ভুয়া ফোনকলে ১৮ মিনিট কথোপকথন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃযুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন একটি ভুয়া ফোনকলকে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ফোন ভেবে ১৮ মিনিট ধরে আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। রাশিয়ার দুই প্র্যাঙ্ক ভিডিও নির্মাতা ওই ফোনকল করেছিলেন। বরিস জনসনের সঙ্গে হওয়া কথোপকথনের অডিও তারা প্রকাশ করে দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী মনে করে বরিস জনসন ওই কথোপকথনে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক, ইরানি পারমাণবিক চুক্তি এবং সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তার মতামত দিয়েছেন।.
রাশিয়ার যে দুইজন প্র্যাঙ্কস্টার এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের একজনের নাম অ্যালেক্সি স্টোলিয়ারভ এবং আরেকজন ভ্লাদিমির কুজনেটসভ। তারা যথাক্রমে লেক্সাস ও ভোভান নামে পরিচিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, বরিস জনসনকে বোকা বানাবার আগে তারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো সেজে ফোন দিয়েছিলেন। তাদের প্র্যাঙ্ক কলে বোকা বনেছেন গায়ক এলটন জনও। তাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেজে ফোন দেওয়া হয়েছিল। স্টোলিয়ারভ গার্ডিয়ানের কাছে জানিয়েছেন, জনসনকে ফোন করার আগে তারা ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ স্যার অ্যালান ডানকানকেও ফোন করেছিলেন।
গার্ডিয়ান লিখেছে, ফোন করে আর্মেনিয়ার নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পর বরিস জনসন নতুন দায়িত্বের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান। পুতিনের সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে কিভাবে কথা বলবেন সে বিষয়ে পাশিনিয়ান সেজে ফোন করা রাশিয়ান প্র্যাঙ্কস্টার বরিসের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দেন। তিনি সের্গেই স্ক্রিপালকে নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যা চেষ্টার বিষয়েও বরিসের কাছে মতামত চান। জবাবে জনসনকে বলতে শোনা যায়, ‘পুতিনের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তিকে আমরা চাপের মধ্যে রাখতে থাকব। আপনি তো জানেন কেনসিংটনে ঢিল ছুড়লেই পুতিনের ঘনিষ্ঠ কাউকে না কাউকে পাওয়া যাবে।’ রয়টার্স জানিয়েছে, মধ্য লন্ডনের কেনসিংটনে বিত্তবান রাশিয়ানরা বাস করে।
বরিস আরও বলেছেন, সের্গেই স্ক্রিপালকে রাসায়নিক প্রয়োগে হত্যা চেষ্টায় যে রাশিয়াই জড়িত সে বিষয়ে যুক্তরাজ্য প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। বরিসকে যখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আমি আশা করি পুতিন আমাকে নোভিচক দিয়ে হত্যা করবেন না’, তখন তিনি ওই কথা শুনে হেসে ফেলেন। প্রত্যুত্তরে বরিস বলেন, আর্মেনিয়ার নোভিচক সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে তিনি আর্মেনিয়াতে যাবেন। পরে বরিসকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি পুতিনকে জানাতে চাই, স্নায়ুযুদ্ধ কাম্য নয়। কিন্তু রাশিয়াকে তার আচরণ পাল্টাতে হবে।’
কথোপকথনের একেবারে শেষ দিকে এসে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলটির বিষয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেন। ওই সময় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাজা প্র্যাঙ্কস্টার বরিসকে বলছিল, পুতিন তাকে জানিয়েছেন যে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টিকে রাশিয়া আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। এ কথা শোনার পর কয়েকবার এর ব্যাখ্যা চান বরিস। তারপর ফোন কেটে দেন।
যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, ‘সের্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার চেষ্টা করায় বিশ্ব জুড়ে নিন্দিত রাশিয়ার মুখ রক্ষার জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বরিস দ্রুতই তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন এবং কল কেটে দিয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শক্তি ট্রিগার হ্যাপি টিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানের মতো প্র্যাঙ্ক করার স্তরে নেমে গেছে।’
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্টোলিয়ারভ এবং কুজনেটসভ এর আগে তাদের সঙ্গে ক্রেমলিনের কোনও সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু গার্ডিয়ান মনে করে তারা যেরকম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ফোন করে প্র্যাঙ্ক করে আসছেন তাতে তাদের বিশেষ টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা। অথবা কেউ তাদের হয়ে ফোন কলগুলোকে সম্ভব করে তুলছে। তাছাড়া তারা কথাও বলেন ক্রেমলিনের সুরে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ফোন কলটি পরীক্ষা করেছি এবং সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পেরেছি যে ওটা প্র্যাঙ্ক। যুক্তরাজ্যে রাসায়নিক হামলা, সিরিয়া যুদ্ধ এবং আর্মেনিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরকম বিষয়ে শিশুতোষ আচরণ প্রমাণ করে ওই কলকারী এবং তার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের সিরিয়াসনেসের অভাব আছে।’