিদের একজন জাকির নায়েক।
এদিকে জাকির নায়েক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) ও পিস টিভি নিয়ে শুরু হয়েছে বহুমুখী তদন্ত। সন্ত্রাসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসীদের তিনি প্রভাবিত করছেন কি না এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো সন্ত্রাসবাদের প্রসারে সহায়ক কি না, তদন্তকারী দল সে সব খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে আজ শনিবার এ খবর জানা গেছে।
একই সঙ্গে এ কথাও জানা গেছে, পিস টিভি চ্যানেলে তাঁর ইসলামি প্রবচনও তদন্তের আওতায় রয়েছে। পিস টিভির সম্প্রচার গোটা দেশে কীভাবে নিষিদ্ধ করা যায়, ভাবনাচিন্তা চলছে তা নিয়েও। মোট নয়টি তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছে। চারটি দল খতিয়ে দেখছে জাকির নায়েকের দেওয়া বিভিন্ন বক্তৃতার ফুটেজ ও ভিডিও, তিনটি দল দেখছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও দুটি দল তদন্ত করছে নায়েকের ফেসবুক পোস্টগুলো।
এর বাইরে তদন্তের আওতায় রয়েছে তাঁর তৈরি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) আইআরএফের অর্থনৈতিক দিক। বিভিন্ন দেশ থেকে এই সংস্থা যে আর্থিক অনুদান পাচ্ছে তা কীভাবে খরচ করা হচ্ছে কিংবা সেই অর্থে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করা হচ্ছে কি না, তদন্তকারী দল তা-ও খতিয়ে দেখছে। এক কথায় এই প্রথম জাকির নায়েক ও তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের আতশকাচের আওতায় চলে এল।
ভারতের এই সরকারি তৎপরতার পেছনে অবশ্যই রয়েছে পয়লা জুলাইয়ের ঢাকার গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনা। সন্ত্রাসীরা সেখানে ২০ জনকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ভারতীয়সহ বেশির ভাগই ​বিদেশি ছিলেন। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের একজন জানিয়েছিল, জাকির নায়েকের বক্তৃতা তাকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। ওই ঘটনার পরই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। আলোচনায় উঠে আসেন জাকির নায়েক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান।
মহারাষ্ট্র সরকার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনে। ভারতের এই অর্থনৈতিক রাজধানী থেকে চার যুবক সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জেহাদের অংশীদার হতে গিয়েছিল। তাদের একজন দেশে ফিরেছে। জেলবন্দী সেই আরিব মজিদও জেরায় কবুল করেছে জাকির নায়েকের প্রবচন তাদের উৎসাহিত করেছে। এর পরেই শুরু হয় সার্বিক তৎপরতা।
জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত প্রধানত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ইতিমধ্যেই এই সংস্থা এ দেশের ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইরাক অথবা সিরিয়ায় গিয়েছিল আইএসের জেহাদে অংশ নেবে বলে।
বিহারের দ্বারভাঙা জেলার করিমগঞ্জ এলাকার এক পাঠাগার থেকে নায়েকের লেখা বই, বক্তৃতা ও তাঁর বেশ কিছু ছবি সম্প্রতি তদন্তকারীদের হাতে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল ঘটিয়েছেন। নতুন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হয়েছেন ভেঙ্কাইয়া নাইডু। নতুন দায়িত্ব পেয়েই গতকাল শুক্রবার তিনি বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে। আলোচনা হয় প্রধানত পিস টিভি নিয়ে। ২০০৬ সালে এই চ্যানেল চালু হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ২০১২ সালে এই টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও পৃথিবীর অন্তত দু শ দেশে বাংলা, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় এই টিভির অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। বৈঠকের পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু জানান, পিস টিভির বেআইনি সম্প্রচার বন্ধে দেশের বড় বড় কেবল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ কীভাবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে, তা-ও দেখা হবে।
প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধর্ন রাঠোর সংবাদমাধ্যমকে জানান, দেশের রাজ্যে রাজ্যে জেলায় জেলায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেআইনিভাবে যারা লাইসেন্সবিহীন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক মাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতা সরকার করবে না। নায়েকের কিছু ভাষণ আমরা শুনেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ওই সব ভাষণ তদন্তসাপেক্ষ। সে জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
জাকির নায়েক এই মুহূর্তে সৌদি আরবের মক্কায়। সেখান থেকে এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, ঢাকায় নিরীহ মানুষদের মারতে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন, এই অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এমন কোনো ভাষণ তিনি কখনো দেননি যা মুসলমান অথবা অমুসলিম কাউকে খুন করার জন্য প্ররোচিত করে।

Spread the love

Leave a Reply