ভূমিকম্পে পরিবারের সবাই নিহত, ধ্বংসস্তূপ থেকে সুস্থ নবজাতক উদ্ধার

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ সোমবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধারকারীরা একটি নবজাতক মেয়েকে উদ্ধার করেছে।

এক স্বজন জানান, ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর পরই তার মায়ের প্রসব বেদনা দেখা দেয় এবং মারা যাওয়ার আগে তিনি সন্তান জন্মদান করেন। নবজাতকের বাবা, চার ভাইবোন এবং এক খালাও ভূমিকম্পে নিহত হয়েছে।

নাটকীয় একটি ফুটেজে দেখা যায়, জিন্দারিসের ধ্বংসাবশেষ থেকে টেনে বের করার পর ধুলায় ঢেকে থাকা এক শিশুকে এক ব্যক্তি নিয়ে আসছেন।

আফরিনের কাছে স্থানীয় একটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, সে এখন স্থিতিশীল রয়েছে।

তুরস্ক সীমান্তের কাছে ইদলিব প্রদেশের বিদ্রোহীদের অধ্যূষিত শহর জিন্দারিসের যে ভবনটিতে তার পরিবার বাস করত সেটি ছিল ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়া ৫০টি ভবনের একটি।

শিশুটির চাচা খলিল আল-সুয়াদি বলেন, আত্মীয়রা ধসে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, “আমরা খনন করার সময় একটি আওয়াজ শুনতে পাই।” “আমরা ধুলো পরিষ্কার করি এবং নাভির সাথে থাকা নাড়িতে জড়ানো শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি। পরে আমরা এটি কেটে ফেলি এবং আমার চাচাতো ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হানি মারুফ বলেছেন যে শিশুটিকে তার হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং “তার সমস্ত শরীরে বেশ কিছু আঘাত ও ক্ষত রয়েছে।”

“প্রচন্ড শীতের কারণে তার হাইপোথার্মিয়া হয়েছে। আমাদের তাকে গরম করতে হয়েছে এবং ক্যালসিয়াম দিতে হয়েছিল,” তিনি আরো বলেন।

একটি ছবিতে তাকে ক্যানোলা সংযুক্ত করে ইনকিউবেটরে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। তার মা আফরা, বাবা আবদুল্লাহ এবং তার চার ভাইবোনের জন্য একটি যৌথ শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দামেস্ক-ভিত্তিক সরকার এবং হোয়াইট হেলমেটস এর তথ্য অনুসারে, সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত ১৮০০ জনের মধ্যে তারা রয়েছেন। হোয়াইট হেলমেটস একটি দাতব্য সংস্থা যাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বিদ্রোহী অধ্যূষিত এলাকায় প্রথম উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।

এছাড়া ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্কে আরও ৪৫০০ জন নিহত হয়েছে।

হোয়াইট হেলমেটস এ পর্যন্ত ১০২০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। তবে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে এই সংখ্যা “নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি” হতে পারে।

মঙ্গলবার এক টুইটে তারা বলে, “সময় ফুরিয়ে আসছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত লোক আটকা পড়ে আছে। প্রতি সেকেন্ডের অর্থ হতে পারে একটি জীবন বাঁচানো।”

“আমরা সব মানবিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছে এই দুর্যোগে সাড়া দেওয়া সংস্থাগুলিকে বস্তুগত সহায়তা এবং সহযোগিতা দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। “

জাতিসংঘ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের কাছে যেকোন উপায়ে সাহায্য পৌঁছানোর শপথের কথা জানিয়েছে। তবে সংস্থাটি বলেছে যে, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য পরিবহন সমস্যার কারণে ত্রাণ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

সংস্থাটি সরকারকেও আহ্বান জানিয়েছে যে, তারা যাতে এমন সময়ে ত্রাণ বিতরণকে রাজনীতিকীকরণ না করে যখন বহু মানুষ সাহায্য পাওয়ার আশায় মরিয়া হয়ে আছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্ক থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য শুধু একটি সীমান্ত পারাপার ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্য সব সহায়তা দামেস্ক হয়ে যাওয়ার কথা যদিও অতীতে সরকার অল্প পরিমাণ “আন্তঃসীমান্ত” ত্রাণ পরিবহনের সুবিধা দিয়েছে।

ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেও, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৪১ লাখ মানুষ- যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু- তারা বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।


Spread the love

Leave a Reply