ভারত থেকে লন্ডনে পালাতে পারে রাগীব আলী

Spread the love

ragibবিশেষ সংবাদদাতাঃ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া কথিত দানবীর রাগীব আলী লন্ডনে পাড়ি জমাতে পারেন বলে জানা গেছে। সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন পরিবারের পলাতক অন্য আসামিদেরও। এছাড়া রাগীব আলীকে পালিয়ে যেতে জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বদরুল হক খসরু সহযোগিতা করেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তার মাধ্যমে বিপুল অংকের বিনিময়ে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করা হয় বলেও শোনা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, খসরুর সঙ্গে রাগীব আলীর সার্বক্ষণিক যোগাযোগও রয়েছে।
জানা গেছে, রাগীব আলী ও তার পরিবারের ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় সরাসরি বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পালানো নিরাপদ নয়। এজন্য ভারতকে তিনি রুট হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর রহস্যজনকভাবে রাগীব আলীর পালানো, ভারতকে রুট হিসেবে ব্যবহার এসব বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। এ বিষয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তৎপরতা গতিহীন।
রাগীব আলীর পালানো নিয়ে সিলেটে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। গুঞ্জন রয়েছে, টাকা ঢেলে পথের কাঁটা সরিয়ে চম্পট দিয়েছেন তিনি। নতুবা বিভাগীয় নগরী সিলেটে এত বেষ্টনী ভেদ করে পালানো সহজ নয়। এমনকি রাগীব আলী পালালেও তার অবৈধ সাম্রাজ্য উচ্ছেদ নিয়েও চলছে নানা গড়িমসি।
এদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের দেয়া গণবিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শনিবার শেষ হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ অবৈধ স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা রয়েছে। কিন্তু তা আর হচ্ছে না বলে জানা গেছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অ্যাকশনে যেতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষেরও তেমন গরজ নেই। সবখানেই গড়িমসি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, সামনেই ১৫ আগস্ট। তাছাড়া কিছু আবেদনও এসেছে। তিনি দাবি করেন, তারাপুর এলাকায় থাকলেও বেশকিছু স্থাপনা ওই তফসিলভুক্ত নয়। এসব চিহ্নিত করা জরুরি। যাতে নিরীহ ও নিরপরাধ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার সন্ধ্যায় এক বৈঠকে বসার কথা জানান তিনি। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র সুজ্ঞান চাকমা বলেন, আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি টের পেয়েই পালিয়েছেন রাগীব আলী। আদালতের পরোয়ানা থানা ও ইমিগ্রেশনে পাঠানোর আগেই তিনি দেশত্যাগ করেছেন।
একটি সূত্র জানায়, ভারতে পালিয়ে যাওয়া রাগীব আলী প্রথমে আসামের শিলচড়ে থাকা পুত্রবধূ সাদিকা জান্নাত চৌধুরীর বাবার বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে ভারতের প্রভাবশালী রাজনীতিক আবদুস সালামের অতিথি হিসেবে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমানো বিশেষ করে লন্ডনে পাড়ি জমাতে পারেন বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
বুধবার আদালতে জামিন নামঞ্জুরের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তড়িঘড়ি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান কথিত দানবীর জালিয়াত রাগীব আলী। একইসঙ্গে পাড়ি জমান তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাই, পুত্রবধূ সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, জামিরুল হক তালুকদার, মো. কামরুল হাসান, সৈয়দ আজমান ও সাইদুল ইসলাম। এর মধ্যে রাগীব আলী ও তার ছেলে গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি।
উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির অভিযোগে ১০ জুলাই আদালতে দুটি চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই। এর মধ্যে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা ১১৭নং মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআইয়ের এসআই দিলীপ কুমার নাথ। তদন্তে জালিয়াতি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেলে ১০ জুলাই চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিট নম্বর ১৩১। এতে রাগীব আলী, সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত, দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, আবদুল হাই, আবদুল কাদির ও রোজিনা কাদিরকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রাগীব আলীর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন মারা যাওয়ায় চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
রাগীব আলীর বিরুদ্ধে অপর মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০০৫ সালের ২ নভেম্বর। সিলেট কোতোয়ালি থানায় করা ওই মামলা নম্বর ১২। পিবিআইয়ের এসআই দেওয়ান আবুল হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর ১০ জুলাই মামলাটির চার্জশিট দাখিল হয়। চার্জশিট নম্বর ১৩২। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে। পৃথক দুটি চার্জশিট সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে দাখিল করা হয়। বুধবার চার্জশিটের শুনানির পর রাগীব আলীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর আগে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি ও তারাপুর চা বাগান থেকে রাগীব আলীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।


Spread the love

Leave a Reply